ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির ওপর হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তীব্র ঘৃণা ও নিন্দা জানিয়েছে বিএনপি। একইসঙ্গে এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার রাতে দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারসহ কয়েকটি পত্রিকায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নিন্দা, ঘৃণা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে দলটি বলেছে, এসব ঘটনা প্রমাণ করে একটি পুরনো চিহ্নিত মহল দেশকে পরিকল্পিতভাবে নৈরাজ্যের পথে ধাবিত করতে চায়।
শুক্রবার রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রতিক্রিয়া জানায় দলটি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের ভোটাধিকার তথা গণতান্ত্রিক অধিকারকে চিহ্নিত মহলটি নস্যাৎ করে দেশে ফ্যাসিবাদের একটি নতুন সংস্করণ তৈরি করতে চাচ্ছে। সরকারের নাকের ডগাতেই তারা এই তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। জনগণও মনে করে সরকারের ভূমিকা সন্তোষজনক নয়। ফলে দেশ-বিদেশে সরকার তথা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সংবাদপত্রে ন্যাক্কারজনক হামলার মধ্য দিয়ে সেখানে কর্মরত সাংবাদিকদের জীবনমৃত্যুার ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়। সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও নিউএজের সম্পাদক ফ্যাসিবাদ বিরোধী জুলাই আন্দোলনসহ দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম সাহসী ব্যাক্তিত্ব দেশবরেণ্য সাংবাদিক নুরুল কবিরের উপর আক্রমণ করা হয়। ছায়ানটসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানেও হামলা করা হয়। আমরা এসব ঘৃণ্য ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি ও ঘৃণা প্রকাশ করছি।
অবিলম্বে ওসমান হাদির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ইতিমধ্যেই ওই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে দেশের সকল দল প্রতিবাদ করে হত্যাকারীদের বিচারের দাবি জানিয়েছে। হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টি করে চলেছে। এরূপ পরিস্থিতিতে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনা আগামী জাতীয় নির্বাচন তথা গণতন্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়াকে অনিশ্চিত করার ষড়যন্ত্র বলেই আমরা মনে করি।
স্থায়ী কমিটির সভায় নেতারা বলেন, শুধু 'হাদি'-অজুহাতে খুলনা ও চট্টগ্রামে ভারতের হাইকমিশনের কার্যালয় ও বাসভবনে হামলা; প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের ঢাকার প্রধান কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ; ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারে আবারও অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর; ছায়ানটের কার্যালয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ; ইন্দিরা গান্ধী কালচালার সেন্টার ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ; উত্তরাতে ৩২টি দোকান ভাঙচুর ও আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ; রাজশাহীতে ডেইলি স্টার-প্রথম আলোর কার্যালয় ভাঙচুর; ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে ময়মনসিংহে এক হিন্দু যুবককে গাছে ঝুলিয়ে পিটিয়ে হত্যা!; চট্রগ্রামের প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় পুনরায় অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর; সাবেক মন্ত্রী বীর বাহাদুরের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং নিউজ এজ সম্পাদক নুরুল কবীরের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, শান্তিকামী দেশবাসীর পক্ষ থেকে এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রকারীদের আমরা হুঁশিয়ার করে দিতে চাই। এত রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের দেশকে আমরা ধ্বংস হতে দেবো না। এই অপশক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দিতে হবে। এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে নৈরাজ্য বিরোধী সকল রাজনৈতিক সামাজিক শক্তির আজ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
মির্জা ফখরুল বলেন, যে ঐক্যের মাধ্যমে আমরা ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও জাতীয় নির্বাচন আদায় করেছি তারই ধারাবাহিকতাতে আমরা সকল দেশপ্রেমিক শক্তিকে আজ আবারও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।