logo
আপডেট : ১৩ অক্টোবর, ২০১৮ ১৬:০৩
এরিয়া ৫১ এর পিছনে রহস্যটা আসলে কি???
প্রথম বাংলাদেশ ডেস্ক

এরিয়া ৫১ এর পিছনে রহস্যটা আসলে কি???

 

এরিয়া ৫১ পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত গোপন জায়গা। এ নিয়ে মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই, কৌতুহলটা খানিকটা বেশিই বরং। যুগের পর যুগ যে জায়গাটি কাটিয়ে দিচ্ছে চরম মাত্রার গোপনীয়তায়, তা নিয়ে কৌতুহল থাকাই তো স্বাভাবিক!

কোয়ায় অবস্থিত এরিয়া ৫১

লাস ভেগাস থেকে ১০০ মাইলেরও কম দূরত্বে অবস্থিত নেভাডা টেস্ট সাইট (NTS)। এই NTS-এ পারমানবিক বোমার পরীক্ষা চালায় এটমিক এনার্জি কমিশন। সব কিছুই তো রৌদ্রজ্জ্বল দিনের মতো পরিষ্কার, তাহলে গোপনীয়তা কোথায়? না, অবশ্যই উল্লেখ্য জায়গাটি NTS নয়; দুনিয়ার সবচেয়ে বিখ্যাত গোপন জায়গাটি হলো এই NTS-এর সীমানা ঘেঁষে অবস্থিত এরিয়া ৫১। এই এরিয়া ৫১ নামকরণের অনেক তত্ত্ব রয়েছে, তার মধ্যে একটি NTS সাথে জড়িয়ে। NTS বিভিন্ন বর্গাকৃতি অংশে বিভক্ত, যেগুলোকে নামকরণ করা হয় ১ থেকে ৩০ নম্বর দিয়ে। NTS এর এরিয়া ১৫-এর সাথে সীমানা রয়েছে এরিয়া ৫১-এর। মনে করা হয় এই এরিয়া ১৫ এর ১ ও ৫ কে অদল-বদল করে নামকরণটি করা হয়েছে। জায়গাটির অফিশিয়াল নামগুলো আজও গোপনই রয়ে গেছে, তবে এরিয়া ৫১ ছাড়াও আরো অনেক নামেই অবিহিত করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের গোপন এই সামরিক স্থাপনাটিকে।

