দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা বৃদ্ধিতে, ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করা একমাত্র জাতি হিসেবে আমরা আনন্দে হই উদ্বেলিত। দু’চোখের গড়িয়ে পড়া আনন্দাশ্রু জানান দিয়ে যায়, ভাষা শহীদদের রক্তদান বৃথা যায়নি। তাঁদের আত্মদানের গৌরবগাঁথা পরবর্তী প্রজন্মের মনে জাগিয়ে তুলে নিখাঁদ দেশপ্রেম। জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রকৃত দেশপ্রেমিক সেসব মানুষগুলো দেশ ছেড়ে বিদেশ-বিভূঁইয়ে অবস্থান করলেও, মা-মাটি-মানুষ, নিজ দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্যকে বিস্মৃত হননা তাঁরা। শত প্রতিকূলতার মাঝেও তাঁরা হৃদয়ে লালন করেন দেশাত্ববোধ, দেশের সুনামকে বাড়িয়ে তুলতে স্বীকার করেন বহু ত্যাগ-তিতীক্ষা। ঠিক তেমনি সিঙ্গাপুরের মতো একটি বহুভাষাভাষী মানুষের দেশে, বাংলাভাষা সাহিত্য-সংস্কৃতি, ঐতিহ্যকে শ্রমজীবী, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীসহ সকল প্রবাসী বাংলাদেশী কিংবা স্থানীয়দের কাছে ব্যাপক পরিচিতিলাভে প্রাণান্ত চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন, সিঙ্গাপুর থেকে প্রকাশিত একমাত্র বাংলা পত্রিকা “বাংলার কণ্ঠ”’র সম্পাদক এ কে এ মোহসীন। তাঁর ঐকান্তিক প্রচষ্টার জন্যই সিঙ্গাপুরের প্রধান জাতীয় চায়নীজ দৈনিক “লিয়েনহি জ্যাওব্যাও” (Lianhe zaobao) এর সংস্করণে পূর্ণ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছে, অভিবাসী বাংলাদেশীদের অংশগ্রহণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও ভাষা শহীদ দিবস উপলক্ষ্যে “বাংলার কণ্ঠ” আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার সচিত্র প্রতিবেদন। দেশের হয়ে বিদেশের মাটিতে “বাংলার কণ্ঠ” পত্রিকাটি প্রকাশনার সূচনালগ্ন থেকে সিঙ্গাপুরে মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের কোনও উদ্যোগ না থাকার ব্যথা অনুভব করায়, ২০০৯ সালে “বাংলার কণ্ঠ”র তৎকালীন কার্য্যালয় ১, সি রোয়েল রোডে অবস্থিত “দিবাশ্রম” এ সর্বপ্রথম অস্থায়ীভাবে ভাষা শহীদদের স্মরণে স্থাপন করা হয় শহীদ মিনার। তখন থেকেই সিঙ্গাপুরে ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানোর প্রচলন শুরু হয়ে অদ্যাবদি তা চলমান রয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে বাংলা ভাষা-সংস্কৃতি এবং অবিভাসী শ্রমজীবীদের সুপ্ত প্রতিভাকে বিকমিত করার লক্ষ্যে “বাংলার কণ্ঠ”র উদ্যোগে প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন এবং ২০০৮, ২০১২ এবং ২০১৪ সালে সাহিত্য-শিল্পকলার সকল শাখায় শ্রমজীবী অভিবাসীদের ব্যাপক অংশগ্রহনে বিজয়ীদের মাঝে সম্মাননা পত্র ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে “স্পিক ইজি” শিরোনামে সিঙ্গাপুরের মূল ধারার কবি সিরিল ওং, তানিয়া ডি রোজারিও, এলভিন প্যাঙ, মার্ক নায়ার এবং জেনিফার চ্যাম্পিয়ন প্রমুখ কবিদের সাথে শ্রমজীবী অভিবাসী বাংলাদেশী কবিদের কবিতা আবৃত্তি ও সঙ্গীত সন্ধ্যা, একই বছর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর (NUS) এর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ বিভাগ (ISAS) ও “বাংলার কণ্ঠ’র যৌথ উদ্যোগে “Poems of Migration: Joys and Sorrows” শিরোনামে শ্রমজীবী অভিবাসীদের কবিতা আবৃত্তি-সঙ্গীত সন্ধ্যা ও “বাংলার কণ্ঠ”র প্রকাশনায় শ্রমজীবী অভিবাসীদের ৬টি কবিতা বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও অভিবাসী বাংলাদেশী লেখকদের প্রকাশিত বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়, সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগ ও “বাংলার কণ্ঠ”র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত অভিবাসী সপ্তাহের প্রথম দিনে। শ্রমজীবী অভিবাসী বাংলাদেশীদের নিয়ে “বাংলার কণ্ঠ”র নানাবিধ কর্মকান্ড সিঙ্গাপুরসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিগত এক দশক ধরে নিরবচ্ছিন্ন প্রকাশ পেলেও আমাদের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও ভাষা শহীদ দিবস নিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যম ছিলো একেবারেই নীরব। এর মধ্যে ব্যতিক্রম ছিলো শুধুমাত্র ২০১৪ সালের ২১ শের অনুষ্ঠানের ছোট্ট একটি প্রতিবেদন, যা সিঙ্গাপুরের জাতীয় ইংরেজী দৈনিক “স্ট্রেইটস টাইমস” এ প্রকাশিত হয়েছিলো। এবারই প্রথম চায়নীজ দৈনিক “লিয়েনহি জ্যাওব্যাও” (Lianhe zaobao) আমাদের মাতৃভাষা বাংলা এবং ভাষা শহীদ দিবস উদযাপন নিয়ে পূর্ণ পৃষ্ঠার সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করলো যা, বাংলাদেশ তথা সকল প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য অত্যন্ত গৌরব ও আনন্দের বিষয়। আমাদের এ গর্ব এবং সম্মান অর্জন করার অংশীদার হতে পেরেছি একজন নির্ভীক ভাষা সৈনিক এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বাহ্মণবাড়িয়া জেলার কৃতি সন্তান আব্দুল মালেক ভূঁইয়ার সুযোগ্য সন্তান,“ বাংলার কণ্ঠ”র সম্পাদক এ কে এম মোহসীনের নিরলস প্রচেষ্টা আর নিঃস্বার্থভাবে, নিরবচ্ছিন্ন কর্মকান্ডের হাত ধরেই। বিদেশের মাটিতে বাংলা ভাষার এমন মর্যাদা লাভে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য “বাংলার কণ্ঠ”র সমৃদ্ধি ও উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনসহ অন্যান্যরা প্রবাসবন্ধু এ কে এম মোহসীনকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো অব্যাহত রেখেছে।