logo
আপডেট : ৫ আগস্ট, ২০১৮ ১১:০১
গবেষণায় ‘চুরি’ ঠেকাতে ভারতে কঠোর ব্যবস্থা
প্রথম বাংলাদেশ ডেস্ক

গবেষণায় ‘চুরি’ ঠেকাতে ভারতে কঠোর ব্যবস্থা

ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে রিসার্চের নামে নকল করা (প্লেগিয়ারিজম) ঠেকাতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

শুধু তাই নয়, ইউজিসি বলছে প্লেগিয়ারিজমের মাত্রার ওপর নির্ভর করবে শাস্তির পরিমাণ কতটা হবে। নজিরবিহীনভাবে তারা প্লেগিয়ারিজমজনিত অপরাধের চারটি মাত্রা বা লেভেলও বেঁধে দিয়েছে।

সর্বোচ্চ মাত্রার ‘নকল’ করলে সংশ্লিষ্ট গবেষকের রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়ে যাবে। এমনকী শিক্ষকরা চাকরি পর্যন্ত খোয়াবেন বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বা গবেষণা-কেন্দ্রের সঙ্গে জড়িত অনেকেই মনে করছেন, প্লেগিয়ারিজমের সমস্যা এতটাই ব্যাপক আকার নিয়েছে যে এই ধরনের কড়া পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া কোনও গতি নেই।

তবে গবেষণা পরিচালকদের মধ্যে অনেকেই আবার এই পদ্ধতির সঙ্গে একমত নন। তারা যুক্তি দিচ্ছেন, ‘অল্পস্বল্প’ প্লেগিয়ারিজমের নামে ছাড় দেওয়া হলে এই প্রবণতাটাকেই আসলে প্রশ্রয় দেওয়া হবে। বিভিন্ন ‘লেভেলে’র প্লেগিয়ারিজম চিহ্নিত করে ইউজিসি যে নির্দেশিকাটি জারি করেছে তা নিয়ে তর্কবিতর্কও হচ্ছে বিস্তর।

তাতে বলা হয়েছে, যদি দেখা যায় যে প্লেগিয়ারিজমের পরিমাণ গবেষণাপত্রের মাত্র ১০ শতাংশ- অর্থাৎ আগে প্রকাশিত অন্য কোনও নিবন্ধের সঙ্গে তার সাদৃশ্যের পরিমাণ বেশ কম- তাহলে অভিযুক্ত গবেষককে অব্যাহতি দেওয়া হবে, তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।

এটাকে বলা হচ্ছে ‘লেভেল জিরো’ প্লেগিয়ারিজম। বিষয়টা শুধু অভিযুক্তকে জানানো হবে এক্ষেত্রে।

অপরাধটা ‘লেভেল ওয়ান’ বলে গণ্য হবে যদি দেখা যায় প্লেগিয়ারিজমের পরিমাণ ১০ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে। এক্ষেত্রে অভিযুক্তকে সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে নতুন করে স্ক্রিপ্ট পেশ করতে বলা হবে।

ইউজিসি একটা প্লেগিয়ারিজমকে ‘লেভেল টু’ বলছে তখনই যখন দেখা যাবে সাদৃশ্যের পরিমাণ ৪০ থেকে ৬০ শতাংশের মধ্যে। এই ধরনের বড়সড় নকলে গবেষক বা ছাত্রছাত্রীদের অন্তত এক বছরের জন্য কার্যত সাসপেন্ড করা হবে। তারা এই সময়ের মধ্যে নতুন খসড়াও জমা দিতে পারবেন না।

কিন্তু সবচেয়ে বড় অপরাধ হল ‘লেভেল থ্রি’ প্লেগিয়ারিজম। যেখানে ৬০ শতাংশের বেশি সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যাবে। ভারতের ইউজিসি বলছে, এরকম হলে গোটা গবেষণা প্রকল্পের রেজিস্ট্রেশনই বাতিল করে দেওয়া হবে। ওই গবেষক তো কালো তালিকাভুক্ত হবেনই, সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের জড়িত থাকার প্রমাণ মিললে তিনিও চাকরি হারাবেন।

বরোদার মহারাজা সয়াজিরাও ইউনিভার্সিটির উপাচার্য পরিমল ব্যাস বলছেন, ‘এই ধরনের টিয়ার-ভিত্তিক গ্রেডেশন করে প্লেগিয়ারিজম রোখা যাবে কি না সেটা অন্য বিতর্ক। কিন্তু সমস্যাটার মোকাবিলা করার জন্য যে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে সেটা নিয়ে কিন্তু কোনও দ্বিমত নেই।’

পরিমল ব্যাস আরও বলেন, ‘প্লেগিয়ারিজমের এই সমস্যা, যেটাকে একাডেমিক সার্কলে অনেকে ‘কপি-পেস্ট’ বলেও ডাকেন, সেই মহামারী থেকে দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও পুরোপুরি মুক্ত নয় এটাই চিন্তার কথা।’

প্লেগিয়ারিজম রুখতে তারা যে আপাতত ইউজিসির নির্দেশিকা অনুসরণে প্রস্তুত, সে কথাও তিনি জানিয়ে দিয়েছেন। তবে ভারতের পরমাণু বিজ্ঞানী এবং ব্যাঙ্গালোরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্স স্টাডিজের সাবেক অধিকর্তা ভি এস রামমূর্তি একেবারেই মনে করছেন না ইউজিসির প্রস্তাবিত দাওয়াই কোনও কাজে আসবে।

তিনি বলেন, ‘প্লেগিয়ারিজম হল প্লেগিয়ারিজম। একটা বাক্য চুরি করলেও চুরি- আবার রিসার্চ পেপার থেকে একটা চ্যাপ্টার চুরি করলেও চুরি। মাত্র একটা লাইন টুকেছি, এটা বললে অপরাধ কমে যায় না।’ কাজেই আমি অন্তত মানতে পারছি না প্লেগিয়ারিজমের স্লাইডিং স্কেল করে এই প্রবণতাকে আটকানো যাবে।’

ইউজিসি-কে এই নির্দেশিকা পুনর্বিবেচনা করারও আর্জি জানিয়েছেন এই প্রবীণ ভারতীয় বিজ্ঞানী। ২০১৪ সালে প্লেগিয়ারিজমের অভিযোগে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাবেক উপাচার্য দীপক পেন্টালকে গ্রেপ্তারও হতে হয়েছিল।

তার দু’বছর বাদেই পন্ডিচেরি ইউনিভার্সিটির তৎকালীন উপাচার্য চন্দ্রা কৃষ্ণমূর্তিকে একই অভিযোগে বরখাস্ত করে কেন্দ্রীয় সরকার। এখন ইউজিসির এই নির্দেশিকা নিয়ে হয়তো আগামীতে আরও তর্কবিতর্ক হবে, কিন্তু প্লেগিয়ারিজমের সমস্যা যে ভারতের শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকেও বিচলিত করেছে তা এই ফরমান জারি করা থেকেই পরিষ্কার। 


প্রকাশক/সম্পাদক: আবুল হারিস রিকাবদার
প্রকাশক ও সম্পাদক কর্তৃক প্রথম বাংলাদেশ/শিবপুর, নরসিংদী থেকে প্রকাশিত
ফোনঃ বার্তা-০১৭০০-০০০০০০, বিজ্ঞাপন-০১৯০০-০০০০০০, ই-মেইলঃ prothombangladeshnews@gmail.com