বাংলা ব্যান্ড সংগীতের জীবন্ত কিংবদন্তি জেমসের জন্মদিন আজ। ঘরোয়া আয়োজনে এই তারকা দিনটি কাটাচ্ছেন ঢাকায়। ভক্তদের কাছে তিনি ‘গুরু’, আবার কেউ কেউ বলেন নগর বাউল। তাঁর পুরো নাম ফারুক মাহফুজ আনাম জেমস। ১৯৬৪ সালের ২ অক্টোবর নওগাঁ জেলায় জন্ম নিলেও শৈশব কেটেছে চট্টগ্রামে।
সরকারি কর্মকর্তা বাবার ইচ্ছে ছিল ছেলে পড়াশোনায় মন দেবে, কিন্তু ছোটবেলা থেকেই জেমসের মন পড়ে ছিল গানের সুরে। গানকে বেছে নেওয়ার জেদ থেকেই অভিমান করে একসময় বাড়ি ছেড়ে চলে আসেন চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিংয়ে। সেখান থেকেই শুরু হয় তার সংগীতজীবনের পথচলা। ১৯৮০ সালে কিছু সমমনা বন্ধুকে নিয়ে গড়ে তোলেন ব্যান্ড ‘ফিলিংস’। প্রথম অ্যালবাম স্টেশন রোড ততটা সাড়া না পেলেও ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত অনন্যা অ্যালবাম তাকে রাতারাতি জনপ্রিয়তার শিখরে তুলে দেয়। পরবর্তীতে ব্যান্ডটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘নগর বাউল’।
গিটারে তার দক্ষতা যেমন অনন্য, তেমনি কণ্ঠের জাদুতে এখনও মুগ্ধতা ছড়ান অগণিত শ্রোতার মনে। শুধু গায়ক নন, তিনি সুরকার ও গীতিকারও। নিজের লেখা গান ছাড়াও কণ্ঠ দিয়েছেন কবি শামসুর রাহমান, প্রিন্স মাহমুদ ও লতিফুল ইসলাম শিবলীর লেখা জনপ্রিয় সব গানে। চলচ্চিত্রেও রেখেছেন অবদান। দেশ: দ্য লিডার ও সত্তা সিনেমার গানে কণ্ঠ দিয়ে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
নব্বইয়ের দশকে তরুণদের মুখে মুখে ফিরেছে তার অগণিত গান দুষ্টু ছেলের দল, বিজলি, তোমার দেখা নাই, এত কষ্ট, আমি তোর মনের মতো হতে পারলাম নারে কিংবা জনতা এক্সপ্রেস। প্রতিটি গান আজও সমান জনপ্রিয়। শুধু বাংলাদেশেই নয়, বলিউডেও ঝড় তুলেছেন তিনি ভিগি ভিগি, চল চলে, আলবিদা, রিশতে গানগুলো দিয়ে।
তবে সাফল্যের শীর্ষে থেকেও ‘গুরু’ থাকেন আড়ালে। বাবা-মা দেখে যেতে পারেননি তার এই বিশ্বজয়ের গল্প। সেই অভাব থেকেই হয়তো বারবার ফিরে যান গানে—‘মা’ ও ‘বাবা’ শিরোনামের গানের প্রতিটি লাইনে মিশে আছে তার ব্যক্তিগত বেদনা। কণ্ঠের সেই অদম্য বাউল আজও তরুণদের অনুপ্রেরণা। জন্মদিনে ভক্তদের ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছেন বাংলা সংগীতের এই চিরসবুজ তারকা নগর বাউল জেমস।