সীমান্ত ইস্যুতে চীন-ভারত সংঘাতের মধ্যেই যুদ্ধের আতঙ্ক ছড়িয়েছে কাশ্মীর সরকারের একটি বিজ্ঞপ্তি।
ওই রাজ্যের বড় বড় কোম্পানিগুলিকে আগামী দুই মাসের জন্য এলপিজি স্টক করে রাখার নির্দেশ দিয়েছে কাশ্মীরের রাজ্য সরকার।
সাধারণত শীতকালে কাশ্মীর ও লাদাখে এ ধরনের বিজ্ঞপ্তি জারি করে সরকার। বরফ পড়ে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শীতের শুরুতেই কোম্পানিগুলোকে গ্যাস মজুদ রাখার জন্য এ ধরনের বিজ্ঞপ্তি জারি করে থাকে রাজ্য সরকার। কিন্তু গরম কালে এই বিজ্ঞপ্তি জারি করায় এ নিয়ে লোকজনের মধ্যে সন্দেহ দানা বেঁধেছে।
প্রশুধু তাই নয়, লাদাখ সীমানার দিকে কাশ্মীরের একটি জেলায় আরও একটি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। ওই অঞ্চলের প্রতিটি সরকারি স্কুলকে অনুরোধ করা হয়েছে, ভারতীয় জওয়ানদের থাকার জন্য তারা যেন স্কুল বাড়িগুলি ছেড়ে দেয়।
ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জম্মু এবং কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ।
সরকার অবশ্য বলছে, এসব বিজ্ঞপ্তি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। জম্মু-শ্রীনগর হাইওয়ের ওপর বার বার ধস নামার কারণেই এলপিজি স্টক করার কথা বলা হয়েছে। আর সেনা বাহিনীর জন্য স্কুল বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার প্রসঙ্গে সরকারের দাবি, অমরনাথ যাত্রার জন্য এই বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে।
ভারতে করোনা মহামারির কারণে এ বছর প্রায় সমস্ত ধর্মীয় অনুষ্ঠানই বন্ধ রয়েছে। অমরনাথ যাত্রা নিয়েও এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার। তাছাড়া করোনা মৌসুমে অমরনাথ যাত্রা হলেও সেটার আকারে যে খুব বেশি বড় হবে না, তা নিশ্চিত। ফলে প্রতি বছর এই যাত্রার জন্য যে অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হয় এ বছর তার প্রয়োজন হচ্ছে না। তাই অমরনাথ যাত্রার অজুহাতের কথাটি অনেকেই আদতে বিশ্বাস করতে চাইছেন না অনেকেই। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কাশ্মীরে এত বিপুল সংখ্যক সেনা কেন মোতায়েন করা হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ভারত-চীন সীমান্ত সংঘাতের জন্যই কাশ্মীর উপত্যকায় এই বিজ্ঞপ্তিগুলি জারি করেছে সরকার। যদিও ভারত ও চীনের মধ্যে সমঝোতা স্থাপনে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এখনও চলছে। কূটনৈতিক ক্ষেত্রে যেমন একের পর এক বৈঠক হচ্ছে, তেমন দুই দেশের সেনা বাহিনীও একের পর বৈঠক করছে। সেনা বাহিনী সূত্রে জানা যাচ্ছে, বৈঠকে দুইটি শব্দ অত্যন্ত গুরুত্ব পাচ্ছে। এক, ক্ল্যাশ বা সংঘর্ষ এবং দুই, ফাইট বা যুদ্ধ।
সূত্র জানাচ্ছে, সপ্তাহখানেক আগে ভারত এবং চীন দুই পক্ষই একটি সমঝোতায় এসেছিল। ঠিক হয়েছিল সংঘাত এড়িয়ে এখন দুইপক্ষই সীমান্ত থেকে সেনা সরিয়ে নেবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি।
ভারতের দাবি, শুধু গালওয়ান নয়, প্যাংগং থেকেও কাঠামো সরিয়ে পিছোতে হবে চীনের সেনাকে।
সাম্প্রতিক বেশ কিছু স্যাটেলাইট ইমেজ থেকে দেখা গেছে যে, চীন গত কয়েক দিনে সীমান্তের বিতর্কিত এলাকায় বেশ কিছু নতুন কাঠামো তৈরি করেছে। তাই প্রতিবেশী এই বৃহৎ দুটি দেশের মধ্যে অচিরেই যে শান্তি আসছে না তা অনেকটাই নিশ্চিত। এ অবস্থায় কাশ্মীরের ওই বিজ্ঞপ্তিগুলো চীন ও ভারতের মধ্যে সম্ভাব্য যুদ্ধের আশঙ্কাই কেবল বাড়িয়ে তুলেছে।
সূত্র: ডয়েচেভেলে