কখন প্রথম নজরে আসে

গোপন এই জায়গাটি গোটা দুনিয়ার নজরের বাইরে ছিল প্রায় কয়েক যুগ। সর্বপ্রথম ১৯৮৮ সালে একটি সোভিয়েত স্যাটেলাইট ছবি তুলে এরিয়া ৫১-এর। এরপর বিভিন্ন পাবলিকেশন এসব ছবি প্রকাশ করে দিলে বের হয়ে আসে থলের বিড়াল। শুধু স্যাটেলাইটের ছবিটুকুই প্রকাশিত হওয়া পর্যন্তই, এরিয়া ৫১-এর গোপনীয়তায় ছেদ পড়েনি বলতে গেলে এতটুকুও। স্যাটেলাইটে জায়গাটির অস্তিত্ব নিশ্চিত হওয়ার পর অনেক রকমের তত্ত্ব, মতবাদ, গুজব, কল্পকথা, রহস্যময়তা, রহস্যময় যান ও অ্যালিয়েন প্রযুক্তি ইত্যাদি নিয়ে নানান কিছু উঠে আসতে থাকে। এত কিছুর মধ্যে আপনি হয়ত খেই হারিয়ে ফেলবেন কোনটি কল্পনা ও কোনটি সত্য! কী হয় এরিয়া ৫১-এ? কেন ১৯৯০ সালের আগ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সরকার স্বীকার করেনি জায়গাটির অস্তিত্ব? কেন এরিয়া ৫১-এর উপর দিয়ে বিমান চলাচল নিষিদ্ধ, এমনকি তাদের নিজস্ব সামরিক বিমানও? এরিয়া ৫১ নিয়ে হাজারটা প্রশ্নের লক্ষ কোটি উত্তর হতে পারে; কোনটি সত্য কোনটি মিথ্যা তা যাচাই করা কতটা সম্ভব, বলা মুশকিল। তবে এখানে কিছু জনপ্রিয় তত্ত্ব তুলে ধরছি, যা সম্পূর্ণ নিজ দায়িত্বে যাচাই করবেন!আজকে এই এরিয়া ৫১-এর অবস্থান সবার জ্ঞানের সীমার ভিতরে চলে আসলেও একটা সময় ছিল যখন এর অবস্থান একেবারেই অজানা ছিল সবার কাছে। মানচিত্রের কোথাও উল্লেখ ছিল না এরিয়া ৫১-এর, স্থাপনাটি নেলিস এয়ারফোর্স বেসের সীমার মধ্যেও পড়লেও মানচিত্রের কোথাও কোন রাস্তার উল্লেখ ছিলনা। দুর্গম অঞ্চলে অবস্থিত বলে লোক চোখের অন্তরালে রাখা বেশ সহজ কাজ ছিল। পুরো এরিয়া ৫১ অঞ্চলটি ঘিরে রয়েছে হাজার হাজার একরের মরুভূমি, যা অতি আগ্রহীদের উঁকিঝুঁকি থেকে সহজেই আড়াল করে রাখতে পারে। আপনি যদি আগ্রহী হয়ে থাকেন জায়গাটিতে যাওয়ার ব্যাপারে, তবে এরিয়া ৫১ এক ঝলক দেখতে পাবেন সবচেয়ে কাছ থেকে- সেই জায়গাটিও প্রায় ২৬ মাইল দূরের টিকাবু চূড়া থেকে! এরিয়া ৫১-এর সীমানায় কোন বেড়া নেই, তবে কমলা রঙের পোল ও সতর্কবার্তা দেওয়া রয়েছে; যেখানে বলা রয়েছে প্রবেশ নিষিদ্ধ, ছবি তোলা নিষেধ এবং প্রবেশ করলে জরিমানা গুনতে হবে। সতর্কবার্তায় আরো বলা থাকে যে, কর্তৃপক্ষ অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ফোর্স ব্যবহার করতে পারে, যারা আপনাকে গুলি করতেও দ্বিধা করবে না! গুজব রয়েছে অনেক সত্যান্বেষীই মারা গিয়েছে এরিয়া ৫১-এর সীমানায়। তবে বেশিরভাগ বিশ্বাস করে অনুপ্রবেশকারীদের সাথে এতটা নির্মম হয় না এরিয়া ৫১ কর্তৃপক্ষ।

কঠোর গোপনীয়তা

নিজেদের গোপনীয়তা রক্ষায় এরিয়া ৫১-এর সীমানাজুড়ে রয়েছে অসংখ্যা সেন্সর যা সহজেই মানুষ ও প্রাণী যে কোন অনুপ্রবেশকারী সনাক্ত করতে পারে। তাছাড়া সীমানাজুড়ে পাহাড়া দেয় Wackehunt বা EG&G এর গার্ডরা, যাদের নির্দেশ দেওয়া থাকে লোকের সাথে সরাসরি কথোপকথনে না জড়াতে এবং নিজেদেরাও যেন কৌতুহলী দর্শনার্থীর ভূমিকায় অবতীর্ণ থাকে। এদেরকে ‘Cammo dudes’ ডাকা হয় কারণ এরা মরুভূমির ক্যামোফ্ল্যাজে থাকে।আগেই বলেছি এরিয়া ৫১-এর একটি সীমানা রয়েছে NTS এর সাথে, এটি পশ্চিম দিকে; শুষ্ক গ্রুম লেকের কোল ঘেঁষে রয়েছে অন্য সীমানা। এবং এরিয়া ৫১-এর উত্তরে সবচেয়ে কাছের শহরটি র‍্যাচেল প্রায় ২৫ দূরে অবস্থিত। প্রায় ৯০,০০০ একর জায়গা নিয়ে গঠিত এরিয়া ৫১। বিশাল এই এলাকা নিয়ে গঠিত অঞ্চলটিতে ঠিক কি রয়েছে জানা যায় না, তবে বলা হয় বিশাল এই অংশের আপনি যা দেখেন বা শুনেন তা এর সত্যিকার অবকাঠামোর অতি ক্ষুদ্র একটি অংশ। অনেকেই বিশ্বাস করেন মাটির নিচে আরো প্রায় ৪০ তলা পর্যন্ত অবকাঠামো রয়েছে, আরো রয়েছে গোপন রেল লাইন যা লস অ্যালামস, হোয়াইট স্যান্ডস এবং লস এঞ্জেলেসের অন্যান্য গোপন অঞ্চলের সাথে যুক্ত! বিপুল এই অবকাঠামো নির্মান কিন্তু সহজ কথা নয়, ব্যাপক এই কর্মযজ্ঞের জন্যে টন টন মাটি সরাতে হতো, বিপুল পরিমানের কংক্রিট ও নির্মানসামগ্রীর প্রয়োজন ছিল, আরো দরকার ছিল ব্যাপক লোকবল। তবে এমন কোন কর্মযজ্ঞ কেউ কোন দিন দেখেছে বলে শোনা যায়নি। যতটুকু জানা যায় এরিয়া ৫১-এ রয়েছে একটি হ্যাঙার, একটি নিরাপত্তা কর্মীদের আবাসস্থল, কিছু রাডার অ্যান্টেনা, কিছু বিল্ডিং, অফিস, রানওয়ে এবং আশ্রয়স্থল! এই আশ্রয়স্থলগুলো বিশেষভাবে তৈরি যেন ভেতরের যেকোন উড়োযান কিংবা গবেষণাধীন উড়োযানগুলো স্যাটেলাইটের দৃষ্টি এড়িয়ে লুকিয়ে থাকতে পারে।

