logo
আপডেট : ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ১১:০১
বিশ্বের ভয়ঙ্কর সব সড়ক
প্রথম বাংলাদেশ ডেস্ক

বিশ্বের ভয়ঙ্কর সব সড়ক

ছুটির অবসরে মনোহর স্থানে ছুটে যান ভ্রমণপিয়াসীরা। কেউ কেউ কিন্তু যেতে চান মহাসড়কে। লং ড্রাইভে গতির ঝড় তুলে জানালায় মাথা রেখে রাস্তা ধরে এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে আছে এক ধরনের উল্লাস। তবে বিশ্বের এমন কিছু রাস্তা রয়েছে যেগুলোতে অতি উৎসাহী লোকও খুব একটা যেতে চাইবেন না। ভয়ঙ্কর এই রাস্তাগুলো বিশ্বের সবচেয়ে অভিজ্ঞ চালকদেরও বিপদে ফেলে দেয়। ক্ষণে ক্ষণে মৃত্যুভীতির জন্ম দেয়। বিশ্বের এমন কিছু ভয়ঙ্কর সড়কের সন্ধান দিয়েছে জনপ্রিয় পত্রিকা রিডার্স ডাইজেস্ট। এই সময় পাঠকদের জন্য বিশ্বের ভয়ঙ্কর সেই রাস্তাগুলোর পরিচয় তুলে ধরা হলো

বিশ্বের সবচেয়ে ভিন্ন ধরনের রাস্তাগুলোর মধ্যে একটি আলাস্কার ড্যালটন হাইওয়ে। ১৯৭৪ সালে ট্রান্স-আলাস্কা পাইপলাইন ব্যবস্থা সরবরাহের জন্য রুট হিসেবে বরফের মধ্যে এই রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়। ৪১৩ মাইলের এই রুটে তিনটি শহর রয়েছে। যার একটি নাম ‘মৃত ঘোড়া’। জটিল বিষয় হলো- রাস্তার বেশিরভাগ অংশ ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে থাকে। আর এটি দীর্ঘ এবং অনেকটা সীমানাহীন রাস্তা, যা উত্তর আমেরিকা পর্যন্ত বিস্তৃত।

উপকূলে পাঁজরের মতো কংক্রিটের বাঁকানো পথটা দেখতে অনেক সুন্দর হলেও এটি নরওয়ের সবচেয়ে বিপজ্জনক রাস্তার একটি। রাস্তাটিতে যখন আপনি গাড়ি চালাবেন তখন মনে হবে যে, যেন রোলাকোস্টারে রয়েছেন। ধারালো বাঁক, বাঁকানো রেখা এবং পাক খাওয়া মোড়Ñ বিপদের সবই রয়েছে সেখানে। যখন আবহাওয়া খারাপ থাকে (এটি প্রায় সময়ই ঘটে) তখন এটি কিছু সময়ের জন্য কার্যত অদৃশ্য মনে হয়। কারণ প্রাচীরের ন্যায় ঘন জলের ঢেউ তাতে আছড়ে পড়ে, যা চালকদের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনে।

বলিভিয়ান পর্বতের পাশে সংকীর্ণ এই রাস্তাটি একসময় রাজধানী লাপাজে যাতায়াতের প্রধান পথ ছিল। যেটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু রাজধানী শহর। যদিও কর্তৃপক্ষ লাপাজে যাওয়ার নতুন রাস্তা তৈরি করেছে তবুও সাধারণ মানুষ এই রাস্তাটি ব্যবহার করে এবং এটি এখনো জনপ্রিয় পর্বতে বাইকিং স্পট। এই রাস্তায় চলতে গিয়ে বহু মানুষ নিচে পড়ে নিহত হয়েছে। অনেক অভিজ্ঞ ব্যক্তিও এই পথ পাড়ি দিতে গিয়ে নিজের জীবন খুইয়েছেন। ১২ হাজার ফুট নিচে নামা এই রাস্তা পাড়ি দিতে গিয়ে প্রতি বছর ২০০-৩০০ লোক প্রাণ হারায়।

