logo
আপডেট : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ১১:১৬
জামায়াত নিষিদ্ধে আদালতের রায় পর্যন্ত অপেক্ষা
অনলাইন ডেস্ক

জামায়াত নিষিদ্ধে আদালতের রায় পর্যন্ত অপেক্ষা

জামায়াত নিষিদ্ধে আদালতের রায় পর্যন্ত অপেক্ষা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শর্ত পূরণ করতে পারেনি বলে নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে। এখন তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার একটা মামলা কোর্টে রয়ে গেছে। এ মামলার রায় যতক্ষণ না হবে সেখানে বোধহয় আমরা কোনো কিছু করতে পারি না। কোর্টের রায় খুব শিগগিরই যদি হয়ে যায় তাহলে জামায়াত দল হিসেবে নিষিদ্ধ হবে।

বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী শেখ হাসিনার কাছে জানতে চান জামায়াতকে নিষিদ্ধ এবং বিএনপি নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে কিনা? উত্তরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যারা অপরাধী, মানুষ খুন করা থেকে শুরু করে যারা মানি লন্ডারিং করেছে, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করেছে, দুর্নীতি করেছে- এসব মামলায় যারা সাজাপ্রাপ্ত, যারা বিদেশে পালিয়ে আছে, পলাতক আসামি- তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের আলোচনা চলছে। আমি বিশ্বাস করি, আমরা তাদের ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকর করতে পারব।

নির্বাচনে জামায়াতকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, এটা ন্যক্কারজনক- তারা নিবন্ধিত নয়, সেই অবস্থাতেও তারা বিএনপির সঙ্গে জোট করে জামায়াতে ইসলামী নামে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়েছে। জনগণকে ধন্যবাদ জানাই তারা জামায়াতকে ভোট দেয়নি, প্রত্যাখ্যান করেছে।

আওয়ামী লীগের বিজয় ছিল প্রত্যাশিত : মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে এ দেশের আপামর জনসাধারণ বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছে। এ বিজয় ছিল খুবই প্রত্যাশিত। নির্বাচনের প্রাক্কালে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জরিপের ফলে এরকম পূর্বাভাসই দেয়া হয়েছিল। লন্ডনভিত্তিক ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এবং রিসার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের জরিপের ফল সবাই লক্ষ্য করেছেন। আর আমাদের ল্যান্ড-স্লাইড বিজয়ের বহুবিধ কারণ রয়েছে।

তিনি বলেন, একটি সমাজের প্রায় সব শ্রেণী-পেশার মানুষ যখন কোনো দলের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন, তখন তার পক্ষে গণজোয়ারের সৃষ্টি হয়। আমাদের বেলায় তাই হয়েছে। এ দেশের মানুষ আমাদের ইশতেহারের পক্ষে নিরঙ্কুশ রায় প্রদান করেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, যে কোনো গণতান্ত্রিক নির্বাচন হল পক্ষ এবং প্রতিপক্ষের মধ্যে ভোটারদের সমর্থন আদায়ের প্রতিযোগিতা। প্রতিপক্ষ শক্তিশালী হলে প্রতিযোগিতা জোরালো হয়। কিন্তু এবারের নির্বাচনে আমাদের যারা প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল তাদের কোনো নির্বাচনী প্রস্তুতি বা কৌশল ছিল বলে আমার মনে হয়নি।

বিএনপি-জামায়াত জোটের ভরাডুবির কারণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে তারা এক আসনে ৩-৪ বা তারও বেশি প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ ছিল। তারা দুর্বল প্রার্থী দিয়েছিল। নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। নিজেরা জনগণের জন্য কী করবে, সে কথা তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের দেশব্যাপী অগ্নিসন্ত্রাস ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষের মন থেকে মুছে যায়নি।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, নির্বাচনের প্রাক্কালে বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের নির্বাচনী প্ল্যাটফর্ম ঐক্যফ্রন্ট থেকে বিভিন্ন আজগুবি প্রতিশ্রুতি (যেমন- যে কোনো বয়সে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ) দেয়, যা জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

রেকর্ডের জন্য রাজনীতি করি না : শফিকুল ইসলাম শিমুলের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি রেকর্ডের জন্য রাজনীতি করি না। আমার বাবা এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সময় আল্লাহর অশেষ কৃপায় আমরা দু’বোন প্রাণে বেঁচে যাই। আমি এর আগে কোনোদিন চিন্তাই করিনি জাতীয় রাজনীতিতে আসব। যদিও ছাত্রাবস্থাতেই আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। তিনি বলেন- হত্যা, মামলা, জেল-জুলুম, হত্যার পরিকল্পনা, গ্রেনেড আক্রমণ কোনো কিছুই আমাকে আমার সংকল্প থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। আর আমার সংকল্প হচ্ছে- আমার বাবা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা।

