ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) বিষয়ে দ্রুত কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বুধবার সংসদে জাতীয় পার্টির এমপি ফখরুল ইমামের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্বগ্রহণের পর শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়নের লক্ষ্যে সারাদেশে ১ হাজার ৬২৪টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। অবশিষ্ট ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে এমপিওভুক্ত করার জন্য ইতোমধ্যে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো এবং এমপিও নীতিমালা ২০১৮ জারি করা হয়েছে। এই নীতিমালা অনুসরণ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) বিষয়ে দ্রুত কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। এ লক্ষ্যে অনলাইন অ্যাপলিকেশন গ্রহণ এবং ব্যবস্থাপনা ও বিধি মতে প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের জন্য পৃথক দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে মো. নুরুল ইসলাম ওমরের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের কল্যাণে কাজ করছে। বেসরকারি শিক্ষকরাও এর বাইরে নয়। এসব শিক্ষক-কর্মচারীদের কল্যাণে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বেতন পাচ্ছেন ১০০ ভাগ, স্কুল ও কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে মাদরাসা শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদার সমতা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং শিক্ষা কার্যক্রমে গতিশীলতা ও স্বচ্ছতা আনয়নের জন্য ২০১৫ সালের জুলাই থেকে এমপিও কার্যক্রমের বিকেন্দ্রীকরণ ও এবং অনলাইন ভিত্তিক করা হয়েছে। এছাড়া ইবতেদায়ী শিক্ষকদের বেতন প্রতি মাসে ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে এ পর্যন্ত দেশের মোট ১৪২টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ৪০টি বেসরকারি কলেজ সরকারি করা হয়েছে। আর যেসব উপজেলায় কোন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজ নেই সেখানে একটি করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং একটি কলেজ সরকারিকরণের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে সরকারের। এ কার্যক্রমের আওতায় আরও ১৭৯টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ২৯৮টি কলেজ সরকারিকরণের কার্যক্রম চলছে।
অপরদিকে জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমামের সমপ্রতি বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও জাতিসংঘের মহাসচিবের বাংলাদেশ সফর প্রসঙ্গে উত্থাপিত সম্পূরক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ গত ৯ বছরে যে উন্নয়ন করেছে তাতে বিশ্ব আজ বিস্মিত। আর এ উন্নয়ন দেখতেই জাতিসংঘের মহাসচিব ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমাদের দেশে অনেকেই আসছে। এর একটা কারণ বাংলাদেশ মাত্র ৯ বছরের মধ্যে যে উন্নয়ন করেছে সেই উন্নয়নে বিশ্ব আজ বিস্মিত। যেহেতু উন্নয়নের ধারাটা এতো দ্রুত গতিতে এগিয়ে গেছে। আমাকে অনেকে জিজ্ঞেস করেন এর ম্যাজিকটা কি? ম্যাজিক কিছুই না। আমি দেশকে ভালবাসি, মানুষকে ভালবাসি, মানুষের কল্যাণে কাজ করি। সেটাই কারণ। জাতির পিতা যে স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন সেটা বাস্তবায়ন করাই আমার উদ্দেশ্যে।
সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি নুরজাহান বেগমের প্রশ্নে জবাবে সংসদ নেতা বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মুসলিম জনগোষ্ঠী তথা রোহিঙ্গাদের প্রতি দীর্ঘদিন ধরে বিরাজমান রাজনৈতিক ও অথনৈতিক বৈষম্য এবং মিয়ারমার সেনাবাহিনী ও স্থানীয় রাখাইন কমিউনিটির অত্যাচার নির্যাতনের পরিপ্রেক্ষিতে শরণার্থী হিসাবে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। গত বছরের ২৫ আগস্ট মিয়ারমান জান্তা সরকারের সামরিক বাহিনীর পরিচালিত নির্মম অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ৭ লাখ বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। এত অল্প সময়ে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের আগমনে দেশের আর্থ-সামাজিক ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর ওই নিজ দেশীয় বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে আরো ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা এখানে আশ্রয় নেয়। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ। এসব রোহিঙ্গাদের সম্পূর্ণ মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছি। আমাদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তাদের সকল মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য সর্বপ্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য গত ১-২ জুলাই’১৮ তারিখে জাতিসংঘের মহাসচিব অন্তোনিও গুতেরেস এবং বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বাংলাদেশে আসেন। এ সময় রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শন করার জন্য কক্সবাজার সফর করেন। আমি জাতিসংঘের মহাসচিব ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি অনুরোধ জানায়। মানবিক সহায়তা এবং রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের পাশাপাশি আন্তজার্তিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের উপর সংঘটিত জঘন্যতম অপরাধের দায় নিরুপণ এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। বিভিন্ন রাষ্ট্র এবং আন্তজার্তিক সম্প্রদায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ আইনের আওতায় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মিয়ানমার সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করছে।
তিনি বলেন, এসব উদ্যোগের পাশাপাশি আমরা দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বাস্তবায়নে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। এ বছর জুনে রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবর্তনে জাতিসংঘের শরণার্থি বিষয়ক হাইকমিশনার এবং ইউএনডিপি একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এ সমঝোতা স্মারক বাস্তবায়ন হলে রোহিঙ্গাদের নিজ মাতৃভূমিতে নিরাপদ, সম্মানজনক ও টেকসই প্রত্যাবর্তন করার সম্ভব হবে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষার্থে কক্সবাজার জেলা ও আশ্রয় শিবির এলাকায় পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রয়েছে।