logo
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর, ২০২০ ২২:২৫
উচ্ছ্বাস ও আশ্বাসের আরও একটি শীর্ষ বৈঠক
অনলাইন ডেস্ক

উচ্ছ্বাস ও আশ্বাসের আরও একটি শীর্ষ বৈঠক

এক দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে বলে একধরনের উচ্ছ্বাস দেখা যায়। সেই সম্পর্ককেই আরও এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার শোনা গেল ১৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত দুই প্রধানমন্ত্রীর ভার্চ্যুয়াল শীর্ষ বৈঠকে। এবারও শীর্ষ সম্মেলনের আলোচনার সারবস্তুর বিবরণ দিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেই জানানো হয়েছে। দিল্লি থেকে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতির ৩৯টি অনুচ্ছেদে যা আছে, তার খুঁটিনাটি নিয়ে বিশদ আলোচনা অবশ্য চোখে পড়েনি। যথারীতি কূটনীতিক ও বিশ্লেষকেরা মহামারিকালের নতুন স্বাভাবিক ব্যবস্থা ভিডিও সংযোগের শীর্ষ বৈঠকেই উচ্ছ্বসিত। প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক সবারই প্রত্যাশিত। আমরা যেহেতু ভালোটা শুনতে ভালোবাসি, তাই সরকারিভাবে ভালোটুকুই শোনানো হয়।

যৌথ বিবৃতির শুরুতেও এই বন্ধুত্বের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা ও অন্যান্য অভিন্ন বৈশিষ্ট্যের অংশীদারত্বের কথাই স্থান পেয়েছে। এরপর যেসব ক্রমানুসারে উল্লেখ করা হয়েছে: স্বাস্থ্য খাতে সৃষ্ট বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, ঐতিহাসিক সম্পর্কের যৌথ উদ্‌যাপনের সাংস্কৃতিক সহযোগিতা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা, প্রবৃদ্ধির জন্য বাণিজ্যের অংশীদারত্ব, সমৃদ্ধির জন্য সংযোগ, পানি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতা, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতদের অবস্থা, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিসরে অংশীদারত্ব এবং দ্বিপক্ষীয় নথিগুলো স্বাক্ষর ও প্রকল্প উদ্বোধন।

বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বের বিশেষ মর্যাদার যে দাবি ভারত করে আসছে, প্রধানমন্ত্রী মোদির দল বিজেপির রাজনৈতিক বক্তব্য ও কার্যক্রমে কিন্তু তার প্রতিফলন মেলে না। নাগরিকত্ব আইনের সংশোধন ও নাগরিকত্বের রেজিস্টার নিয়ে আসামের প্রায় ১৯ লাখ বাংলাভাষী মুসলমানের যে দুর্ভোগ তৈরি হয়েছে, তা কোনোভাবেই উপেক্ষণীয় নয়।স্বাক্ষরিত সাতটি স্মারক হচ্ছে হাইড্রোকার্বন খাতে সহযোগিতা ফ্রেমওয়ার্ক, আন্তসীমান্ত হাতি সংরক্ষণ চুক্তি, স্থানীয় সরকার এবং সরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানে ভারতীয় অনুদানের উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়নবিষয়ক সমঝোতা স্মারক, বরিশাল সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং তার সরঞ্জাম সরবরাহের স্মারক, ভারত-বাংলাদেশ প্রধান নির্বাহীদের ফোরামের শর্তাবলি, ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সঙ্গে দিল্লির জাতীয় জাদুঘরের সমঝোতা স্মারক এবং কৃষি খাতে সহযোগিতার সমঝোতা স্মারক। দ্বিপক্ষীয় প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়েছে দুটি—রাজশাহী নগরের সৌন্দর্য বর্ধিতকরণ প্রকল্প এবং খুলনায় খালিশপুর কলেজিয়েট বালিকা বিদ্যালয়ের নির্মাণকাজ।

যৌথ বিবৃতির শেষে জানানো হয়েছে, ২০২১ সালের মার্চে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্‌যাপনের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণ প্রধানমন্ত্রী মোদি গ্রহণ করেছেন। স্মরণ করা যেতে পারে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মুজিব বর্ষের সূচনায় তাঁর এ বছরেই ঢাকা আসার কথা ছিল, যা মহামারির কারণে শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। ওই সফরের বিরোধিতাও ছিল।

