ঢাকা, মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৫
আপডেট : ৩০ মে, ২০১৮ ১৩:১৭

'ঈদযাত্রায় প্রস্তুত নয় সড়ক, রেল ও নৌপথ’

ভোরের বাংলা ডেস্ক
'ঈদযাত্রায় প্রস্তুত নয় সড়ক, রেল ও নৌপথ’

সড়ক-মহাসড়কের বেহাল দশার কারণে এবারের ঈদযাত্রায় ভোগান্তির শঙ্কা। অন্যদিকে দুর্যোগপূর্ণ বর্ষা মৌসুমে ও উত্তাল নৌপথে যাতায়াতের ঝুঁকি, রেলপথে মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন, কোচ ও ঝুঁকিপূর্ণ রেলপথে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে শিডিউল বিপর্যয়ের শঙ্কার মধ্য দিয়ে ঈদযাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে। ঈদযাত্রার বহরে পাঁচ কোটি যাত্রীর ১৫ কোটি ট্রিপ সামাল দিতে সড়ক রেল ও নৌপথ প্রস্তুত নয় বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত ‘ঈদ যাত্রায় দুর্ভোগ : নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সংগঠনের পক্ষ থেকে এমন দাবি করা হয়।

সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিযোগ জানিয়ে মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘ভাঙাচোরা সড়ক, দীর্ঘ যানজট, দুর্ঘটনা, বাসের ট্রিপ-সংখ্যা ঠিক রাখতে বেপরোয়া গতি প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঈদে মহাসড়কে দুর্ভোগে পড়তে হবে ঘরমুখো লাখো যাত্রীকে। নির্মাণে সঠিক মাত্রায় উপকরণ ব্যবহার না করা, সময়মতো সংস্কার না করা, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দেশের ৪০ শতাংশ সড়ক-মহাসড়কের বেহাল দশা। তাই এবারও পথে দুর্ভোগের মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে বের হতে হবে ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের।

এই ঈদে ঢাকা থেকে এক কোটি ১৫ লাখ, দেশব্যাপী এক জেলা থেকে অপর জেলায় যাতায়াত করবে আরও প্রায় ৩ কোটি ৮৫ লাখ যাত্রী। সব মিলিয়ে ৬ দিনে প্রায় ১৫ কোটি ট্রিপ যাত্রী ঈদ যাত্রার বহরে থাকবে। এই বিশাল যাত্রীর চাপ সামাল দেয়ার মতো গণপরিবহন ব্যবস্থা অথবা রাস্তা আমাদের নেই।’

তিনি বলেন, ‘এবারের ঈদযাত্রায় যাত্রী পরিবহনে সড়ক পথে ৪৪ হাজার ৩৭৪টি বাস, ২৭ হাজার ৯৬২ টি মিনিবাস, ৩ লাখ ৩৫ হাজার ৬৬০টি প্রাইভেট কার, ২ লাখ ৪৯ হাজার ৯১টি সিএনজি অটোরিকশা, ৯৮ হাজার ১৭৫টি মাইক্রোবাস, ২১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৫৯টি মোটরসাইকেল, ৫৪ হাজার ৪৩৭টি জিপ, ১৭ হাজার ৫১৬টি হিউম্যান হলার, ২০ হাজার ৪২২টি অটো টেম্পো, ৭৩ লাখ প্যাডেল চালিত রিকশা, ১৫ লাখ ব্যাটারি চালিত রিকশা রয়েছে। নৌপথে ৪ হাজার ২২১টি ছোট-বড় লঞ্চ, ৪২৮টি ট্রলার, ৮২ হাজার নৌকা, ১২ শত স্পিডবোড। রেলপথে পূর্বাঞ্চলে ৪৮টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ৪৪টি আন্তঃনগর ট্রেনের পাশাপাশি ৭ জোড়া ঈদ স্পেশাল ট্রেন, ৭৩ টি লোকাল ও কমিউনিটি ট্রেন আমাদের যাতায়াতের বহরে রয়েছে-যা স্বাভাবিক সময়ে প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় ৩৩ শতাংশ কম।

এইসব সংকটের মধ্য দিয়ে এই বিশাল যাতায়াত বহর সামাল দিতে বাড়তি যা যোগান দেয়া হয়, তা হলো সড়কে ফিটনেসবিহীন লক্কড়-ঝক্কড় কিছু বাস-মিনিবাস মেরামত করে বহরে সংযুক্ত করা, সিটি সার্ভিসের বাস-মিনিবাস দূরপাল্লার বহরে সংযুক্ত করা, প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসের পাশাপাশি পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপে যাত্রী বহন করা। তবে রেলপথে কিছু মেয়াদোত্তীর্ণ বগি মেরামত করে বহরে সংযুক্ত করার পাশাপাশি বেশ কয়েক জোড়া ট্রেন বাড়তি সার্ভিস হিসেবে যুক্ত করা হয়। নৌপথে গত কয়েক বছরে বেশ কটি নতুন যাত্রীবাহী লঞ্চ বহরে সংযুক্ত হলেও তা চাহিদার তুলনায় নগন্য বলে প্রতিবেদনে দাবি করে সংগঠনটি।

