দখল ও দূষণের ফলে ধামরাইয়ের গাজী খালি নদী এখন প্রায় মৃত হয়ে পড়েছে। নদী খননের ফলে ধামরাই ও সাটুরিয়া উপজেলার বিস্তৃর্ণ অঞ্চলের কৃষি জমির উর্বরতা ও জমিতে সেচ সুবিধা পাচ্ছে না কৃষক ।
নদীটি ভালো করে খনন করা হলে নতুনভাবে বোরো ও আমনসহ অন্যান্য ফসলের জমি উৎপাদনের আওতায় আসবে বলে আশা করছেন কৃষকরা। এছাড়া জেলেরা মুক্ত জলাশয়ে মাছ চাষ এবং নদী পারের মানুষ আর্সেনিকমুক্ত পানি ব্যবহার করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে খরস্রোতা মৃতপ্রায় গাজী খালি নদী বয়ে চলেছে । দু' পাড়ের মানুষ নদী দখল করে প্রায় মৃত নদীতে পরিনত হয়েছে এই নদী। মাটি দিয়ে ভরতে ভরতে নদী ছোট হয়ে গেছে।
অপরদিকে,বিভিন্ন কল-কারখানার বর্জ মিশ্রিত পানি নদীতে পগে নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে গেছে। বিষাক্ত পানির গন্ধে নদীর পারে বাস করা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া হতে গাজী খালি নদীর উৎপত্তি। এক সময় নদীতে পানি থৈথৈ করত। চলত পালতোলা নৌকা। নদীর স্রোতে ভেসে উঠত শুশুক।এছাড়াও নদী থেকে প্রতিনিয়ত নদী তীরবর্তী এলাকার লোকজন মাছ ধরে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে আবার জীবিকা নির্বাহ করত। এখন সেই সুযোগ নেই। নদীর পানি কারখানার কেমিক্যাল মিশ্রিত পানিতে বিষাক্ত হয়ে গেছে। আবার, দু'পাড়ের মানুষ দখল করে নদীকে ছোট করে ফেলছে।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, বাথুলি কেবিসি কারখানার বর্জ মিশ্রিত পানি নদীতে পড়ে নদীর পানি ব্যবহার করা আর সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও শ্রীরামপুর এলাকার রেডিশন কারখানার পানিতে নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। পানিতে গোসল করলে সঙ্গে সাথেই শরীরে ফুসকা পড়ে।গরু- ছাগল গোসল করানো যায় না।
গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের ললিতনগর এলাকার আমজাদ হোসেন বলেন, আগে এই নদীতে নৌকা চলত, মানুষ নদীর পানি ব্যবহার করতো।কিন্তু এখন আর তা করা যায় না।নদীর দ' পাড়ের মানুষ দখল করে নদীকে একেবারে ছোট করে ফেলছে আর কল কারখানার দূষিত পানিতে নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে গেছে। নদীর পানি চলাচল বন্ধ। পানির পচা গন্ধে নদীর পাশে বসবাস করা যায় না।
এখনো এলাকার কিছু বৃদ্ধ লোক জানান, গাজী খালি নদী এখন শুধুই অতীত। কারণ আগে এই নদীর উপর দিয়ে চলে যেতো বড় বড় নৌকা।ধার বেঁধে মাঝিরা নৌকা বয়ে যেতো। নদীতে ছিল নানা রকমের মাছ। নদীর এপার থেকে উপারে সাতার কেটে পারি জমাতাম। তা এখন শুধু স্বপ্ন। বাজনা বাজিয়ে বিয়ের নৌকা যেত নদীর উপর দিয়ে।
বিশাল নদী কল-কারখানার বর্জ ও দূষিত পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। আর নদীর পাড়ের যাদের বাড়ি তারা নদী দখল করে নদীকে একেবারে ছোট করে ফেলেছে। নদীর পানি চলাচল বন্ধ। পানি বিষাক্ত হওয়ায় পানি শরীরে লাগলেই ফোস্কা পড়ে যায়।
নদী খনন করা একান্ত প্রয়োজন। দখল ও দূষণের হাত থেকে মৃতপ্রায় গাজী খালি নদী আবার তার রং রুপ নিয়ে জেগে উঠবে এটাই সাধারণ জনগণের স্বপ্ন।