ডিসেম্বরের মধ্যেই পদ্মা সেতু : ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী জানান, সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। এরই মধ্যে এ প্রকল্পের ৬২ শতাংশ ভৌত কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

তিনি বলেন, কারিগরি দিক থেকে অত্যন্ত জটিল এ সেতুর পাইল ড্রাইভিং চলাকালে সয়েল কন্ডিশনের কারণে কিছু পাইলের পুনরায় ডিজাইন করতে হয়েছে। দেশি ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী এসব পাইলের ডিজাইন সম্পন্ন করতে কিছুটা অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন হয়েছে। এ সত্ত্বেও চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ স্থাপন এবং পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা হতে বরিশাল পর্যন্ত রেল সংযোগ স্থাপনের কাজও চলছে।

৬টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও ৯টি গ্রিড উপকেন্দ্র উদ্বোধন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিদ্যুৎ দরকার এমন মানুষ খুঁজে খুঁজে সংযোগ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বুধবার সকালে গণভবনে এক অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, আমরা মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি আর বিদ্যুতের উৎপাদনের মাধ্যমে প্রতিটি ঘরে আলো জ্বালব। এটি আমাদের লক্ষ্য। বর্তমানে দেশের ৯৩ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা জানেন এখন আর বিদ্যুতের জন্য ছোটাছুটি করতে হয় না। এখন আলোর পসরা নিয়ে আপনাদের ঘরে ঘরে যাচ্ছে। কোথায় বিদ্যুৎ দরকার- এভাবে খুঁজে খুঁজে আমরা মানুষের চাহিদা পূরণ করার উদ্যোগ নিয়েছি।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৬টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ৯টি গ্রিড উপকেন্দ্র উদ্বোধন করেন। এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং গ্রিড উপকেন্দ্র চালুর ফলে ১ হাজার ৬২ মেগাওয়াটেরও বেশি বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। এছাড়া সাগরের নিচ দিয়ে ক্যাবলের মাধ্যমে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং ১২টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগের উদ্বোধন করা হয় এ অনুষ্ঠানে।

উদ্বোধন করা ছয়টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র হল- সিরাজগঞ্জ ২৮২ মেগাওয়াট সিম্পল সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ভোলা ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, চাঁদপুর ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র, আশুগঞ্জ ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র, খুলনার রূপসায় ১০৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং চট্টগ্রামের জুলদা ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র (তৃতীয় ইউনিট)। নয়টি গ্রিড উপকেন্দ্র হচ্ছে- রামগঞ্জ, বরিশাল (উত্তর), বারইয়ারহাট, শিকলবাহা, জলঢাকা, সুনামগঞ্জ, বিয়ানিবাজার, রাঙ্গামাটি ও মাতারবাড়ি।

শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় আসা উপজেলা হচ্ছে- হরিণাকুণ্ড, ঠাকুরগাঁও সদর, বালিয়াডাঙ্গা, গোয়ালন্দ, কালুখালী, বামনা, লাখাই, শায়েস্তাগঞ্জ, আজমেরীগঞ্জ, বাহুবল, মেলান্দহ এবং ইসলামপুর।

ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী সিরাজগঞ্জ, ভোলা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতা, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী ও জনগণের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে ওইসব এলাকার উন্নয়নে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব আহমেদ কায়কাউস।

‘চ্যারিয়ট অব লাইফ’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর চেক ভাষায় অনুদিত ‘চ্যারিয়ট অব লাইফ’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছেন। বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন। ‘চ্যারিয়ট অব লাইফ’ বইটি ৩৭ বছর আগে লেখকের যাপিত দুই জীবনের আত্মজীবনীমূলক বই। চ্যারিয়ট অব লাইফ স্বাধীনতার ওপর লেখা তার প্রথম বই। বইটি ভারতের পেঙ্গুইন রেনডম হাউস থেকে প্রকাশিত হয়েছে। একই সঙ্গে বইটির চেক ভাষায় একটি অনুবাদও প্রকাশিত হয়েছে।


প্রকাশক/সম্পাদক: আবুল হারিস রিকাবদার
প্রকাশক ও সম্পাদক কর্তৃক প্রথম বাংলাদেশ/শিবপুর, নরসিংদী থেকে প্রকাশিত
ফোনঃ বার্তা-০১৭০০-০০০০০০, বিজ্ঞাপন-০১৯০০-০০০০০০, ই-মেইলঃ prothombangladeshnews@gmail.com