logo
আপডেট : ২ আগস্ট, ২০১৮ ১১:৩৬
৪০ লাখের নাগরিকত্ব হুমকিতেও নিরুত্তাপ আসাম
প্রথম বাংলাদেশ ডেস্ক

৪০ লাখের নাগরিকত্ব হুমকিতেও নিরুত্তাপ আসাম

ভারতের আসাম রাজ্যের প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়েছে সদ্য প্রকাশিত জাতীয় নাগরিক পঞ্জীর চূড়ান্ত খসড়া থেকে। সারা ভারত এই ইস্যু নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছে। দেশি বিদেশি সংবাদমাধ্যমের এটাই সবথেকে বড় খবর। কিন্তু যে রাজ্যের লাখ লাখ মানুষ নাগরিকত্বহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কায়, সেখানে নেই কোনও প্রতিবাদ।

সাধারণ মানুষ আশা করে আছেন একমাসের সময়সীমার মধ্যে নিজেদের দাবী আবারও পেশ করতে পারবেন। অন্যদিকে বিরোধী দলগুলি যেমন চুপ, তেমনই নেই সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলির বিশেষ কোনও কর্মসূচি।

এরই মধ্যে নাম বাদ যাওয়া হিন্দুদের নাগরিকত্ব দিয়ে দেওয়ার দাবী তুলছে ক্ষমতাসীন বিজেপি। পার্লামেন্টে বিরোধী দলীয় সদস্যরা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠনগুলো প্রতিবাদের রাস্তা নিয়েছে আসামের নাগরিক পঞ্জী থেকে ৪০ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়া নিয়ে।

কিন্তু যেসব মানুষের নিজের অথবা পরিবার পরিজনের নাম নাগরিক পঞ্জীতে খুঁজে পাওয়া যায় নি, তাদের মধ্যে বিশেষ উৎকণ্ঠা চোখে পড়ছে না।

যাদের নিজের অথবা পরিবারের সদস্যদের নাম নেই তালিকায়- বরাক উপত্যকার তিনটি জেলার এমন কয়েকজন বলেন 'হয়তো কোনও ত্রুটির জন্য নাম বাদ পড়েছে। কিন্তু আবারও দাবী পেশ করার সময় তো দিয়েছে। নিশ্চয়ই নাম আসবে।'

অন্য একজন জানান, 'পরিবারের কয়েকজনের নাম নেই ঠিকই। কিন্তু আবারও তো সময় দিয়েছে। নতুন করে ফর্ম ভর্তি করব, সব নথি যখন আছে, নিশ্চয়ই নাম উঠবে।'

আয়রংমারা গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের এনআরসি সেবা কেন্দ্রে নিজের পরিবারের নামগুলো তালিকায় আছে কী না, সেটা যাচাই করতে এসেছিলেন মুন্নি রবিদাস। চারজনের কারও নামই নেই। তিনি জানান, 'সাত তারিখ সময় দিয়েছে। আবার আসব।'

এরা অপেক্ষা করে আছেন ৭ই অগাস্টের জন্য। সেদিন থেকে জানা যাবে নাগরিক পঞ্জীতে নাম বাদ পড়ার কারণ। সেদিন থেকেই আবারও দাবী পেশ করা যাবে, নতুন নথি দিয়ে। এই সরকারি আশ্বাসের ওপরেই ভরসা করে রয়েছেন বহু সাধারণ মানুষ।

বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষা শহর করিমগঞ্জের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা লোপামুদ্রা চৌধুরী বলেন, 'আমি তো এটাই ভেবে পাচ্ছি না যে এত মানুষের নাম বাদ গেল, একটাও প্রতিবাদ নেই! শহরাঞ্চলের আমরা যারা নিজেদের নাম তালিকায় আছে দেখে খুশি হয়েছি, আমরা কেন ভাবছি না যে লক্ষ লক্ষ মানুষের নাম তালিকায় নেই। যাদের নাম বাদ গেল, তারা কেন এগিয়ে এসে দাবী করছে না যে কীসের ভিত্তিতে আমাদের নাম বাদ গেল, সেটা জানানো হোক।'

লোপামুদ্রা চৌধুরীর এমন প্রশ্নের উত্তরে বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক সব্যসাচী রায় বলেন, 'এটা ঠিকই যে নাগরিক পঞ্জী থেকে প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়ার বিষয়টা নিয়ে মানুষের মনে যতটাই ক্ষোভ, আশঙ্কা বা সংশয় থাকুক, তার বহি:প্রকাশটা দেখা যাচ্ছে না। তবে এর আগেও নাগরিক পঞ্জী নিয়ে যেভাবে আমরা গণতান্ত্রিক আন্দোলন করেছি, সেটা চলবেই। হয়তো মানুষ একটু সময় নিচ্ছেন নিজেদের অবস্থানটা স্পষ্ট করে বুঝে নেয়ার জন্য।'

যে বিপুল সংখ্যক মানুষের নাম নাগরিক পঞ্জীর চূড়ান্ত খসড়া থেকে বাদ পড়েছেন, তাদের একটা বড় অংশ বাংলাভাষী মুসলমান বলে ধারণা করা হচ্ছে, যদিও এ নিয়ে সরকারি তথ্য নেই।

আসামের মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার দাবী নিয়ে যে রাজনৈতিক দলটি লড়াই করার দাবী করে থাকে, সেই এ.আই.ইউ.ডি.এফ দলের তরফে করিমগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য রাধেশ্যাম বিশ্বাস বলেন, 'আমরা তো চেয়েইছিলাম যে এনআরসি প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন হোক। এক্ষেত্রে হিন্দু মুসলমান প্রশ্নটা আনা ঠিক হবে না, যদিও কোনও কোনও সংগঠন সেই চেষ্টা চালাচ্ছে যাতে বিভাজন ঘটানো যায়।'

অন্যদিকে এই ইস্যুতে হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টি সামনে তুলে আনছেন রাজ্যে আর কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতারা। আসাম বিধানসভার ডেপুটি স্পীকার ও শিলচর শহরের বিধায়ক দিলীপ পাল জানান, 'আমাদের তো দাবী আছেই, যেসব হিন্দু ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে এদেশে চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন, তাদের নাগরিক সুরক্ষা দিতে হবে। তার জন্যই তো নাগরিকত্ব বিলের সংশোধনী আনার কথা বলছে বিজেপি। এবার আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সেই দাবী আবারও তুলব।'

বরাকে যেমন কোনও প্রতিবাদ চোখে পড়ছে না, সেখানকার মানুষ যেমন ভরসা করে আছেন যে একমাসের সময়সীমার মধ্যে আবারও দাবী পেশ করে নিজেদের নাম তুলবেন তালিকায়, তেমনই ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বাঙালীদের রাজনৈতিক আর সামাজিক সংগঠনগুলিও বলছে যে তারা অপেক্ষা করছে দাবী পেশের সময়ের জন্য।

আপাতত তাই জাতীয় নাগরিক পঞ্জীতে নাম না ওঠা ৪০ লক্ষ মানুষের অপেক্ষা করা ছাড়া গতি নেই। 


প্রকাশক/সম্পাদক: আবুল হারিস রিকাবদার
প্রকাশক ও সম্পাদক কর্তৃক প্রথম বাংলাদেশ/শিবপুর, নরসিংদী থেকে প্রকাশিত
ফোনঃ বার্তা-০১৭০০-০০০০০০, বিজ্ঞাপন-০১৯০০-০০০০০০, ই-মেইলঃ prothombangladeshnews@gmail.com