বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ফাঁসাতে আদালতের রায় পাল্টানোর জন্য বন্দুকের নলের মুখে প্রাণনাশ আর লাশ গুমের হুমকি দেওয়া হয়েছিল ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর সাবেক বিচারক মোতাহার হোসেনকে। এমনকি রায় কি পড়া হবে তাও লিখে দিয়েছিলেন আইন সচিব জহিরুল হক দুলাল।
সম্প্রতি বিদেশি একটি গণমাধ্যমকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বিচারক মোতাহার হোসেন নিন্ম আদালতে বিচারের রায় দেওয়া প্রসঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে এসব কথা বলেন।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা বিদেশে অর্থপাচার সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করেন বিচারক মোতাহার। কোনো অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় রায়ে তিনি তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দিয়েছিলেন।
আদালতে ন্যায় বিচারের অনুপস্থিতি, যেকোনো রায় চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে সরকার দ্বারা তা লিখে দেওয়া, প্রাণনাশের ভয়ে দেশ থেকে পালিয়ে আসাসহ নানান প্রসঙ্গে কথা বলেন প্রাক্তন এই বিচারক।
অর্থ পাচার মামলায় তারেক রহমানের বিপক্ষে করা অভিযোগের কোনো তত্ত্ব-প্রমাণ ছিলোনা উল্লেখ করে মোতাহার হোসেন বলেন, “রাজনৈতিক একজন ব্যক্তিকে কিভাবে ফাঁসানো যায়, এই কারণেই এই মামলায় তারেক রহমানকে জড়ানো। এই কারণে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে চার্জশিটে যে সমস্ত বক্তব্য এসেছে, জবানবন্দি এসেছে, যে সমস্ত তথ্য এসেছে তাতে তারেক রহমানের নাম ওখানে কোথাও সঠিকভাবে জড়াইতে পারে নাই। তারপরও তাকে আসামির কলামে নাম দিয়ে মামলায় পরবর্তীকালে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দিয়ে তাকে অভিযুক্ত করে এ মামলায় চার্জশিট দাখিল করে।”
তিনি বলেন, “আমার পূর্ববর্তী জজ সাহেব মামলার নথি পর্যালোচনা করে প্রথমে চার্জ গঠন করেন কিন্তু উনি, উনার পরে পরবর্তীকালে আমি স্পেশাল জজ কোর্টে অর্থাৎ ওই আদালতে বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হই। আমি বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পরে মামলার নথি আমি বিশদভাবে স্টাডি করি। স্টাডি করে দেখি তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, সেই অভিযোগে তার বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ নেই। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মতো পর্যাপ্ত উপাদানই নেই। এরপরও যেহেতু চার্জ গঠিত হয়ে গিয়েছে এই কারণে আমাকে বিচার করতে হবে। আমি বিচার কন্টিনিউ করি। সাক্ষী-সাবদ গ্রহণ করি। আসামির বিরুদ্ধে তো কোনো এভিডেন্স নেই। এভিডেন্স হলো জিরো। একজন সাক্ষীও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে তার নামই উচ্চারণ করে নাই। কোনো অভিযোগ দেয় নাই। সেই মামলা কি করে একজন আসামিকে কিভাবে কনভিকশন দেওয়া যায়? একজন আসামিকে, একজন ব্যক্তিকে, উনি যেই হোন শাস্তি দেয়ার বিধান তো আমাদের দেশের প্রচলিত আইন পারমিট করে না।”
দোষ না থাকার পরও বিদেশে অর্থ পাচার মামলার রায়ে যেনো তারেক রহমানকে সাজা দেওয়া হয় সে জন্য আইন সচিব দুলাল বিচারক মোতাহারকে একের পর এক চাপ দিতে থাকেন, তাতে যোগ দেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকও। সে প্রসঙ্গে প্রাক্তন বিচারক মোতাহার বলেন, “আমার কাছ থেকে এই তথ্যটা যখন আইন সচিব দুলাল পেলেন, তখন উনি নানাভাবে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে আমার পেছনে লেলিয়ে দিলেন। দফায় দফায় আমাকে, আইন প্রতিমন্ত্রীকে দিয়ে প্রেসার ক্রিয়েট করতে থাকে এবং ডিজিএফআই আমার পেছনে লেলিয়ে দিলো। আইন সচিব দুলাল আমাকে সাথে করে নিয়ে, যেহেতু তার কথায় আমি রাজি হলাম না, তখন আমাকে ধরে নিয়ে যায় ডিজিএফআই কেন্দ্রে। আইন সচিব দুলালও সঙ্গে ছিলো। নিয়ে গেল সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের বাসায়। খায়রুল হক সাহেবকে দিয়ে আমাকে আবার প্রেসার ক্রিয়েট করালো। মামলাটা দ্রুত বিচার করে শাস্তি দেয়ার জন্য। স্টেপ দিতে হবে। আমি বললাম যে, স্যার এটা আমি আইনানুগভাবে দেখছি। আমি যত যতদুর সম্ভব, এটা দ্রুত বিচারই হবে। আমি আইনানুগভাবে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করছি। কিন্তু উনি আমাকে খুব প্রেসার দিতে থাকে (এবিএম খায়রুল হক, বর্তমান চেয়ারম্যান ল কমিশন)। আমার কাছ থেকে স্পষ্ট কথা খায়রুল হক সাহেবের কাছ থেকে নিতে পারেন। আমি বলেছি আইনানুগভাবে বিচার হবে।”