logo
আপডেট : ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ১১:২৩
সাহসী পাখি দুধরাজ
প্রথম বাংলাদেশ ডেস্ক

সাহসী পাখি দুধরাজ

বেশ কয়েক দিন চেষ্টা করার পর অবশেষে ক্যামেরাবন্দি করি দুঃসাহসী সুনয়না সাদা লেজ লম্বা পুরুষ পাখি দুধরাজ। এই পাখিটির স্ত্রী সঙ্গিনী লাল বাদামি হয়ে থাকে। লেজ পুরুষ পাখিটির চেয়ে ছোট, মুখমণ্ডল কালো এবং উভয়ের মাথায় রাজবেশী মুকুট চুল। নানাবিধ কারণে দিন দিন এই পাখির সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।

বাড়ির পাশে প্রতিবেশীর বাঁশঝাড়ে, নারিকেল গাছের এক বিশেষ স্থানে একটি বিরল প্রজাতির পেঁচা বসে আছে। আর সেই পেঁচাকে থেকে থেকে সাদা লম্বা লেজওয়ালা দুধরাজ পাখিটি ঠোকর মেরে আঘাত হানছে তার সীমানা ছেড়ে দিতে। পেঁচাও কিন্তু শিকারি পাখি। এই দৃশ্যটি আমার নজরে আসতেই তাড়াতাড়ি ক্যামেরা বের করে ছবি তোলার চেষ্টা চালাই। কিন্তু কিছুতেই সুবিধা করে ক্যামেরাবন্দি করতে পারছিলাম না। এভাবে দু দিন চেষ্টার পর তৃতীয় দিনে সফলতা পাই। পেঁচাকে আক্রমণের দৃশ্যসহ দুধরাজ পাখির বেশ কয়েকটি ছবি ক্যামেরাবন্দি করি।

দুধরাজ পাখিটি কমান্ডো স্টাইলে পেঁচাকে আঘাত করে বোঝানোর চেষ্টা করছে তার বাসার সীমানা ছেড়ে যাওয়ার জন্য। এ কারণেই পাখি বিশেষজ্ঞরা এই পাখিকে দুঃসাহসী পাখি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। স্ত্রী পাখিটি ডিম দেওয়ার পর বাসাটি সুরক্ষার দায়িত্ব পালন করে পুরুষ দুধরাজ। কড়া পাহারা বসায়। মা পাখিটি খাবার সংগ্রহে বাইরে গেলে পুরুষ দুধরাজ বাড়ি সামলায়। কখনো ডিমে তা দেয় এবং সর্বদা বাসার চারপাশ খেয়াল করে বাড়ির ত্রি-সীমানায় কোনো শিকারি পাখি যাতে আসতে না পারে। শুধু কি তাই! সাপ, বেজি, গুইসাপ, কাক, চিল এমনকি পোষা কুকুর, বিড়াল কাউকেই কাছে ঘেঁষতে দেয় না। এসব প্রাণী কাছে আসতেই একটি বিশেষ সুরে আওয়াজ করে ওদেরকে তাড়িয়ে দিতে চেষ্টা করে। অন্য নিরীহ পাখিরাও এই সুবিধা পাওয়ার জন্য দুধরাজ পাখির বাসার আশপাশে বাসা তৈরি করে থাকে।

অনেকটাই গেরিলা কৌশলে ওড়াউড়ি এদের। পছন্দ নিরিবিলি ছায়া বনবাগান। এছাড়াও সবচেয়ে বেশি পছন্দ বাঁশবন বা বাঁশমহাল। বাঁশের ঝুলন্ত কঞ্চিতে বাসা করতেও পছন্দ করে খুব। আম-কাঁঠাল গাছও পছন্দ। তবে বাসা করবে কিছুটা ঝুলন্ত সরু ডালে। বছর বছর একই এলাকায় বাসা বাঁধার প্রবণতা এদের প্রবল। বাসা করে বসন্ত ও বর্ষায়। বাসা বাঁধা শেষ করতে সময় লাগে চার থেকে সাত দিন। চারটি গোলাপি রঙের ডিম পেড়ে ১৫-২১ দিনের তায়ে ছানা ফোটায় এরা। মূল খাদ্য এদের উড়ন্ত কীটপতঙ্গ, লার্ভা ও ফুলের নির্যাস। সুযোগ পেলে তাল-খেঁজুরের রসও পান করে। পুরুষ ছানারা দু-তিন বছর পর্যন্ত লালচে বা লালচে-বাদামি থাকে, তারপর একেবারে দুধসাদা রঙের হয়ে যায়। মেয়ে ছানারা সারা জীবনই লালচে বাদামি থাকে, তার লেজে ফিতাপালক থাকে না। পুরুষটি বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর পাখি। সুদৃশ্য লম্বা লেজ দুটি এদের শরীরের তুলনায় চার-পাঁচ গুণ বড়। বাতাসে এই সুদৃশ্য লেজ-ফিতা যখন দোলে, তখন নান্দনিক সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়।

দেশজুড়ে এদের দেখতে পাওয়া যায়। তবে চালচলনে লুকোছাপা থাকার কারণে মানুষের নজরে পড়ে না সহজে। চতুর-সাহসী-বুদ্ধিমান ও তুখোড় প্রেমিক এই পাখিদের নাম দুধরাজ। মেয়ে পাখিটির হলো দুধরানী। দুধরানীর যেকোনো বিপদে দুধরাজ অন্যরকম আহাজারি করে ক্রন্দন করে। লেজঝোলা, সাদা সিপাহি, লাল সিপাহি ও সাহেব বুলবুলি নামেও পরিচিত এরা। ইংরেজি নাম Asian Paradise Flycatcher. বৈজ্ঞানিক নাম Terpsiphone Paradise. এই পাখির লেজসহ দৈর্ঘ্য ২০ সেন্টিমিটার, ওজন ২০ গ্রাম।


প্রকাশক/সম্পাদক: আবুল হারিস রিকাবদার
প্রকাশক ও সম্পাদক কর্তৃক প্রথম বাংলাদেশ/শিবপুর, নরসিংদী থেকে প্রকাশিত
ফোনঃ বার্তা-০১৭০০-০০০০০০, বিজ্ঞাপন-০১৯০০-০০০০০০, ই-মেইলঃ prothombangladeshnews@gmail.com