নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে ভূমধ্যসাগরের ভয়াবহ পথ পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাওয়ার পথে নৌকাডুবির ঘটনা গত কয়েক বছরের নিয়মিত দৃশ্য। সম্প্রতি এমন একটি ঘটনায় লিবিয়ার কোস্ট গার্ডের উদ্ধারকারী একটি জাহাজের দিকে সাতার কেটে আসছিলেন কয়েকজন। তাদের সাহস যোগাচ্ছিলেন জাহাজে থাকা কোস্ট গার্ডের সদস্যরা। এই যাত্রায় তিনজন বেঁচে গেছেন। একজনকে অজ্ঞান অবস্থায় জাহাজে তুলে কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাস দিতে হয়েছে।
এমন ঘটনা সম্পর্কে লিবিয়ার কোস্ট গার্ড এর হেড অফ অপারেশন্স কর্নেল আবু আবদেল বারি জানান যে, তারা কঠিন সময় পার করছেন।
তিনি বলেন, 'আমরা ভয়াবহ সব অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। চোখের সামনে অভিবাসীদের নৌকা ডুবে যাচ্ছে। এমনও দেখেছি মায়ের পাশেই তার মৃত শিশুর মরদেহ ভাসছে'।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের কড়াকড়ির কারণে কাছাকাছি সময়ে সমুদ্র পথে ইউরোপে যাওয়া অভিবাসীর সংখ্যা কমেছে। কিন্তু সমুদ্রে নৌকা ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা বলছে এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত এমন অভিবাসীদের প্রতি ১৮ জনের অন্তত একজন ডুবে মারা গেছেন অথবা নিখোঁজ হয়েছেন।
যা ২০১৭ সালে ছিল প্রতি ৪২ জনে একজন। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে লিবিয়া হয়ে ইউরোপে যাওয়ার পথ যেন আগের থেকে আরো অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
কারণ সমুদ্র পথে আসা এসব অভিবাসীদের সহায়তা দিয়ে থাকে এমন উদ্ধারকারী সংস্থার উপর ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এমনকি এমন সংস্থার জাহাজের নিবন্ধন পর্যন্ত বাতিল করা হচ্ছে।
লিবিয়ার কোস্ট গার্ড বলছে এসব উদ্ধারকারী সংস্থার কার্যক্রম অভিবাসীদের বরং উৎসাহিত করে। কর্নেল আবু আবদেলবারি জানান, তাদের উদ্দেশ্য পাচারকারীদের ঠেকানো।
তিনি বলেন, 'যেসব অভিবাসীরা একটা ভালো জীবনের খোঁজে রয়েছেন আমরা তো তাদের বিরুদ্ধে কিছু করছি না। আমরা কাজ করছি পাচারকারীদের বিরুদ্ধে। যারা টাকা পয়সা নিয়ে এসব লোকজনের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। মানুষগুলো পরে বাঁচল না মরে গেল তা নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যথা নেই'।
যেসব অভিবাসীদের উদ্ধার করা হয় তাদের আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় লিবিয়ার ডিটেনশন সেন্টারে। জাতিসংঘ বলছে সেখানে ভয়াবহ পরিবেশে এসব অভিবাসীদের আটকে রাখা হচ্ছে। অভিবাসীদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন যে তাদের আটকে রেখে মারধর করা হয়েছে।
এমন কয়েকজন অভিবাসীদের পাওয়া গেছে যাদের কেন্দ্রের রক্ষীরা ত্রিপলিতে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের সময় তাদের রেখে পালিয়ে গেছে। তাদের একজন বলেন, 'কোন প্রকার খাবার বা নিরাপত্তা ছাড়াই ওরা আমাদের রেখে চলে গেছে। সেখানে ঐভাবে আমরা ২২ দিন ছিলাম'।
আর উদ্ধার হওয়ার পর যারা আটক হন তাদের অনেকের ইউরোপ যাত্রা সেখানেই শেষ হয়ে যায়। তাদের অনেকেই মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফিরলেও সব খুইয়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতাকে সাথে নিয়ে আবার দেশেই ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন।