logo
আপডেট : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১২:২০
ভাষার দাবিকে রাষ্ট্রদ্রোহিতায় রূপ দেওয়ার চেষ্টা
অনলাইন ডেস্ক

ভাষার দাবিকে রাষ্ট্রদ্রোহিতায় রূপ দেওয়ার চেষ্টা

পূর্ব পাকিস্তানে যখন ভাষার জন্য আন্দোলন চলছে তখন পশ্চিম পাকিস্তানের সংবাদপত্রগুলো রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে সাম্প্রদায়িক রূপ দিতে ও এই আন্দোলনকে দেশদ্রোহী আচরণ প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লাগে। ৬ ফেব্রুয়ারি করাচির ‘ডন’ পত্রিকায় ‘প্রাদেশিকতা’ শীর্ষক সম্পাদকীয়তে পাকিস্তানের সব থেকে বড় শত্রু রূপে প্রাদেশিকতাকে আখ্যায়িত করে লেখা হয়, ‘বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার জন্য পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্ররা যে আন্দোলন করছেন তা আন্দোলনের নামে রাষ্ট্রদোহিতা।

ভাষা প্রসঙ্গকে, যুবকদের কাছে যার একটা আবেগময় আবেদন আছে, কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রামে একটি খুব শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যেসব মানুষ কায়েদে আজমের জীবদ্দশায় কোনো দিন মাথা তোলার সাহস করেনি তাদেরই প্ররোচিত করা হচ্ছে জাতির পিতার উপদেশ অগ্রাহ্য করতে’।.....‘যারা প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে প্রাদেশিকতার ওকালতি করে তাদেরকে রাষ্ট্রের শত্রু হিসেবে ঘোষণা করা এবং কোনো প্রকার প্রশ্রয় না দেওয়া উচিত।’ ৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা মিলিত হয়ে এই সম্পাদকীয়র প্রতিবাদ করেন। ছাত্রদের ঐ সভায় এই বিবৃতির তীব্র নিন্দা করে প্রস্তাব গৃহীত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা একবাক্যে ঘোষণা করেন যে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলনের সঙ্গে রাষ্ট্রদ্রোহিতার বা প্রাদেশিকতার কোনো সংশ্রব নেই।

‘ডন’ ছাড়া পশ্চিম পাকিস্তানের অন্যান্য পত্রিকাও পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলনকে প্রাদেশিকতা বলে উল্লেখ করেন। মওলানা আব্দুল হামিদ ভাসানীর বিরুদ্ধে তীব্র আপত্তি জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘উর্দুর মত একটা নূতন ভাষা পূর্ব বাংলার জনগণের উপর জোর করিয়াই চাপাইয়া দিতে চাহিলে নিশ্চয় এই আশঙ্কাই জনগণের মনে উদ্রেক হওয়া স্বাভাবিক যে চাকুরী ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তাহাদিগকে কোণঠাসা করিবার জন্যই ইহা করা হইতেছে। একতার বুলি আওড়াইয়া যারা পাকিস্তানে একটিমাত্র রাষ্ট্রভাষার পক্ষে ওকালতি করিতেছেন, আমি তাহাদিগকে দুনিয়ার প্রগতিশীল ও সমৃদ্ধিশালী রাষ্ট্র রাশিয়া, সুইজারল্যান্ড ও কানাডার দিকে তাকাইতে বলিতেছি। তথায় একের অধিক রাষ্ট্রভাষা আছে এবং ইহাতে দেশের একতা শিথিল করা তো দূরের কথা, দেশবাসীর আর্থিক, নৈতিক ও সাংস্কৃতিক উৎকর্ষ সাধনে প্রচুর সহায়তা করিয়াছে।

যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক অলি আহাদও ‘ডন’ এর বিরুদ্ধে সংবাদপত্রে বিবৃতি দেন। ৬ ফেব্রুয়ারি পাঞ্জাব প্রদেশ থেকে নির্বাচিত সংবিধান সভার সদস্য চৌধুরী নাজির আহমেদ খান ভাষা প্রশ্নে নাজিমুদ্দীনের একটি উক্তির প্রতিবাদ করে সংবাদপত্র বিবৃতির মাধ্যমে বলেন, ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কি হবে সে বিষয়ে সংবিধান সভাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। উর্দু যে পাকিস্তানের জাতীয় ভাষারূপে প্রত্যেক সরকারি মুখপাত্র এবং দায়িত্বশীল নেতার দ্বারা পাকিস্তানের প্রথম থেকেই স্বীকৃত হয়েছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

এ সময় পূর্ব বাংলা সরকার কর্তৃক ‘পাকিস্তান অবজারভার’ এর প্রকাশনা নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। অভিযোগ ছিল, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও শান্তিবিরোধী এবং রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ ও রাষ্ট্রবহির্ভূত আনুগত্য। ১২ ফেব্রুয়ারি এই ইংরেজি দৈনিকে ‘ছদ্ম ফ্যাসিজম’ শীর্ষক সম্পাদকীয় নিবন্ধে খাজা নাজিমুদ্দিনের সমালোচনা করা হয়

সংবাদপত্র বন্ধের সরকারি আদেশ জারি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর বিরুদ্ধে চারদিকে অসন্তোষ ও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সভা করে তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা করেন। বক্তারা বলেন, ভাষা আন্দোলনকে ব্যাহত করার জন্যই আন্দোলনের সমর্থক একমাত্র দৈনিক পত্রিকাকে বন্ধ করে দেওয়া হলো।


প্রকাশক/সম্পাদক: আবুল হারিস রিকাবদার
প্রকাশক ও সম্পাদক কর্তৃক প্রথম বাংলাদেশ/শিবপুর, নরসিংদী থেকে প্রকাশিত
ফোনঃ বার্তা-০১৭০০-০০০০০০, বিজ্ঞাপন-০১৯০০-০০০০০০, ই-মেইলঃ prothombangladeshnews@gmail.com