ঢাকা, সোমবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৫
আপডেট : ১৪ অক্টোবর, ২০২৫ ২৩:৫৫

নিখোঁজদের জন্য স্বজনের উৎকণ্ঠা-কান্না

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিখোঁজদের জন্য স্বজনের উৎকণ্ঠা-কান্না
মিরপুরে পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে বিলাপ করছেন অনেকে।

রাজধানীর রূপনগরের শিয়ালবাড়ি এলাকায় আগুন লাগা রাসায়নিক কারখানা থেকে এখনও ধোঁয়া বের হচ্ছে। তবে পোশাক কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। চারতলা ভবনের ওই পোশাক কারখানা থেকে এ পর্যন্ত ১৬ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আগুন পুরোপুরি নেভাতে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট। ঘটনাস্থলে কাজ করছে সেনাবাহিনী ও বিজিবি। এরই মাঝে নিখোঁজদের জন্য কান্না করছেন অনেকে, কেউ কেউ দাঁড়িয়ে রয়েছেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে।

আগুন লাগা চারতলা ভবনটিতে আর এন ফ্যাশন। পাশেই শাহ আলমের রাসায়নিকের গুদাম। সকাল ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে এখানে আগুন লাগে। তবে পোশাক কারখানা নাকি রাসায়নিক গুদামে আগুনের সূত্রপাত হয় তা জানা যায়নি। পোশাক কারখানায় ২৫০ থেকে ৩০০ লোক কাজ করেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। 

নিখোঁজ অনেকের সন্ধান পেতে ছবি নিয়ে ঘটনাস্থলে এসেছেন স্বজনরা। তাদের কান্না আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ। তাদেরই একজন রেশমা আক্তার। সমকালকে তিনি বলেন, 'আসমাকে খুঁজে পাচ্ছি না, এই কারখানাতেই ও কাজ করে।' রেশমা জানান, আসমা আক্তার তাঁর ছেলের শ্যালিকা। ১০ নম্বর শিয়ালবাড়িতে একসঙ্গে থাকেন। আগুন লাগার পর থেকে আসমার খোঁজ মিলছে না।  

 

স্বামী নজরুল ইসলামের খোঁজে এসেছেন নাসিমা আক্তার। তিনি জানান, ১২ বছর ধরে তাঁর স্বামী এই গার্মেন্টস কারখানায় অপারেটর হিসেবে কাজ করেন। আগুন লাগার খবর পেয়ে কল দিলে শুধু 'আগুন আগুন ' বলে ফোন রেখে দেন। তার পর থেকে স্বামীর ফোন বন্ধ পাচ্ছেন। তারা ৬ নম্বর শিয়ালবাড়ি এলাকায় থাকেন।

নারগিস আক্তারের খোঁজে আসেন তার বড় বোন লাইজু বেগম। তিনি বলেন, 'আমার বোন সকাল পৌনে আটটায় কাজে আসে। সকাল ১১টায় খবর পাই আগুন লেগেছে। সেখানের একজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানতে পারি কেউ ভেতর থেকে বের হতে পারেনি। এরপর থেকে আর কোনো খোঁজ পাইনি।' 


ভাগ্নি সুলতানা ও তার স্বামী জয়ার ছবি হাতে এসেছন ইয়াসিন। তিনি বলেন, 'আমার ভাগনি ও ভাগ্নি জামাই তিনদিন আগে কাজে ঢুকেছে। সকালে দুজন একসঙ্গে কাজে আসে। আগুন লাগার পর ফোন দিয়ে জানায় ভেতরে আটকে গেছে। আর কোনো খোঁজ পাচ্ছি না।' 

নিখোঁজ মাহিরার মামা ‎শফিকুল ইসলাম বলেন, 'আমার ভাগ্নি গার্মেন্টসের তিন তলায় কাজ করে। তাকে খুঁজে পাচ্ছি না। আগুন লাগার পর থেকে আমরা খুঁজছি। আশেপাশের হাসপাতালেও খোঁজ নিয়েছি, কোথাও পাইনি।'

এর আগে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ওই পোশাক কারখানা ও পাশের রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগে। বিকেলে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘তল্লাশি এখনো চলমান। পাশের যে কেমিক্যাল গোডাউন রয়েছে, সেখানে এখনও আগুন জ্বলছে। এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ওখানে কাউকে যেতে দিচ্ছি না। আমরা সর্বোচ্চ প্রযুক্তি দিয়ে, ড্রোন দিয়ে কার্যক্রম করছি।’

 

তিনি জানান, পানি ছিটিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা চলছে। কোথা থেকে আগুনের সূত্রপাত তা এখনো জানা যায়নি। 

আগুনে নেভানোর চেষ্টার মধ্যে বিকেল সোয়া চারটার দিকে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম ৯ মরদেহ উদ্ধারের কথা জানান। এরপর সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিস থেকে জানানো হয়, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৬ হয়েছে। 

উপরে