ঢাকা, মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৫
আপডেট : ২৩ জুলাই, ২০১৮ ২০:২৮

সব মোটা গরুর মাংস ক্ষতিকর নয়!

নিজস্ব প্রতিবেদক
সব মোটা গরুর মাংস ক্ষতিকর নয়!

সব মোটা গরুর মাংস জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়। গরুর হাটে ওঠা গরুগুলো দেখেই চেনা যাবে কোন গরু সুস্থ, আর কোনটা রুগ্ন। এমনটাই জানিয়েছেন প্রাণিস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ৭ লাখ প্রশিক্ষিত খামারি ও ভেটেরিনারি চিকিৎসকদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহায়তায় প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিক উপায়ে গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। কোরবানির উদ্দেশ্যেই প্রশিক্ষিত খামারিরা ৭-৮ মাস আগ থেকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণ শুরু করে।

অধিদপ্তর সূত্র আরও জানায়, প্রশিক্ষত খামারিরা কখনোই জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কোনো ওষুধ খামারে ব্যবহার করেন না। এ সম্পর্কে তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সচেতন করা হয়।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, সারাদেশে ঈদুল আযহায় কুরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা এককোটি ১৬ লাখ। এর মধ্যে গরু-মহিষ ৪৪ লাখ ৫৭ হাজার এবং ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা ৭১ লাখ। গতবছর এ সংখ্যা ছিল এককোটি চারলাখ ২২ হাজার।

কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতালের প্রধান ভেটেরিনারি বিশেষজ্ঞ এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মুখপাত্র ডা. মো. আব্দুল হালিম জানান, ভেটেরিনারিয়ানদের তত্ত্বাবধানে প্রায় ৭ লাখ খামারি রয়েছেন। তাদের খামারে নিষিদ্ধ কোনো ওষুধ ব্যবহৃত হয় না বা তারা ব্যবহারও করছে না। তবে কিছু ফটকা ও লোভী ব্যবসায়ী গোপণে ডেক্সামিথাজন বা বেনিনসোলন (হরমোন) ওষুধ ব্যবহার করে থাকতে পারে। যা গবাদী পশু ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।।

কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতালের সাবেক প্রধান ভেটেরিনারি বিশেষজ্ঞ ডা. এবিএম শহিদ উল্লাহ জানান, বৈজ্ঞানিক ও প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা গরু দেখলেই বোঝা যাবে। এগুলো একটু চঞ্চল, সবল, মসৃণ চামড়া, সমানভাবে মোটা (এবরো-থেবরো ভাবে ফোলা নয়), লেজ ধরে নাড়া দিলে সাড়া দেবে, চোখ স্বচ্ছ থাকবে। অপরদিকে, ডেক্সামিথাজন বা হরমোন ব্যবহারের মাধ্যমে মোটাতাজা করা গরু নিস্তেজ, দুর্বল কিন্তু মোটা, অলস, খাবারে অনীহা, চামড়া অমসৃণ, চোখমুখ দিয়ে লালা ঝরা, পাতলা পায়খানা, গায়ে জ্বর, সর্দি আক্রান্ত এবং শরীরে পানি জমে যাওয়ার কারণে মাংসে চাপ দিলে তা দেবে যাবে।

তিনি আরো বলেন, খামার থেকে অনেক দূর-দূরান্তের হাটে গবাদিপশু পরিবহন করার কারণেও নানা সমস্যা বা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এগুলো স্বল্প চিকিৎসায় ভালো হয়। এসব উপসর্গের মধ্যে সর্দি, হাঁপানো, পাতলা পায়খানা, জ্বর, খাবারে অনীহা, মুখ দিয়ে লালা পড়া, দাঁড়িয়ে থাকতে না পারা অন্যতম।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) ডা. শহিদ উল্লাহ বলেন, প্রতিটি খামারি ও বিশেষ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে গবাদিপশু মোটাতাজাকরণ প্রকল্পগুলোকে উপজেলা কর্মকর্তারা নজরদারি করছে। এছাড়াও প্রতিটি ইউনিয়নে সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি স্থানীয় ২ জন খামারি সরকারের কাছে তালিকাভুক্ত যারা স্থানীয় পর্যায়ে অবৈধ বা নিষিদ্ধ ওষুধ ব্যবহার করতে না পারে সে দিকে নজর রাখছেন।

উপ-পরিচালক আরো বলেন, গতবছরের মতো এবছরও সারাদেশের ২হাজার ৩৬২টি পশুর হাটে মোট ১হাজার ১৯৩টি মেডিক্যালটিম দায়িত্বপালন করবেন।

তিনি আরো জানান, কুরবানির হাটে পশুর প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রতিটি ছোটহাটে অন্তত ১টি, বড়হাটে ২টি করে এবং ঢাকার গাবতলীহাটে ৪টি মেডিক্যালটিম থাকবে। রাজধানীর প্রতিটি টিমে ১জন ভেটেরিনারি সার্জন, ১জন টেকনিক্যাল কর্মী (ভিএফএ/ইউএলএ) এবং ১জন করে শেরেবাংলানগর কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টার্র্নি ভেটেরিনারি সার্জন থাকবেন। সুস্থ সবল, নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যবান গবাদি পশু ক্রয়ে কোনো ক্রেতা সংশয় বা সংকোচ প্রকাশ করলে হাটে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি পশু চিকিৎসকের সহায়তা নিতে পারবেন। এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোরবানির ৩ দিন আগ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, দেশে অপ্রতুল ভেটেরিনারিয়ান দিয়ে সব প্রাণীর স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তার ওপরে স্থানীয় বাজারে ওইসব ওষুধের রয়েছে সহজলভ্যতা। কেউ চাইলেই যে কোনো ওষুধ সংগ্রহ করতে পারেন, কোনো ব্যবস্থাপত্রও লাগে না। ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধ প্রাপ্তির ওপরে নিষেধাজ্ঞা না থাকায় যে কেউ ইচ্ছা করলেই গবাদি বা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ওষুধ সংগ্রহ ও ব্যবহার করতে পারছেন।

উপরে