ঢাকা, মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৫
আপডেট : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১৩:০৫

চসিক নির্বাচনে বিদ্রোহীদের নিয়ে নমনীয় আওয়ামী লীগ

অনলাইন ডেস্ক
চসিক নির্বাচনে বিদ্রোহীদের নিয়ে নমনীয় আওয়ামী লীগ

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে ‘বিদ্রোহী প্রার্থীদের’ বিষয়ে শুরুতে কঠোর মনোভাব দেখালেও পরে সেই অবস্থান থেকে সরে গিয়ে নমনীয় আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা ও স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের দফায় দফায় নানা হুঙ্কার, নিষেধ-অনুরোধেও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরানো যায়নি। দল ও দলীয় সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করা এসব বিদ্রোহীর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির কথা বলেছিলেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে গতকাল পর্যন্ত বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

চসিক নির্বাচনে ৪১ ওয়ার্ডের সবগুলো কাউন্সিলর পদেই জয় ঘরে তুলে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে দল সমর্থিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটে জিতেছেন এক নারীসহ ৮ কাউন্সিলর। এবারের চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ নিয়েই ছিল যত উত্তাপ। নির্বাচনে ৩টি প্রাণহানিসহ সংঘাত-সহিংসতার সবগুলোর পিছনেই ছিল কাউন্সিলর পদে দলীয় ও বিদ্রোহীদের দ্বন্দ্ব। নেতাদের নানা হুঁশিয়ারির পরও একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়ে যান ৩৪টি ওয়ার্ডে। নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর অনুসারীদের মধ্যে সংঘাত হয়। ভোটের আগে ২০ জানুয়ারি নগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলটির যুগ্ম সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) মাহবুব-উল-আলম হানিফ সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে লিখিত সুপারিশ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে পাঠানো হয়েছে।

ভোটের মাঠে ৮ জন ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ দলীয় বাধার মুখেও বিজয়ী হওয়ার পর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও এখন তাদের ব্যাপারে অনেকটাই নমনীয়। যদিও এসব বিদ্রোহীরা বলছেন, মূলত দলকে নয় তারা চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে চাওয়া ব্যক্তিদের। কয়েকজন নেতার দিকে আঙুল তুলে তারা অভিযোগ করছেন, এই নেতারা নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থে চট্টগ্রাম মহানগরের এলাকায় এলাকায় আওয়ামী লীগকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন, যা দলকেই দুর্বল করার অপচেষ্টা মাত্র।

নগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, দলের সিদ্ধান্ত অমান্যকারী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশপত্র কেন্দ্রীয় সংসদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে নির্বাচনের আগেই। তাই এখন যা করার তা কেন্দ্রীয় সংসদই করবে। চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর প্রধান এজেন্ট ও নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন বাবুল বলেন, দলের সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেবে তা কেন্দ্রীয় সংসদই জানে। আমি মনে করি, যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তাদের অবশ্যই সাংগঠনিক শাস্তির আওতায় আনা উচিত। তারা শাস্তির আওতার বাইরে থাকলে ভবিষ্যতে দলে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব হবে না। একটি সুশৃঙ্খল দল পরিচালনার জন্য অবশ্যই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

অন্যদিকে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চসিক নির্বাচন পরিচালনার প্রধান ব্যক্তি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি বলেন, দল করতে হলে দলীয় সিদ্ধান্ত মানতে হবে। দল থেকে একজনকে সমর্থন দেয়া হলো, আরেকজন তা অমান্য করে, যেমন করেই হোক, জিতে গেল। তাই বলে তাকে ছাড় দেয়া যাবে না। তারা মূলত পার্টি প্রধানের সিদ্ধান্তকে অমান্য করেছে। তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক আহমদ হোসেন বলেন, চসিক নির্বাচনে বিদ্রোহীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত কী হবে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক পর্যন্ত। তবে করোনার পরিস্থিতির কারণে আমাদের দলীয় বৈঠক হচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে যখন দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক হবে তখনই বিদ্রোহীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।

এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় সমর্থন বঞ্চিত ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব বলেন, এবারই প্রথম কাউন্সিলর পদে দলীয় সমর্থন দেয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো জনগণের স্বার্থের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। এগুলোর বিষয়ে একেবারে স্থানীয় পর্যায় থেকেই মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। তা না করে কাউকে বানিয়ে দিলাম কিংবা নাম দিয়ে দিলাম- এসব মানসিকতার লোকদের বিষয়ে দলের ভাবা উচিত। এলাকায় এলাকায় আওয়ামী লীগকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়া ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বিষয়ে গভীরভাবে ভাববার জন্য দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, শুধু ব্যক্তিস্বার্থে প্রত্যেকটা এলাকায় ২ গ্রুপ করে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে ষড়যন্ত্রকারীরা। এর মাধ্যমে তারা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে।

৯ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত বিদ্রোহী কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ নয়। কাউন্সিলর পদে দলীয় সমর্থন দেয়া নিয়ে কিছু ব্যক্তির ভুল সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সেটাকে দেখিয়ে দিতে চেষ্টা করেছি। এক্ষেত্রে আমি সফল হয়েছি। আমরা দলীয় হাইকমান্ডকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে, সিলেকশনটা স্বচ্ছভাবে হয়নি। আর ভোটের পর দেখা গেল আমাদের কথাই সত্যি। দলীয় সমর্থন বঞ্চিত ২ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর সাহেদ ইকবাল বাবু বলেন, দলকে শক্তিশালী করার স্বার্থে আমরা ব্যক্তিবিশেষের ষড়যন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলাম। আমি যেখান যেখানে নিজের জন্য ভোট চাইতে গিয়েছি, সেখানেই আমরা নিজের প্রতীকের আগে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়েছি।

উপরে