logo
আপডেট : ২৯ জানুয়ারি, ২০২১ ১৫:৩৫
করোনা: পাকিস্তান কি ভারতের টিকা পাবে
অনলাইন ডেস্ক

করোনা: পাকিস্তান কি ভারতের টিকা পাবে

পাকিস্তান অতিসংক্রামক করোনা নিয়ন্ত্রণে আগামী সপ্তাহে প্রতিষেধক প্রদান কর্মসূচি শুরু করতে যাচ্ছে। প্রথমে স্বাস্থ্যকর্মীদের চীনা-উৎপাদিত বিনামূল্যের টিকা দেওয়া হবে।

প্রতিবেশী ভারতও মধ্য জানুয়ারিতে করোনার বিরুদ্ধে বিশ্বের অন্যতম বড় টিকাদান কর্মসূচি শুরু করে দিয়েছে। 

বৈশ্বিকভাবে মোট টিকার ৬০ শতাংশ উৎপাদন করছে ভারত। প্রতিবেশী বন্ধু দেশগুলোতে বিনামূল্যে লাখ লাখ ডোজ উপহার হিসেবে দিচ্ছে ভারত। যেটিকে ‘টিকা-কূটনীতি’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।–খবর বিবিসির

এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে পাকিস্তান এ টিকা নেবে না। ১৯৪৭ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীন হওয়ার পর দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ এ পর্যন্ত দুটি যুদ্ধ করেছে। ২০১৯ সালেও কাশ্মীর উপত্যকা নিয়ে তারা যুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছিল।

পাকিস্তান তার ২২ কোটি জনসংখ্যার অন্তত ৭০ শতাংশকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। সেখানকার ঔষধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এখন পর্যন্ত ব্রিটেনের অক্সফোর্ড/অ্যাস্ট্রাজেনেকা, চীনের সিনোফার্ম ও রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি টিকা জরুরি ভিত্তিতে দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে।

এ ছাড়া চীনা উৎপাদিত ক্যানসিনো বায়োলোজিকস টিকাও পাকিস্তানে চূড়ান্ত পরীক্ষার মধ্যে রয়েছে।

দেশটিতে এ পর্যন্ত পাঁচ লাখ ৩০ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর মৃত্যু হয়েছে ১১ হাজার ৫১৪ জনের।

শুরুতে পাকিস্তানকে পাঁচ লাখ সিনোফার্মের টিকা উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন। সপ্তাহ শেষে সেই টিকার প্রথম ব্যাচ পৌঁছে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

করাচিভিত্তিক অন্যতম টিকা আমদানিকারক সিন্ধু মেডিকেল স্টোরসের উসমান গনি বলেন, এগুলো তেমন কিছু না। আমাদের আরও বিপুল টিকা দরকার।

নিশ্চিত করে বলা যায় যে বিশ্বজুড়ে আরও বিভিন্ন উৎস থেকে পাকিস্তান টিকা আমদানির চেষ্টা চালিয়ে যাবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উচ্চাভিলাষী কোভ্যাক্স প্রকল্প ১৮০টির বেশি দেশে টিকা উৎপাদন, বিক্রি ও সরবরাহের উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে। তবে এখানে একটি আশঙ্কা রয়েছে– ধনী দেশগুলো দরিদ্র দেশের তুলনায় আগভাগেই করোনার টিকা মজুদ করতে সক্ষম হবে।

এই যখন অবস্থা, তখন প্রতিবেশী দেশ যাতে টিকা-সংকটে না ভোগে, সে ক্ষেত্রে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সম্পর্ক খারাপ থাকলেও দুই দেশের মধ্যে ওষুধ বাণিজ্যে তার কোনো প্রভাব পড়েনি; বরং স্থিতিশীল রয়েছে। 

২০১৮ সালে ভারত থেকে ছয় কোটি ২০ লাখ ডলার মূল্যের ওষুধ আমদানি করেছে পাকিস্তান।

পাকিস্তানে বিক্রি হওয়া ওষুধের ৬০-৭০ শতাংশ সক্রিয় উপাদান ভারত থেকে আমদানি করা। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে– পাকিস্তানে দেওয়া টিকার ৯০ শতাংশই ভারত থেকে আনা। ভারতের টিকা বিশ্বমানের, সাশ্রয়ী ও সহজে হস্তান্তরযোগ্য।

আর পাকিস্তানে প্রতিবছর এক কোটি ১৪ লাখ নবজাতক ও গর্ভবতী নারীকে যেসব টিকা দেওয়া হয়, তার অধিকাংশই রাষ্ট্রীয়-তহবিলের মাধ্যমে হয়ে থাকে। ১০টি রোগ প্রতিরোধে এসব নবজাতককে টিকা দেওয়া হয়। আর তাদের মায়েদের দেওয়া হয় টিটেনাসের টিকা।

উসমান গনির বিশ্বাস– অদূর ভবিষ্যতে ভারত থেকে টিকা পাবে পাকিস্তান। অক্সফোর্ডের টিকার ভারতের স্থানীয় নাম কোভিশিল্প ও ভারত বায়োটেকের উৎপাদিত কোভ্যাকসিনকে ভারতীয় ঔষধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা সবুজ সংকেতও দিয়েছে।

তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ভারত ইতিমধ্যে টিকার অনেক বেশি অর্ডার পেয়েছে। সীমান্তের ওপারের টিকা উৎপাদনকারীদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো। কাজেই সরবরাহ পেতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাব। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই সময় লাগবে।

তবে পাকিস্তান থেকে ভারতের উৎপাদিত টিকা ক্রয়ের কোনো অনুরোধ এসেছে কিনা; তা অবগত নন বলে জানিয়েছেন ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।

অনেকের বিশ্বাস– পাকিস্তানকে ভারত কখন টিকার ডোজ দেয়া শুরু করবে, তা কেবল সময়ের ব্যাপার। আর উসমান গনি বলেন, যদি টিকার ক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতা না করে, তাতে নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হব।

ইতিমধ্যে নয়াদিল্লি ‘টিকা কূটনীতি’কে জোরেশোরে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অনেকে মনে করেন, আশপাশের অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিস্তারের পাল্টা পদক্ষেপ ভারতের এ টিকা কূটনীতি। 

নয়াদিল্লিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (ওআরএফ) গবেষক হর্ষ পান্ত ও আরশি তারকিও একই রকম মতপ্রকাশ করেন।

তবে চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝিও লিজিয়ান এ ধারণা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, টিকা নিয়ে ভারতের সঙ্গে তার দেশের কোনো প্রতিযোগিতা নেই।


প্রকাশক/সম্পাদক: আবুল হারিস রিকাবদার
প্রকাশক ও সম্পাদক কর্তৃক প্রথম বাংলাদেশ/শিবপুর, নরসিংদী থেকে প্রকাশিত
ফোনঃ বার্তা-০১৭০০-০০০০০০, বিজ্ঞাপন-০১৯০০-০০০০০০, ই-মেইলঃ prothombangladeshnews@gmail.com