আসামে বহুল আলোচিত-সমালোচিত ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন বা এনআরসি তালিকায় ৪০ লাখ বাঙালি বাদ পড়লেও, আইন অনুযায়ী প্রত্যেক ব্যক্তিই তার পরিচয় শনাক্ত করার সুযোগ পাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বলেছেন, ভারতের কোনো নাগরিককেই দেশছাড়া করা হবে না।
রবিবার ভারতের গণমাধ্যম এএনআইকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে মোদি বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। এ সময় তিনি জোরালোভাবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করেন।
ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে হঠাৎ করে ৪০ লাখ মানুষ তাদের নাগরিকত্ব হারিয়ে ফেলেছে। কথিত অবৈধ অভিবাসী আখ্যা দিয়ে তাদের সরিয়ে ফেলতে তালিকা (নাগরিকপঞ্জি) তৈরি করেছে দেশটির সরকার।
সাধারণ বহু মানুষের সঙ্গে সঙ্গে কয়েকযুগ ধরে বাস করা অনেকে এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকাদের বংশধররাও বাদ পড়েছেন আলোচিত এ তালিকা থেকে। এরই মধ্যে বেশ বিতর্কিত পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে এটি।
শনিবার ভারতীয় জনতা পার্টির সর্বভারতীয় প্রধান অমিত শাহ কলকাতায় আয়োজিত এক সমাবেশে অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিদের তাড়ানো হবে হুঙ্কার দেন। আর তৃণমূল নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশি তাড়ানোর নামে বাঙালিদের নিয়ে বিজেপি অপরাজনীতি করছে বলে হুশিয়ারি দেন।
তবে এনআরসি নিয়ে গৃহযুদ্ধ লাগবে, মমতার এমন মন্তব্য আস্থাহীনতা এবং জাতীয় বন্ধন বিনষ্ট করার সামিল বলে দাবি করেন মোদি।
আসামের নাগরিকদের তালিকা ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন বা এনআরসি নামে পরিচিত। সেটা ভারত ভাগের ৪ বছর পরে ১৯৫১ সালে তৈরি করা হয়। সেসময় পূর্ববঙ্গ থেকে লাখ লাখ মানুষ ভারতে চলে যায়। একইরকম ভাবে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পূর্ববঙ্গেও চলে আসেন অনেকে।
সেই সময়ে রাজ্যটির হিন্দুপ্রধান অবস্থানে কোনো আঘাত আসতে পারে বিবেচনা করে এই তালিকাটিটি করা হয়েছিলো। কিন্তু সমস্যা পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠে ১৯৭০ সালের দিকে। আর বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষণা করার আগেই আরো অনেক অনেক মানুষ ভারতে পারি জমায়। সেই সময়েও অনেক অনেক শরণার্থী আশ্রয় নেয় ভারতে।
সর্বশেষ আসাম সরকার নাগরিকপঞ্জি তৈরি করা উদ্যোগ নেয়। সেখানে বলা হয়, যারা ২৪ মার্চ ১৯৭১ তারিখের আগে থেকে আসামে বসবাস করছে সেটা তাদের প্রমাণ করতে পারবে। আর প্রমাণ করতে না পারলে তারা নির্বাচনের অধিকার হারাবে এবং অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এরপর প্রকাশিত খসড়া তালিকায় চল্লিশ লাখের বেশি নাগরিককে অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এতে রাজ্যটির হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে অনেক খ্যাতিমান ব্যক্তিও বাদ পড়েন।