বিশ্বের বিপজ্জনক সড়কগুলোর একটি চীনের গৌলিয়াং টানেল। দুর্গম পাহাড়ের ভেতর দিয়ে তিন-চার মাইল লম্বা এই টানেল ১৬ ফুট উঁচু এবং ১৩ মিটার চওড়া। এই রাস্তা পেতে হলে আপনাকে হেনান প্রদেশের তায়হ্যাং পর্বতে যেতে হবে। ১৯৭৭ সালে স্থানীয়রা এটি নির্মাণ করেন। এটি নির্মাণ করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী নিহত হয়েছে। টানেলের ফাঁকে ফাঁকে ৩০টি জানালার মতো ফাঁকা জায়গা রয়েছে। কিন্তু আপনি ভুল করেও সেখানে সেলফি তুলতে যাবেন না। শুরুতে গ্রামবাসী যাতায়াতের জন্য এটি নির্মাণ করলেও বর্তমানে এটি অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়দের জন্য জনপ্রিয় একটি স্থান।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাড়ে ১১ হাজার ফুট উঁচুতে অবস্থিত ৫ দশমিক ৬ মাইল এই হিমালয়ান হাইওয়েটি কাশ্মীর এবং লাদাখকে সংযুক্ত করেছে। এই অসম রাস্তাটি অফ রোড গাড়িগুলোর জন্য উপযুক্ত। ঠান্ডার মাসগুলোতে বাতাস, তুষার এবং বৃষ্টি রাস্তাটিকে মারাত্মক বিপজ্জনক করে তোলে। একটু এদিক-ওদিক হলেই অনেক নিচে পড়ে যেতে হবে আপনাকে। আর পাহাড় থেকে নিচে পড়ে যাওয়ার মাঝখানে আপনাকে রক্ষা করার মতো কিছুই নেই।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রকৌশলীরা পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে পথ কেটে বানিয়েছিলেন এই রাস্তা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক উপরে দুর্গম পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে ১৩০০ কিলোমিটারের এই পথ পশ্চিম চীনের কাশগরের সঙ্গে যুক্ত করেছে পাকিস্তানকে। ১৯৫৯ সালে শুরু হয়েছিল এই সড়ক তৈরির কাজ। খাড়া পাহাড় এবং দুর্গম পাহাড়ে কাজের কঠিন পরিবেশের মধ্যে এই পথ নির্মাণের কারণে কখনো কখনো একে বলা হয় বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্য। এই পাহাড়ের ৬০টি শৃঙ্গ আছে। এগুলোর উচ্চতা গড়ে প্রায় ৬ হাজার ৬০০ মিটার। এই পথ পাড়ি দিতে গিয়ে বহু চালক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
ক্যানিং স্টোক রুট, অস্ট্রেলিয়া

এই রাস্তা দেখতে অবশ্য খুব বেশি বিপজ্জনক মনে হয় না। তবে এই রাস্তাটিতে প্রচুর ধূলা রয়েছে, যা সত্যিই অনেক। যার কারণে রোড সাইনগুলো সঠিকভাবে দেখতে পাবেন না। ১ হাজার ১৫০ মাইল দীর্ঘ অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের এই রাস্তাকে বিশ্বের সবচেয়ে দূরবর্তী রাস্তা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। রাস্তাটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যেতে আপনাকে কমপক্ষে তিনদিন গাড়ি চালাতে হবে। উষ্ণতার দিনে এই রোডে গাড়ি চালানো অসম্ভব কাজ। আর চালকরা এই রাস্তায় চলাচলের জন্য অতিরিক্ত সুবিধাসম্পন্ন গাড়ি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। আর এই রাস্তার গাড়ি চালানোর শখ থাকলে অবশ্যই আপনাকে ঘর ছাড়ার আগে প্রয়োজনীয় খাবার, পানি এবং গাড়ি মেরামতের ছোটখাটো যন্ত্রপাতি সঙ্গে আনতে হবে।

এই উন্মুক্ত রাস্তাটি ১৪০ বছর আগে পাহাড় খোদাই করে তৈরি করা হয়েছিল। আজও তা অনেকটা সে রকমই রয়েছে। অভিজ্ঞ চালকদের জন্যও এটি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর রাস্তা। যদি রাস্তার মাঝে আপনার বিপরীতে কোনো গাড়ি আসে তাহলে তাকে সাইড দিতে হলে আপনাকে দুই কিলোমিটার পেছনে আসতে হবে। এই রাস্তাটি তৈরিতে শুধুমাত্র হস্তচালিত খোদাই যন্ত্র এবং পাহাড় ভাঙ্গার জন্য গানপাউডার ব্যবহার করা হয়েছিল। আর এটি শেষ করতে লেগেছিল ২০ বছর। অসম্ভব অসমতল এই রাস্তাটিতে ‘ইম্পসিবল ফলআউট’ এবং ‘লর্ড অব দ্য রিং’ সিনেমার শুটিং করা হয়েছিল।

মরক্কোর এটলাস পর্বতমালার পাশে অত্যন্ত সংকীর্ণ এবং অসম্ভব বাঁকানো রাস্তা হলো টিজি-এন-টেস্ট পাস। ১৯২০ সালে নির্মিত ভয়ঙ্কর এই রাস্তাটি মারাকেছ এবং সৌস প্লেইনসের মধ্যে সংযোগের ক্ষেত্রে প্রথম আধুনিক রাস্তা। আপনি যদি এই রাস্তা পাড়ি দিয়ে জীবিত ফিরে আসেন তবে এটিতে আর দ্বিতীয়বার যাওয়া থেকে বিরত থাকুন। আর দিনের আলোতেই শুধুমাত্র এই রাস্তা ব্যবহার করা উচিত। তবে অত্যন্ত বিপজ্জনক এই রাস্তাটি যদি আপনি পাড়ি দিতে পারেন তবে এটলাস পর্বতের মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য অবলোকন করতে পারবেন।


প্রকাশক/সম্পাদক: আবুল হারিস রিকাবদার
প্রকাশক ও সম্পাদক কর্তৃক প্রথম বাংলাদেশ/শিবপুর, নরসিংদী থেকে প্রকাশিত
ফোনঃ বার্তা-০১৭০০-০০০০০০, বিজ্ঞাপন-০১৯০০-০০০০০০, ই-মেইলঃ prothombangladeshnews@gmail.com