গত নয় বছরের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে আবার যেন দেশ ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সালের মতো পিছিয়ে না যায়, তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বলেছেন, ‘দিনরাত পরিশ্রম করে বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছি। অর্থনৈতিকভাবে আমরা স্বাবলম্বী হয়েছি। আমরা এগিয়ে যাব, আর পিছিয়ে যাব না।’
‘আমরা দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে এসেছি। এই গতি যেন অব্যাহত থাকে, এটাই আমরা চাই।’
বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ ফলাফলকারী ১৬৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে স্বর্ণপদক বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন সরকার প্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন,‘১৯৬ থেকে ২০০১ সালে যতটুকু অগ্রগতি হয়েছিল, ২০০১ এ যারা এসেছিল, তারা দেশকে অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছিল। ভবিষ্যতে আর যেন পিছিয়ে না থাকি।’
তার সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার উদ্যোগও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার থামিয়ে দিয়েছিল বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
বলেন, ‘প্রথমবার ক্ষমতায় দেশের প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করি। দুটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করি। শিক্ষাকে আরও বিজ্ঞানভিত্তিক, প্রযুক্তিভিত্তিক করার জন্য ১২টা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন আমরা পাস করে যাই এবং ছয়টির কাজ আমরা শুরু করে যাই।’
‘সেটাও থমকে গিয়েছিল কিছু সময়ের জন্য। অর্থাৎ ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত। এখন আমরা বহুমুখী শিক্ষা এবং বিভিন্ন ধরনের বিষয়ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ আজকে যে অগ্রগতি লাভ করেছে, জাতির পিতা স্বল্পোন্নত দেশ রেখে গিয়েছিলেন, এরপর দেশ বেশি এগোতে পারেনি। এরপর আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে যার ফলে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা যে গ্র্যাজুয়েশন পেয়েছি উন্নত হয়েছি। সেটার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।’
উন্নয়নের জন্য মানসম্মত উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণা জরুরি উল্লেখ করে এই শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য উদ্যোগী হয়েছে সরকার। গঠন করা হচ্ছে উচ্চশিক্ষা কমিশন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য এবং ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ার জন্য শিক্ষিত জনগোষ্ঠী দরকার। আর এই শিক্ষিত জনগোষ্ঠী সৃষ্টি করাই আমাদের লক্ষ্য।’
‘আমরা উচ্চশিক্ষাকে গুরুত্ব দেই। আর যারা আমাদের মেধাবী, তাদের মেধা বিকাশ ও মননের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে।’
‘প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যাতে আরও উন্নত হয় সে জন্য আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। আর শিক্ষাকে বহুমুখীকরণ-সে ব্যবস্থাও নিয়েছি।’
উচ্চশিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদে অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল আইনও পাস হওয়া এবং উচ্চ শিক্ষা কমিশন করার উদ্যোগের বিষয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
‘সমস্ত কিছু দেখার জন্য মঞ্জুরি কমিশন যে আকারে আছে, সে আকারে কখনও এটা সম্ভব না। সে কারণে আমরা একটা উচ্চ শিক্ষা কমিশন গঠন করব।’
‘যেহেতু আইনটা করে দেয়া হয়েছে, সেটা পার্লামেন্টে যাবে। সেখান থেকে স্ট্যান্ডিং কমিটিতে যাবে এরপর পার্লামেন্টে আসবে, এরপর আমরা পাস করব। কাজেই আমরা মনে করি এখনকার জন্য এটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে আর কী কী প্রকল্প নেয়া হয়েছে, তাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। জানান, এই প্রকল্পের অর্থায়নে ৪২২টি রিসার্চ প্রজেক্ট, দুটি টেকনোলজি ট্রান্সফার অফিস, আটটি ফ্যাবল্যাব, ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় শিল্প কারখানার যৌথ গবেষণা, ৬৯টি অ্যাসুরেন্স সেল, ১৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিজিটাল লাইব্রেরি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৩টি ভার্চুয়াল ক্লাসরুম, ১৯টি ক্যাম্পাস নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
এর ফলে গবেষণার উপযোগী ‘আবহাওয়া’ প্রতিষ্ঠা করা গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গবেষণাকে আমরা গুরুত্ব দেই। আমরা মনে করি, গবেষণা ছাড়া কোনো বিষয়ে আমরা অগ্রগতি লাভ করতে পারব না।’
গবেষণায় উৎসাহী করতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি কলেজের প্রায় ৩৬৪ জন শিক্ষককে পিএইচডি ও ফেলোশিপ অ্যাওয়ার্ড এবং সরকারি কলেজের প্রায় ২২৩ জন শিক্ষককে এমফিল ও ফেলোশিপ অ্যাওয়ার্ড আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৩ জন শিক্ষক পোস্ট ডক্টরাল ও ফেলোশিপ অ্যাওয়ার্ডও দেয়ার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্বশাসিত হলেও এর খরচের প্রায় শতভাগ সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিক্ষার খরচটা আমি খরচ হিসেবে দেখি না, এটা বিনিয়োগ। কারণ, ভবিষ্যত প্রজন্ম তারা তৈরি হবে।’
অনুষ্ঠান শেষে জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৌমিত্র শেখরের লেখা ‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্য’ নামে বই প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেয়া হয়। এই বইটি বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হবে।