সাবেক লিবীয় নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির নিজের শহর সির্তে এখন ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছে। বছর দুয়েক আগে আইএস জঙ্গিরা শহরটিতে ছাড়লেও এখনো সেটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরেনি। খবর বিবিসির।
সির্তে একসময় ছিলো সাজানো গোছানো ছবির মতো একটি শহর। আর এখন শহরের যেদিকেই চোখ যায় শুধু যত্রতত্র ধ্বংসস্তূপ চোখে পড়ে। প্রায় প্রতিটি বাড়িই হয় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে না হলে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে সব স্থাপনার প্রায় একই অবস্থা। এক সময়ের রমরমা এই শহরটিতে এখনো শুধুই সংকট আর ধ্বংসের চিহ্ন।
যুদ্ধের ডামাডোল শেষে এখন শহরের অধিবাসীরা যার যার বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন। যদিও শহরটি পুনর্গঠনে সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তৎপরতা খুব কম বলে মনে করছেন তারা।
সেখানকার একজন অধিবাসী জানান, ‘শহরটিকে এ অবস্থায় দেখার জন্য আমরা ফিরে আসিনি। অনেকে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। নিজের বাড়ির অবস্থা দেখে আমার এক আত্মীয় হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন।’
সেখানকার অধিবাসীরা বলছেন শহরটির পুনর্গঠনের কোন উদ্যোগই তাদের চোখে পড়ছে না। তাদের অনেকের ক্ষোভ পশ্চিমাদের বিরুদ্ধেই। কারণ তারা মনে করে পশ্চিমারা যুদ্ধের সময় শহরটিকে ধ্বংস করেছে কিন্তু এখন অধিবাসীদের কোনো সহায়তাই করছে না।
আরেকজন অধিবাসী বলেন, ‘সাহায্য দেয়ার নাম করে তারা আমাদের উপহাস করছে। সারাদিন ধরে লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখে। আমরা সাহায্য চাই না। তারা আমাদের প্রতিবেশীদের ঘরবাড়ি ঠিক করে দিক, না হলে আমরা ইউরোপের দিকেই চলে যাবো।’
ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে সাত মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সময় শহরটি প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। শহরটি এমনিতেই ২০১১ সালের মুয়াম্মার গাদ্দাফি বিরোধী আন্দোলনের ধাক্কা সামলানোর চেষ্টা করছিলো। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা আর যুদ্ধে দেশটির অর্থনীতি আরও করুণ হয়ে ওঠে।
লিবিয়ায় আইএস হুমকির অবসান হলেও সির্তের দক্ষিণাঞ্চলীয় মরুভূমি এলাকায় এখনও কিছু জঙ্গি তৎপর আছে। সির্তে শহরে এই জঙ্গিরা যেন আবার ফিরে আসতে না পারে সেজন্য সবখানে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
তাদেরই একটি পেট্রোল টিমের একজন সেনা কর্মকর্তা মেজর আলী রাফিদা বলেন, ‘সির্তের মতো একটি বড় শহরের সুরক্ষা দেয়া আসলেই অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। যদি লিবিয়ান মানুষজন আমাদের বাহিনীতে যোগ না দেয় তাহলে জঙ্গিরা আবার ফিরেও আসতে পারে।’
এখানকার অধিবাসীরা এখন একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে রয়েছে। তারা তাদের জীবন আবার নতুন করে শুরু করতে চায়। তবে তার জন্য তাদের প্রথমত দরকার কারো বাড়ানো হাত।