আপডেট : ২৮ মার্চ, ২০১৮ ২২:৫২
সাবেক আইজিপি শহীদুল হকের আশীর্বাদপুষ্ট এসপি রফিকুলের খুঁটির জোর কোথায়?
ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাবার শঙ্কা অপরাধের হোতাদের
নিজস্ব প্রতিবেদক
সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার
ঢাকা বিভাগের নরসিংদী জেলার সাবেক পুলিশ সুপার, বর্তমানে পুলিশ সদর দপ্তরে ইউ এন শাখায় কর্মরত অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শকের দায়িত্বে কর্তব্যরত শেখ রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে এক চাঞ্চল্যকর ঘুষ-দুর্নীতি,অনিয়মের অভিযোগ তদন্তাধীন অবস্থায় থাকাকালীনও তার ক্ষমতার দম্ভোক্তি,হুমকি-ধমকি প্রদানের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানা যায়, গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে নরসিংদী জেলা পুলিশ রেশন ষ্টোরের জন্য উন্নতমানের ছোট দানা বিশিষ্ট ক্যাঙ্গারু মশুরের ডাল ক্রয়/সংগ্রহ সংক্রান্ত একটি উন্মুক্ত দরপত্র আহŸান করা হয়, যার স্মারক নং- ৪৯০২/ই, তারিখ ০৬/০৯/২০১৪। দরপত্রের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ),নরসিংদী মুহাম্মদ শাহনেওয়াজ খালেদকে সভাপতি করে, তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি খোলা কমিটি (ঞঙঈ) গঠন করা হয়। এতে অংশগ্রহন করে ক. মেসার্স মাইশা এন্টারপ্রাইজ খ. মেসার্স লামিয়া এন্টারপ্রাইজ গ. মেসার্স মারিশা এন্টারপ্রাইজ এবং ঘ. মেসার্স রায় ট্রেডার্স। প্রতিটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশগ্রহন করে পৃথক পৃথক দরপত্র প্রকাশ করে। এতে মেসার্স লামিয়া এন্টারপ্রাইজ ১২০ টাকা/কেজি, মেসার্স মারিয়া এন্টারপ্রাইজ ১১৮ টাকা/কেজি, মেসার্স রায় ট্রেডার্স ১১৮.৫০ টাকা/কেজি এবং মেসার্স মাইশা এন্টারপ্রাইজ ১১৭.৫০ টাকা/কেজি দর উল্লেখ করে। দরপত্রের নিয়মানুযায়ী সর্বনি¤œ দরদাতা মেসার্স মাইশা এন্টারপ্রাইজের টেন্ডারে উল্লেখিত কাজটি পাওয়ার কথা থাকলেও,দুর্নীতিবাজ এসপি শেখ রফিকুল ইসলামের স্বজনপ্রীতি,দুর্নীতি ও মোটা অংকের টাকা ঘুষের বিনিময়ে বেআইনিভাবে নামসর্বস্ব,কথিত কোম্পানি লামিয়া এন্টারপ্রাইজকে পাইয়ে দেয় বলে জানা গেছে। দরপত্রের চুক্তি অনুযায়ী মানসম্পন্ন ডাল সরবরাহ না করে, খাওয়ার অনুপোযোগী ডাল সরবরাহ করে। এই নি¤œমানের ডাল খেয়ে অনেক পুলিশ সদস্য অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহন করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও বিভাজন সৃষ্টি হয়। সরেজমিনে তথ্যানুসন্ধানে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পুলিশ সদস্য “দৈনিক প্রথম ভোর” প্রতিনিধিকে দুঃখপ্রকাশ করে জানায়,“জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে আমার বাবা স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছেন। অনেক ত্যাগ তীতিক্ষার বিনিময়ে এদেশকে স্বাধীন করেছেন। বাবার আদর্শ বুকে ধারণ করে ছোটবেলা থেকে সৎ,নির্ভীক এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের প্রথম মৌলিক অধিকার খাদ্য অর্থাৎ যা খেয়ে আমরা বেঁচে থাকি, সে খাবার নিয়েও কেউ কেউ দুর্নীতি করে! এই রক্তপিপাসু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা এখন সময়ের দাবী।” সাবেক পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম এবং মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জেলা বিশেষ শাখা) এই দুই রাঘব বোয়ালের প্রত্যক্ষ যোগসাজোশে এই জঘন্যতম ঘৃণিত, অনৈতিক কাজটি করা হয় বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়। শেখ রফিকুল ইসলাম পুলিশ সুপারের দায়িত্বে থাকাকালীন, পুলিশ কন্সটেবল নিয়োগেও ব্যাপক অনিয়ম রয়েছে বলে গোপন সূত্রে জানা যায়। গোপালগঞ্জে জন্ম নেওয়া এই পুলিশ সুপার শরীয়তপুর থেকে ২০১৪ সালের ৫ মে নরসিংদীতে যোগদান করেন। এর পর জেলায় আইন-শৃঙ্খলার অবনতিসহ বৃদ্ধি পায় বিভিন্ন অনৈতিক ও অসামাজিক কার্যকলাপ। ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর বেলাব উপজেলার বারৈচা জামে মসজিদের ইমামকে জোরপূর্বক ধরে আনার সময় বাধা দেওয়ায় মুসল্লীদের ওপর পুলিশ অতর্কিত গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন নিহত ও চারজন গুলিবিদ্ধের ঘটনায় জেলাজুড়ে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়। নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মরজাল, নীলকুটি, মাহমুদাবাদ ও মনোহরদী উপজেলার মাস্টারবাড়িতে যাত্রার নামে হাউজি, জুয়া ও নগ্ন নৃত্য চললেও সাধারন জনগন পুলিশের ভয়ে টু-শব্দটি পর্যন্ত করতে সাহস পাননি। কারণ,পুলিশ প্রতিরাতে লাখ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে তাদের সে অনৈতিক কর্মকান্ডে পরোক্ষভাবে সহযোগিতা প্রদান করতো, যা তৎকালীন এস পি শেখ রফিকুল ইসলাম অবগত ছিলো বলেও অনেকে মুখ খুলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নরসিংদীর একাধিক ভুক্তভোগী এ প্রতিবেদকের কাছে জানায়,এস পি রফিকুল নরসিংদীতে থাকাকালীন সময়ে সাবেক আইজিপি এ.কে.এম শহীদুল হকের খুব ঘনিষ্ঠজন হওয়ার সংবাদটি লোকের মুখে মুখে ছিলো টক অব দ্যা নরসিংদী। নিয়ম বহিঃর্ভূতভাবে লামিয়া এন্টারপ্রাইজকে টেন্ডারটি পাইয়ে দেয়ার পর সেবিষয়টি সম্পর্কে নরসিংদীর ব্যবসায়ী মহলে ব্যপক কানাঘুষা চলতে থাকে। বিশে^র অন্যতম কর্মঠ,সৎ সরকার প্রধান মানবতার জননী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, “দুর্নীতিবাজ যে ই হোক না কেন,তাকে আইনের আওতায় এনে দেশে প্রচলিত আইনানুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা হবে।” কিন্তু চোরায় না শুনে ধর্মের কাহিনী। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা আইনকে পরোয়া না করে,ধরাকে সরা জ্ঞান করে নিজেকে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী মনে করে নিজেদেরে স্বার্থসিদ্ধি করে চলছে প্রতিনিয়ত। এক অনুসন্ধানী পর্যবেক্ষনে জানা যায়, পুলিশ সদর দপ্তরে বদলি হয়ে আসার পরও থেমে নেই তার পুরনো স্টাইলেই ক্ষমতার দাপট দেখানো, ধমকি দেওয়া। নিজেকে সর্বময় ক্ষমতার অধিকর্তা মনে করা সাবেক এস পি রফিকুলের বিরুদ্ধে উত্থিত অভিযোগের বিষয়টি সম্পর্কে একাধিক পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ সম্বলিত সংবাদপত্র/সংবাদপত্রের কাটিং পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও)কামরুল ইসলামের নিকট পৌছে দেওয়ার পরও চাকুরী খোয়ানোর আতঙ্কে, কামরুল ইসলামের নীরবতায় দপ্তরের সর্বত্র এক চাপা গুঞ্জন উঠেছে। সাবেক আইজিপি একেএম শহীদুল ইসলামের আস্থাভাজন হওয়ায় শেখ রফিকুল ইসলাম হামবড়া ভাবে কোনও কিছুকে পাত্তা না দিয়ে বাগাড়ম্বরপূর্ণ কথাবার্তা বলতেই যেনো স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে বেশি। জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর তখন পুলিশের এমন উচ্চপদস্থ কোনও কর্মকর্তার দুর্নীতির কারণে সাধারণ জনসাধারণের কাছে ‘পুলিশ জনগনের বন্ধু’ কথাটি ভুল ভাবেই উপস্থাপিত হয় বলেও অনেকে মন্তব্য করেন। এই বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্যই একদিকে যেমন পুরো পুলিশ বিভাগের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে, ভেঙ্গে পড়ছে পুলিশ বাহিনীর চেইন অব কমান্ড,অন্যদিকে সরকারের ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছে। পুলিশ বাহিনীর প্রতি দেশের আপামর জনসাধারণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে, বর্ণচোরা এহেন কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করাই সকলের একান্ত দাবী বলে মনে করেন বাহিনীর সদস্যসহ সমাজের সর্বস্তরের জনগণ।