কালের বর্ষায় নাকাল জনজীবন
শ্রাবণ মাসের শুরুতেই দাবদাহ ছিলো গ্রীষ্মের মতো। টানা কয়েক দিনের গরমের পর বর্ষার চিরায়ত বৃষ্টি নামলেও অস্বস্তি কমেনি রাজধানীবাসীর। মঙ্গলবার ভোর থেকে টানা বর্ষণে জলাবদ্ধতা আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যানজটে নাকাল নগরবাসী। এমন টানা বৃষ্টি আরো চার পাঁচ দিন অব্যাহত থাকবে বলে জানাচ্ছে আবহাওয়া অফিস। ফলে গরমের থেকে নিস্তার মিললেও নগরবাসীকে জলাবদ্ধতার ভোগান্তিও পোহাতে হবে এ কদিন।
সকাল থেকেই রাজধানীতে শুরু হয় বর্ষণ। কখনো ভারী আবার কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হচ্ছে অবিরাম। এরইমধ্যে রাজধানীর মিরপুর, কালশী, ফার্মগেইট, কারওয়ানবাজার, হাইকোর্ট এলাকা, শান্তিনগর, ধানমন্ডি, আজিমপুর, বাড্ডাসহ বেশ কিছু এলাকা তলিয়ে গেছে হাঁটু পানিতে। এতে স্বাভাবিক চলাচলে বিপাকে পড়েছে রাজধানীবাসী। বিশেষ করে এসব পথে চলাচলকারী স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থী ও অফিসগামী সাধারণ মানুষকে ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
টানা বৃষ্টি আর এর ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে রাজপথেও সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। এতে করে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে বহুগুনে। অনেককে দেখা গেছে বৃষ্টিতে ভিজে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছানোর যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে। আবার কেউ কেউ কাঙ্ক্ষিত যান না পেয়ে বৃষ্টিতে ভিজে পায়ে হেঁটে চলেছেন গন্তব্যে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জলাবদ্ধতায় ভোগান্তির শিকার অনেকেই লাইভে নিজ নিজ এলাকার ভিডিও পোস্ট করছেন। পোস্টের সঙ্গে তুলে ধরছেন তাদের ভোগান্তির বয়ানও। চলচ্চিত্রকর্মী হাসিবুর রেজা কল্লোল জলপ্লাবী একটি সড়কের ভিডিও পোস্ট করে লিখেছেন- ‘নদীর নাম ধানমন্ডি ২৭’। পোস্টে নানাজন নানারকম মন্তব্য করে নিজেদের ভোগান্তি কথা লিখেছেন।
আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন জানাচ্ছেন, মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় থাকায় সারাদেশে আরও চার খেকে পাঁচ দিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময় চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পাহাড়ী এলাকায় ভুমিধ্বসের আশংকা রয়েছে।
তিনি জানান, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দম্কা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোকে ১নম্বর সতর্কতা দেখাতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, রাজশাহী, রংপুর, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, যশোর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘন্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো বা দমকা হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
মঙ্গলবার সকাল ৯ টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘন্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দম্কা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
এছাড়া সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সকাল ৬টায় ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ। ঢাকায় মঙ্গলবার সূর্যাস্ত সন্ধ্যা ৬টা ৪৬ মিনিটে এবং বুধবার ঢাকায় সূর্যোদয় ভোর ৫টা ২৫ মিনিটে।
