ঢাকা, মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৫
আপডেট : ২৭ জুলাই, ২০১৮ ১৫:২৬

মালিকদের ‘তামাশা’ প্রত্যাখ্যান, মজুরি ১৬ হাজার করার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
মালিকদের ‘তামাশা’ প্রত্যাখ্যান, মজুরি ১৬ হাজার করার দাবি

পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ছয় হাজার ৩৫০ টাকা করতে শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রস্তাবকে ‘তামাশা’ বলেছেন এই খাতের শ্রমিকদের দুটি সংগঠন। তারা ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়েছে।

শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে এই দাবি তোলে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন ও একতা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন নামের দুটি সংগঠন।

এ সময় শ্রমিক নেতারা নিম্নতম মজুরি বোর্ডে শ্রমিক প্রতিনিধির ১২ হাজার টাকা মজুরি প্রস্তাব তোলারও সমালোচনা করেন। এই খাতের শ্রমিকদের বিক্ষুব্ধ করে তোলার অপচেষ্টা হচ্ছে বলেও সতর্ক করেছেন তারা।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি পোশাক শ্রমিকদের নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণার জন্য নিম্নতম মজুরি বোর্ডকে দায়িত্ব দেয়া হয়। মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধি এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে আগামী ১৮ আগস্টের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দেয়ার কথা।

নতুন মজুরি কাঠামো আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে চালুর বাধ্যবাধকতা আছে। ২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় সবশেষ মজুরি কাঠামো, যেখানে সর্বনিম্ন মজুরি পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা ঘোষণা করা হয়েছে।

এর মধ্যে বোর্ডের শ্রমিক প্রতিনিধি ১২ হাজার ২০ টাকা সর্বনিম্ন বেতন ধরার প্রস্তাব করেছে। কিন্তু গত ১৬ জুলাই বিজিএমইএর পক্ষ থেকে নূন্যতম মজুরি ২০ শতাংশেরও মতো বাড়িয়ে ছয় হাজার ৩৫০ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়।

শ্রমিকদের পাশাপাশি এই প্রস্তাবের সমালোচনা করেছেন বিআইডিএস এর সিনিয়র রিসার্স ফেলো নাজনীন আহমেদও। তিনি বলেছেন, ‘সবশেষ মজুরি কাঠামো ঘোষণার সময় ৫ হাজার ৩০০ টাকায় যে পণ্য পাওয়া যেত, এখন তা কিনতে ছয় হাজার ৭০০ টাকা লাগে। তাই বেতন বাড়াতে হলে এর চেয়ে বেশি বাড়াতে হবে।’ সর্বনিম্ন বেতন নয় হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছেন এই গবেষক।

অবশ্য এরই মধ্যে সরকার শিল্প শ্রমিকদের বেতন বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার ঘোষণা দিয়েছে, সেটাও একটি মান ধরা যেতে পারে। গত ২ জুলাই মন্ত্রিপরিষদে নেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাষ্ট্রায়াত্ব শিল্প কারখানার শ্রমিকদের মজুরি ন্যূনতম আট হাজার ৩০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১১ হাজার ২০০ টাকা ধরা হয়েছে। আগের কাঠামোর চেয়ে বেতন বেশি ধরা হয়েছে শতভাগ।

পোশাক শ্রমিকদের কর্মসূচিতে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন বলেন, ‘পাঁচ বছর আগের সপ্তম গ্রেডের পাঁচ হাজার ৩০০ টাকার সাথে পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধিসহ যেখানে বর্তমানে মজুরি হয় ছয় হাজার ৪০০ টাকারও বেশি। সেখানে মালিকপক্ষ প্রস্তাব দিয়েছে ছয় হাজার ৩৬০ টাকা, যা মজুরি কমানোর সামিল।’

শ্রমিক প্রতিনিধির প্রস্তাব করা ১২ হাজার ২০ টাকা যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং অনৈতিক আখ্যা দেন আমিরুল হক আমিন।

হিসেবে পোশাক খাতের শ্রমিক নন এমন একজনকে বোর্ডে শ্রমিক প্রতিনিধি নিয়োগের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন এই শ্রমিক নেতা।

কর্মসূচিতে অন্যান্য বক্তারা বলেন, দেশের বড় অর্থনীতির মূল চাবিকাঠি এবং সবচেয়ে লাভজনক খাতে শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে ‘তামাশা’ মেনে নেয়া হবে না। শ্রমিক ঠকালে মালিকদেরও দীর্ঘমেয়াদে কোনো লাভ হবে না-সেটিও স্মরণ করিয়ে দেন তারা।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন, একতা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান, মো. রফিকুল ইসলাম, কবির হোসেন প্রমুখ।

উপরে