সংগঠনের পর্যবেক্ষণ মতে, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের চার লেনে উন্নীতর কাজ চলমান থাকায় প্রায়শ যানজট হচ্ছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে প্রায় সারাবছরই দুর্ভোগ থাকে। বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানে তা অসহনীয় মাত্রায় রূপ নেয়। এই ঈদেও এ ঘাট দিয়ে চলাচলকারীরা যাত্রী সাধারণ দুর্ভোগে পড়বে। বাড়তি মানুষের চাপের কথা মাথায় রেখে কর্তৃপক্ষ প্রতি ঈদেই দুর্ভোগ লাঘবে নানা উদ্যোগ নিলেও তা কাজে আসে না।

এবারও নৌপরিবহনমন্ত্রী সরেজমিন ঘাট পরিদর্শন করে ঈদের সময় অতিরিক্ত যাত্রী সামাল দিতে নানা উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন। তবে যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ফোর লেন মহাসড়কের দুই কিলোমিটার খানাখন্দ সংস্কার, দৌলতদিয়ার চারটি ফেরিঘাট সর্বক্ষণ সচল রাখা ও ঘাটের সংখ্যা আরও বাড়ানো এবং দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে অন্তত ২০-২২টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপারের ব্যবস্থা করা জরুরি।

সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রতি ঈদে ঢাকার প্রবেশ পথগুলোতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এই কারণে দূরপাল্লার বাস ঢাকা ছাড়তেই ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। যাত্রাবাড়ীতে প্রবেশপথ কাঁচপুর মহাসড়ক আট লেনে উন্নীত করা হলেও সুফল মেলেনি। দু'পাশের দুই লেন চলে গেছে পার্কিংয়ে। আর দুই লেনে গাড়ি চলে উল্টো পথে। গাবতলী এলাকায় অবৈধ পার্কিং উচ্ছেদ করা হলেও তা আবার ফিরে এসেছে। টার্মিনালের সামনের রাস্তায় বাস থামিয়ে যত্রতত্র যাত্রী তোলা হচ্ছে। এছাড়াও গাবতলী, মাজাররোড, আশুলিয়া, ইপিজেড, চন্দ্রা, হেমায়েতপুর চৌরাস্তা, বলিয়াপুর, আমিনবাজার, নবীনগর ২০ মাইল, টঙ্গী স্টেশন রোড, গাজীপুর চৌরাস্তা, শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু, মীরের বাজার, উলুখোলা, কাঞ্চন ব্রিজ, ভুলতা, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা, সাইনবোর্ড, চিটাগাং রোড, মদনপুর, কাজলা, ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার চৌরাস্তা, সুলতানা কামাল ব্রিজ, কাঁচপুর ব্রিজ, মধবদী, ভৈরব, দুর্জয় মোড়, পাঁচদোনা, কদমতলী চৌরাস্তা, ইকুরিয়া পোস্তাগোলা ব্রিজ, বাবুবাজার, তাতী বাজার, সদরঘাট গুলিস্থান সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্স প্রভৃতি এলাকায় নিয়মিত যানজট হচ্ছে। ঈদে যানজট আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

রেল পথে ৬৮.৩৫ শতাংশ ইঞ্জিন, ৪৬.১৪ শতাংশ কোচ মেয়াদোত্তীর্ণ। এছাড়াও ৮০ শতাংশ ট্রেনে স্বাভাবিক সময়ে কোচ ও আসন সংকটে যাত্রীরা হ্যান্ডেল ঝুলে বা ছাদে ভ্রমণে বাধ্য হন। তার মধ্যে ঈদের এক সপ্তাহে ৩ থেকে ৫ গুণ বাড়তি যাত্রী যাতায়াত করলেও কার্যত বাড়তি কোনো ব্যবস্থা নেই।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘উপরে উল্লেখিত বক্তব্যসমূহ আমরা বিগত বেশ কয়েকটি ঈদে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে আমরা তুলে ধরেছি। সরকার আমাদের বক্তব্য ও দাবিসমূহ যথাযথ গুরুত্ব না দেয়ায় বর্তমানে এই সমস্যা আরও বেড়েছে। অথচ প্রতি বছরই সড়ক যোগাযোগ সেক্টরে বাজেট বরাদ্ধ বাড়ছে। সেই তুলনায় যাত্রী ভোগান্তি লাগবের সুফল মিলছেনা। ‘

আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্রাক কভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি রুস্তম আলী, ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটির (ডিটিসিএ) সাবেক পরিচালক সালেহ উদ্দিন আহমেদ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক অজয় দাস গুপ্ত প্রমুখ।

উপরে