logo
আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ১৭:০১
ভিআইপিসহ তিনশ ফোন নম্বর শনাক্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক

ভিআইপিসহ তিনশ ফোন নম্বর শনাক্ত

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত ৩০০ মোবাইল ও টেলিফোন নম্বর শনাক্ত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যে রয়েছেন পরীক্ষার্থী, অভিভাবক, মেডিক্যাল ও প্রকৌশলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। এগুলো ধরেই গ্রেপ্তার অভিযানে নেমেছে পুলিশ। গতকাল বিকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে ‘প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগসংক্রান্ত তথ্য যাচাই-বাছাই কমিটি’র প্রথম সভায় এ তথ্য উঠে এসেছে। নম্বরগুলোর মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নম্বরও পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে ঘোষণা দিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও র্যাব। কিন্তু এর মধ্যেও ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’ বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়।

 

বৈঠক শেষে কমিটি প্রধান এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর বলেন, আমাদের দায়িত্ব প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে যে অভিযোগ এসেছে, সেগুলো নিয়ে কাজ করা। এ পর্যন্ত তিনশ টেলিফোন নম্বর চিহ্নিতর পর তা ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। ফেসবুক ও টেলিফোনে প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীরাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। এ নম্বরধারীদের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীÑ যারা মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্সে পড়েন। এদের অভিভাবকরাও এর সঙ্গে আছেন। এদের বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযানে নেমেছে। ইতোমধ্যে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরও করা হবে। শুধু গ্রেপ্তারই নয়, এদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা। এমনও হতে পারে তারা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে, সেখান থেকেও বহিষ্কার হবে।

 

প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে কমিটিপ্রধান বলেন, মিডিয়ায় যেসব তথ্যপ্রমাণ এসেছে, সেগুলো দেখে পর্যালোচনা করা হবে। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের দায়িত্বও ভাগাভাগি করে নেওয়া হয়েছে। আসলেই প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে কিনা, হলেও কতক্ষণ আগে হয়েছে, তার প্রভাবটা কী, কতজন ছাত্রছাত্রী এটির মধ্য দিয়ে প্রভাবিত হয়েছে, পরীক্ষা বাতিল করা হবে কিনা, বাতিল করা হলে কতজন ক্ষতিগ্রস্ত হবেÑ এসব বিবেচনা করা হবে।

 

তিনি আরও বলেন, দেখা যাচ্ছে যে প্রশ্নপত্র পেয়েছে ৫ থেকে ১০ মিনিট আগে। তখন ওই প্রশ্ন পেয়ে তো বেশি প্রভাব পড়ার সুযোগ নেই। আবার বেশ আগে ফাঁস হলেও ৫ বা ১০ হাজার ছেলেমেয়ে পেয়েছে। কিন্তু পরীক্ষা দিয়েছে ২০ লাখের বেশি। এ বিষয়গুলোও বিবেচনায় নিয়ে সুপারিশ করা হবে। এর পর সিদ্ধান্ত নেবে কর্তৃপক্ষ (মন্ত্রণালয়)।

 

এদিকে গতকাল দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন। তিনি বলেন, এসএসসি পরীক্ষা শুরুর আগে একটি চক্র ফেসবুকে চ্যালেঞ্জ করেÑ তারা এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করবেই এবং কেউ তাদের ধরতে পারবে না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে ওই চক্রের ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরা পরীক্ষা শুরুর কিছুদিন আগে ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসআপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গ্রুপ পেজ ওপেন করত। এসব গ্রুপে একাধিক শিক্ষার্থীকে অ্যাড করত। তারা বিভিন্ন ফেক প্রশ্নপত্রের সেট ছেড়ে পরীক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করে। পরে তা বিকাশ বা রকেটের মাধ্যমে ৫০০ থেকে ২০০০ টাকায় বিক্রি করত।

 

তিনি অবশ্য জানান, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় এটা ঠিক। তবে এটা হয় পরীক্ষা শুরুর ঠিক ১৫ থেকে ৩০ মিনিট পূর্বে। কারণ প্রশ্নপত্রের সিলগালা করা প্যাকেটটি খোলা হয় পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগেই। কেন্দ্রে প্যাকেট খোলার পর হলে নেওয়ার পথে কুচক্রের কোনো কোনো সদস্য গোপনে মোবাইল বা অন্য কোনো ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্নপত্রের বিভিন্ন সেটের স্ক্রিন শট নেয়। এর পর তা ফেসবুক বা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। এতে অবশ্য শিক্ষার্থীরা কোনো লাভবান হয় না। কারণ পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগেই হলে প্রবেশ করে। তাদের কাছে তখন কোনো মোবাইল বা অন্য ডিভাইস না থাকায় তা পৌঁছানোও সম্ভব নয়।

 

পুলিশ ও র্যাব বলছে, গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে প্রশ্নফাঁসে ব্যবহƒত বিভিন্ন ডিভাইস, ২৩টি মোবাইল সেট ও ২ লাখ ২ হাজার ৪০০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার আমান উল্লাহ, বরকত উল্লাহ ও আহসান উল্লাহ তিন ভাই। প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের অন্যতম এই ‘উল্লাহ বাহিনী’।

 

র্যাব-২ জানায়, শনিবার রাতে পূর্ব রাজাবাজার এলাকার আরবিএন হোস্টেল থেকে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের মূলহোতা আনিছুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞসাবাদে জানান, তিনি ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র।

 

এ ছাড়াও এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে আটক করা হয়েছে ১৮ জনকে। গতকাল রবিবার ও আগের দিন শনিবার রাতে তাদের আটক করা হয়।
ইন্টারনেট বন্ধের আগেই আইসিটি প্রশ্ন ফাঁস : বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী পরীক্ষার সময় মোবাইলে ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হলেও তার আগেই মেসেঞ্জারে চলে আসে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন। এসএসসিতে গতকাল ছিল ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’ বিষয়ের পরীক্ষা। সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগে অর্থাৎ ৮টা ৫৯ মিনিটে ‘যবষঢ়রহম যধহফ’ নামে একটি মেসেঞ্জার গ্রুপ থেকে উত্তরসহ ‘গ’ সেটের বহুনির্বাচনি প্রশ্ন দেওয়া হয়। আধা ঘণ্টার মধ্যে ওই একই প্রশ্ন ও উত্তরের ছবি বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজে ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাল হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে পরীক্ষায় আসা প্রশ্ন হুবহু মিলেও যায়।

প্রকাশক/সম্পাদক: আবুল হারিস রিকাবদার
প্রকাশক ও সম্পাদক কর্তৃক প্রথম বাংলাদেশ/শিবপুর, নরসিংদী থেকে প্রকাশিত
ফোনঃ বার্তা-০১৭০০-০০০০০০, বিজ্ঞাপন-০১৯০০-০০০০০০, ই-মেইলঃ prothombangladeshnews@gmail.com