logo
আপডেট : ১০ জানুয়ারি, ২০২১ ১৩:৪৫
৬ মাসেই শেষ হবে স্থানীয় সরকারের সব ভোট
অনলাইন ডেস্ক

৬ মাসেই শেষ হবে স্থানীয় সরকারের সব ভোট

প্রাণসংহারি করোনা ভাইরাসের কারণে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের সাধারণ ও উপ-নির্বাচন আটকে ছিল অনেকদিন ধরেই। যে কারণে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অনেক প্রতিষ্ঠান প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে, আবার কতগুলো আগেরবারের নির্বাচিতদের মাধ্যমেই চলে আসছে।

দৈব-দুর্বিপাকের কারণে সংবিধান ও আইন এমন পরিস্থিতি সাময়িক সময়ের জন্য সমর্থন করে। কিন্তু এভাবে চলবে কতদিন? এই মহামারীর শেষ হবে কবে- এই প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা। তাই অপেক্ষায় না থেকে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচন শেষ করে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ৬ মাসের মধ্যে এসব নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে বলে জানা গেছে।

 

ইসি সংশ্লিষ্টরা জানিছেন, মেয়াদ শেষে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির হাতে ক্ষমতায়ন আসবে সেই ব্যবস্থা করা নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব। এরইমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ পৌরসভাগুলোর ভোট সম্পন্ন করার কাজ শুরু হয়েছে। এরপরই ধাপে ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) এবং বিভিন্ন উপজেলা ও জেলা পরিষদের উপ-নির্বাচনগুলো শেষ করে ফেলা হবে। এজন্য সব ধরনের আয়োজন প্রায় সম্পন্ন। অপেক্ষা এখন শুধু তফসিলের।

তথ্যমতে, ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ইউপিতে বিভাগওয়ারি নির্বাচন হয়েছিল। এবারও একই প্রক্রিয়ায় করার প্রাথমিক পরিকল্পনার রয়েছে ইসির। করোনার কারণে স্থানীয় সরকারের স্থগিত ১১৫টি নির্বাচন এবং অপসারণ, পদত্যাগ, মৃত্যু ও মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে নির্বাচন উপযোগী ১৮৭টি জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন শুরু হবে। করোনার মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব নির্বাচন হবে।

স্থানীয় সরকার আইন সংশোধনের পর ২০১৫ সালে প্রথম দলীয় প্রতীকে ভোট হয় পৌরসভায়। ওই নির্বাচনে ইসির নিবন্ধিত ২০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচন (পৌরসভা) আইন অনুযায়ী, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। এ পর্যন্ত চার ধাপে ৩ শতাধিক পৌরসভার ভোটের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। সেইসাথে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রথম ধাপের পৌরসভার ভোট সম্পন্ন হয়েছে। ফেব্রুয়ারির মধ্যে চতুর্থ ধাপের ভোট শেষ করার মাধ্যমে পৌরভোটের ইতি টানবে ইসি। এরপরই ঘোষণা হবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও অন্যান্য উপ-নির্বাচনের তফসিল। জুনের মধ্যেই এসব নির্বাচন শেষ করার প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হচ্ছে। এরইমধ্যে দেশের নির্বাচন উপযোগী এবং বিভিন্ন কারণে পদ খালি হওয়া শতাধিক স্থানীয় সরকার পরিষদের নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫টি পৌরসভা, ৬টি ইউপিতে সাধারণ নির্বাচন এবং ৬৮টি ইউপি, ৪টি জেলা, ২টি পৌরসভা ও ১০টি উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচন হয়েছে।

 

ইসির কর্মকর্তারা জানান, সারা দেশের ইউনিয়ন পরিষদগুলোয় এপ্রিল থেকে ধাপে ধাপে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষে ইউনিয়ন পরিষদেও ইভিএম ব্যবহার করা হতে পারে। তবে তা নির্ভর করছে এনআইডির সক্ষমতার ওপর। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিশেষ করে ইউনিয়র পরিষদ নির্বচন যেহেতু তৃণমূলের ভোট, তৃণমূলের সাধারণ মানুষের মতে প্রতিফলন রয়েছে বেশি- এ কারণে পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘিরে কেন্দ্রের পাশাপাশি তৃণমূলের রাজনীতিও বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে।

ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর জানান, কমিশন সভার সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্থানীয় সরকারের নির্বাচন এরইমধ্যে শুরু হয়েছে। এসব নির্বাচনের জন্য আর সময়ক্ষেপণ করা হবে না। আর চট্টগ্রাম সিটির প্রশাসকের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরপরই নির্বাচিত নতুন মেয়র দায়িত্ব নেবেন। এর প্রক্রিয়াও এরইমধ্যে শুরু করে দেয়া হয়েছে।

পৌরসভা নির্বাচন: দেশের পৌরসভা রয়েছে মোট ৩২৯টি। এসব ভোট ফেব্রুয়ারির মধ্যেই শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। এরইমধ্যে প্রথম ধাপের তফসিলের ২৪টি পৌরসভায় ইভিএমে ভোট হয়ে গেছে গত ২৮ ডিসেম্বর। আগামী ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপের ৬১ পৌরসভায় ভোট হবে। এর মধ্যে ২৯টি পৌরসভায় ইভিএম এবং ৩২ পৌরসভায় ব্যালটে ভোটগ্রহণ হবে। আর তৃতীয় ধাপে ৬৪টি পৌরসভায় ৩০ জানুয়ারি ভোট হবে। চতুর্থ ধাপের পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি। এ দফায় ৫৬টি পৌরসভায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

ইউপি নির্বাচন: বর্তমানে দেশে ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। ২০১৬ সালের ২২ মার্চ শুরু হয়ে কয়েক ধাপে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন শেষ হয় ওই বছরের ৪ জুন। আইন অনুযায়ী, কোনো ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।

এই হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চে যেসব ইউনিয়ন পরিষদের ৫ বছর মেয়াদ হবে, সেসব ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে এ বছরের মার্চের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে। আর যেসব ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ জুনের প্রথম দিকেই শেষ হবে, সেসব ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন শেষ করতে হবে এ বছরের মে মাসের মধ্যে। এদিকে ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ শেষ হতে যাওয়ায় এখন থেকেই তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন সম্ভাব্য চেয়ারম্যান ও সদস্য (মেম্বার) প্রার্থীরা। ইউপি নির্বাচন সামনে রেখে বাড়ি, পাড়া-মহল্লা, হাট-বাজার ও রাজনৈতিক কার্যালয়গুলো সরগরম।

জেলা পরিষদ নির্বাচন: ইউপি নির্বাচনের পাশাপাশি জেলা পরিষদ নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীরাও এখন থেকেই মাঠে তৎপর। দেশে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন হয় ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর। সেই হিসাবে চলতি বছরেই জেলা পরিষদের নির্বাচন হওয়ার কথা। প্রথমবার পরিষদের মেয়াদ শেষে পরের নির্বাচনগুলোতে কমিশন নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করবে।

আইন অনুযায়ী একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের পাঁচ জন নারী সদস্য নিয়ে জেলা পরিষদ গঠন হয়। চেয়ারম্যান ও ২০ জন সদস্যকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন সংশ্লিষ্ট এলাকার সিটি করপোরেশন (থাকলে), উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। এজন্য ২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রতিটি জেলাকে ১৫টি ওয়ার্ডে ভাগ করা হয়েছিল।

যেহেতু জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ২০ জন সদস্যকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন সংশ্লিষ্ট এলাকার নির্বাচিত প্রতিনিধিরা- এজন্য জেলা পরিষদের আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা আসন্ন ইউপি নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীদের জয়ী করতে এখন থেকেই তোড়জোড় শুরু করেছেন।

 

প্রকাশক/সম্পাদক: আবুল হারিস রিকাবদার
প্রকাশক ও সম্পাদক কর্তৃক প্রথম বাংলাদেশ/শিবপুর, নরসিংদী থেকে প্রকাশিত
ফোনঃ বার্তা-০১৭০০-০০০০০০, বিজ্ঞাপন-০১৯০০-০০০০০০, ই-মেইলঃ prothombangladeshnews@gmail.com