 

কতটা গোপন এরিয়া ৫১ অঞ্চল? এরিয়া ৫১ আকাশসীমা R-4808 নামে পরিচিত এবং এই সীমা সব ধরণের বানিজ্যিক ও সামরিক বিমানের জন্যে নিষিদ্ধ, যা এরিয়া ৫১ থেকে উড্ডয়ন করেনি। ধারণা করা হয় এরিয়া ৫১ ক্যালিফোর্নিয়ার এডওয়ার্ড এয়ারফোর্স বেস বা নেলিস এয়ারফোর্স রেঞ্জের অংশ, কিন্তু এসব ঘাঁটির বিমানও এই R-4808 এর মধ্য দিয়ে চলাচল করতে পারবে না। এই অঞ্চল দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিমান পাইলট উড়িয়ে নিয়ে গেলে তা ভয়াবহ রকমের অপরাধ হিসেবে গন্য করা হয়, এক্ষেত্রে ঐ পাইলটকে কোর্ট মার্শাল, জেল এবং বহিষ্কার করা হতে পারে। R-4808 প্রথমে বিস্তৃত ছিল আকাশের উপরের দিকে প্রায় ৫ থেকে ৯ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল, এরপর এটি বিস্তৃত করা হয় ২০ থেকে ২২ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত। এই বিশাল বিস্তৃত নিষিদ্ধ অঞ্চলের জন্যেই Area 51 এর আরেক নাম The Box. অঞ্চলটির গোপনীয়তা এতটা যে একই সময়ে ও একই প্রজেক্টে কাজ ভিন্ন ভিন্ন লোকেরা জানে না যে তারা একই রকমের কাজের সাথে যুক্ত কিংবা এক বিল্ডিংয়ের লোকেরা জানে না অন্য বিল্ডিংয়ে কী হচ্ছে!

কী ধরণের কাজ করা হয় এই ঘাঁটির ভেতরে? যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর ভাষ্যমতে এরিয়া ৫১-এর উদ্দেশ্য প্রযুক্তির সক্ষমতা যাচাই এবং বিভিন্ন কঠিন অপারেশনের প্রশিক্ষণ, যা ইউএস সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এরিয়া ৫১-এর ভেতরের সবকিছুই একেবারেই গোপন। সিআইএ, বিমান বাহিনী এবং লকহিড এটিকে ব্যবহার করে বিভিন্ন পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের জন্যে, গোপন বিমান তৈরি, নতুন প্রযুক্তির পরীক্ষা ও উন্নয়ন ইত্যাদি নানাবিধ কাজে যার সবকিছুই চূড়ান্ত পর্যায়ের ক্লাসিফাইড।

 

 


প্রকাশক/সম্পাদক: আবুল হারিস রিকাবদার
প্রকাশক ও সম্পাদক কর্তৃক প্রথম বাংলাদেশ/শিবপুর, নরসিংদী থেকে প্রকাশিত
ফোনঃ বার্তা-০১৭০০-০০০০০০, বিজ্ঞাপন-০১৯০০-০০০০০০, ই-মেইলঃ prothombangladeshnews@gmail.com