যৌথ বিবৃতিটি নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যাচ্ছে, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনের উদ্‌যাপনই বেশি অগ্রাধিকার ও গুরুত্ব পেয়েছে। উৎসব-আয়োজনে শীর্ষ পর্যায়ের অংশগ্রহণের প্রতীকী মূল্য নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু সাংস্কৃতিক স্পর্শকাতরতা বা রাজনৈতিক বাধা না থাকলে এসব বিষয়ে সমঝোতা সচিব কিংবা মন্ত্রীরাই করতে পারেন। সীমান্ত ব্যবস্থাপনার প্রশ্নে এ বিবৃতিতে অবশ্য নতুন উপাদান আছে। ইছামতী, কালিন্দী, রায়মঙ্গল, হাড়িভাঙ্গা নদীর সীমানা চূড়ান্ত করতে সীমান্ত সম্মেলন করে নতুন মানচিত্র তৈরির বিষয়ে তাঁরা সম্মত হয়েছেন। তবে রাজশাহী জেলায় পদ্মা নদীতে ১ দশমিক ৩ কিলোমিটার দূরত্বে নৌযান চলাচলের নিরাপদ পথ (ইনোসেন্ট প্যাসেজ) দিতে বাংলাদেশ আবারও যে অনুরোধ জানিয়েছে, তা শুধু বিবেচনার আশ্বাস মিলেছে।

 

ত্রিপুরা সীমান্তে বেড়া নির্মাণ আবারও শুরু করার বিষয়ে উভয় নেতাই একমত হয়েছেন। সীমান্তে বেসামরিক নাগরিক হত্যার বিষয়টি যে উদ্বেগজনক, সে বিষয়ে উভয় নেতা একমত পোষণ করে তা শূন্যে নামিয়ে আনতে সীমান্তরক্ষী বাহিনীগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে ওই একই দিনে সীমান্ত হত্যার বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতের পক্ষে যে সাফাই দিয়েছেন, তাতে আশাবাদী হওয়ার আর কোনো অবকাশ থাকে না। শীর্ষ বৈঠকের আগের ২৪ ঘণ্টায় জয়পুরহাট সীমান্তে বাংলাদেশি একজন নাগরিক বিএসএফের গুলিতে নিহত হন।

বাণিজ্যবিষয়ক অংশীদারত্বে নতুনত্ব হচ্ছে কোভিড–১৯ মহামারির সময়েও রেলপথে দুই দেশের পণ্য পরিবহন চালু থাকার মাধ্যমে সহযোগিতার কার্যকরতা প্রমাণিত হওয়া। বিবৃতিতে তাই উভয় দেশের বাণিজ্য ও রেল বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রাপ্য স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যা আছে, তা মূলত বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত সুবিধাগুলোর অনুরোধের পুনরুল্লেখ। সমৃদ্ধির লক্ষ্যে সংযোগে হলদিবাড়ী-চিলাহাটি রেল যোগাযোগ আবারও চালু করার মাধ্যমে প্রাক্‌-১৯৬৫–এর রেলসংযোগ পুরোপুরি পুনরুজ্জীবনের অগ্রগতিতে উভয় নেতা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। নৌপথে কলকাতা-আগরতলার মধ্যে পণ্য চলাচল, সোনামুড়া-দাউদকান্দি রুট পর্যালোচনাসহ চট্টগ্রাম ও মোংলার বন্দর দুটির মাধ্যমে ভারতীয় পণ্যের ট্রান্সশিপমেন্ট ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করতেও তাঁরা একমত হয়েছেন।

সংযোগের ক্ষেত্রে নতুন যুক্ত হয়েছে ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ডের ত্রিপক্ষীয় মহাসড়ক প্রকল্পে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের আগ্রহ এবং বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের হিলির সঙ্গে মেঘালয়ের মাহেন্দ্রগঞ্জের সরাসরি সংযোগ স্থাপনের ভারতীয় প্রস্তাব। ভারতের প্রতিবেশী রাজ্যগুলোর মধ্যে পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের অন্তত একটি স্থলবন্দরের নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনার অনুরোধ জানিয়েছে দিল্লি, যা তারা আগরতলা-আখাউড়া পয়েন্টেই শুরুর অনুরোধ জানিয়েছে। ঢাকা-ফেনী সেতু সম্পন্ন হলে চট্টগ্রাম থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোয় পরিবহনের জন্য বাংলাদেশের ট্রাক ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে।


প্রকাশক/সম্পাদক: আবুল হারিস রিকাবদার
প্রকাশক ও সম্পাদক কর্তৃক প্রথম বাংলাদেশ/শিবপুর, নরসিংদী থেকে প্রকাশিত
ফোনঃ বার্তা-০১৭০০-০০০০০০, বিজ্ঞাপন-০১৯০০-০০০০০০, ই-মেইলঃ prothombangladeshnews@gmail.com