চার পরিত্যক্ত ভবনে ১৭ বছর ধরে ঝুঁকি নিয়ে কার্যক্রম
দীর্ঘ দেড়শ বছরের পুরোনো পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের চারটি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এগুলো হলো– পুরোনো প্রশাসনিক ভবন, কিং এডওয়ার্ড ভবন, পুরোনো বহির্বিভাগ ভবন এবং মিনিয়ালস কোয়ার্টার। গণপূর্ত অধিদপ্তর ২০০৯ সালে এই চারটি ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণার সুপারিশ করে। কারণ ভূমিকম্প বা বড় ধরনের দুর্যোগ হলে ভবনগুলো ধসে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় ভবনগুলোতে থাকা হাসপাতালের কর্মচারীদের সরিয়ে নিতে এবং চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধে বহুবার নির্দেশ দেওয়া হলেও কেউই তা মানেননি। ফলে ১৭ বছর ধরে ঝুঁকি নিয়েই চলছে রাজধানীর অন্যতম প্রাচীন এই হাসপাতালের চারটি ভবন।
হাসপাতালের দোতলা পুরোনো প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় চলে প্রশাসনিক কাজকর্ম, দোতলায় পরিবার নিয়ে থাকেন কর্মচারীরা। কিং অ্যাডওয়ার্ড ভবনের পুরোটাই ব্যবহৃত হচ্ছে চিকিৎসার কাজে। এ ভবনে মেডিসিন বিভাগের আট রুম ছাড়াও আছে রোগীদের ওয়ার্ড। পুরোনো বহির্বিভাগ ভবনে ৪১ ও মিনিয়ালস কোয়ার্টারে ৩৭ কর্মচারী পরিবারসহ থাকেন। প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় থাকেন আরও ৩০ কর্মচারী। সব মিলিয়ে তিনটি ভবনে ১১৩টি পরিবারের বসবাস।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পুরোনো প্রশাসনিক ভবন, কিং অ্যাডওয়ার্ড ভবন, পুরোনো বহির্বিভাগ ভবন এবং মিনিয়ালস কোয়ার্টার ভবনের কোনোটি সুরক্ষিত নয়। পিডব্লিউডি ভবনগুলোর সামনে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ লেখা ব্যানার টাঙিয়ে দিয়েছে। হাসপাতালের উপপরিচালকের দপ্তর থেকেও বারবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে, কর্মচারীরা যেন পরিবার নিয়ে অন্যত্র সরে যান। কিন্তু কেউ ভবন ছাড়েননি। কর্মচারীদের আবাসনের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি।
হাসপাতালের মেডিসিন ভবনটি তিন নম্বর ভবন নামে পরিচিত। প্রতিদিন এখানে চিকিৎসা নেন ২৫০ থেকে ৩০০ রোগী। রোগীর স্বজন, চিকিৎসক, নার্সসহ প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার মানুষ এই ভবনে অবস্থান করেন। ভবনটির ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। পাশাপাশি ভবনটিতে রয়েছে ব্লাডব্যাংক, লিভার বিভাগ, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি, এন্ডোক্রিনোলজি ও ডায়াবেটিস বিভাগ– যেখানে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন।
পিডব্লিউডির নির্বাহী প্রকৌশলী তারেকুল ইসলাম বলেন, ‘মিডফোর্ডের ভবনগুলো এত পুরোনো যে, ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ছাদগুলো ভয়ংকর অবস্থায় আছে। যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ বিষয়টি বহুবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
৯০০ শয্যার এই হাসপাতলে প্রতিদিন ভর্তি থাকেন গড়ে এক হাজার ২০০ রোগী। ওয়ার্ডে জায়গা না থাকায় অনেকে থাকেন মেঝে, করিডোর ও বারান্দায়। এর মধ্যে যদি ভূমিকম্পের মতো কোনো দুর্যোগ হয়, তাহলে তা সামাল দেওয়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষে প্রায় অসম্ভব বলে মনে করেন চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মফিজ মোল্লাহ বলেন, মেডিসিন ভবনে (কিং অ্যাডওয়ার্ড ভবন) শত শত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের অন্যত্র নেওয়ার মতো জায়গা নেই। কর্মচারীদের জন্যও কোনো বিকল্প আবাসন নেই। তবু ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ছাড়ার জন্য চূড়ান্ত নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ৫ নম্বর ভবন ও স্টাফ সার্ভেন্ট কোয়ার্টার ভেঙে সেখানে ১৬ তলা নতুন ভবন নির্মাণের অনুমোদন হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে।
