মানবতাবিরোধী অপরাধে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে শহীদ আবু সাঈদের পরিবার। রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী তার পরিবারের পক্ষ থেকে সন্তুষ্টির কথা জানান।
রমজান আলী বলেন, আমরা এ রায়ে খুশি হয়েছি। তবে রায় যেন দ্রুত কার্যকর করা হয় সেজন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন বলেন, শুধু রায় ঘোষণা করেই যেন শেষ না হয়। দণ্ডপ্রাপ্তদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানান তিনি। আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, ছেলেকে হারিয়ে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা কোনোদিন পূরণ হবার নয়। আমার মতো আর যেন কোনো মায়ের বুক এভাবে খালি না হয়, সেজন্য দ্রুত রায় কার্যকর করতে হবে।
সোমবার দুপুরে বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে মারণাস্ত্র ব্যবহার করে নিরীহ, নিরস্ত্র দেড় হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা এবং ৩০ হাজার মানুষকে আহত করা হয়েছিল। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা।
কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৬ জুলাই রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হন। ১৭ জুলাই পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুরে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয় তাকে। আবু সাঈদকে প্রকাশ্যে গুলি করার দৃশ্য দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হলে সারাদেশে আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে ৫ আগস্ট পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন আবু সাঈদ।