logo
আপডেট : ৭ জুন, ২০২০ ১৭:২৮
করোনাভাইরাসের চাষাবাদ বাড়াচ্ছে সরকার: রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাসের চাষাবাদ বাড়াচ্ছে সরকার: রিজভী


নিজস্ব প্রতিবেদক
অপরিনামদর্শী ও ভুল সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সরকার সমগ্র দেশে করোনার চাষাবাদ বাড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রোববার এক ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, গত দু’সপ্তাহ যাবত আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে যখন করোনায় মানুষের মৃত্যুর খবর আসছে, তখনও সরকার নিরীহ অসহায় মানুষের জীবন নিয়ে তামাশা করে চলেছে। অপরিনামদর্শী ও ভুল সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সরকার সমগ্র দেশে করোনার চাষাবাদ বাড়াচ্ছে। ঘরে ঘরে করোনা বিস্তারের সুযোগ করে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘লক ডাউন’ না বলে ‘সাধারণ ছুটি’ আখ্যা দিয়ে করোনা পরিস্থিতিকে হালকা করে দেখানো, করোনা সম্পর্কে কতিপয় মন্ত্রীর স্থুল মন্তব্য, এই ভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার পরিবর্তে ‘শেখ হাসিনা থাকতে কোনো চিন্তা নেই’ আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীদের এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন বক্তব্য, বিভিন্ন অফিস-আদালত, মার্কেট-দোকানপাট-বিপনী বিতান কিংবা গার্মেন্টস শিল্প কলকারখানা ইচ্ছে হলে বন্ধ করা, ইচ্ছে হলে খুলে দেয়ার কারণে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে পরিস্থিতি। কোন ধরণের পরিকল্পনা ছাড়া সবকিছু খুলে দেয়ার পর এখন আক্রান্ত আর মৃত্যুর ভয়াবহ বৃদ্ধির কারণে গতকাল থেকে আবার এলাকা ভিত্তিক জোন ঘোষণা করে নতুন করে লকডাউন দিতে শুরু করেছে সরকার। সরকারের আচরণ এমন যে, খুলে দিলাম, ছেড়ে দিলাম, ছড়িয়ে দিলাম, এবার দিচ্ছি লক করে, মরো এবার নিজ ঘরে।
অবিচার-অনাচার আর দুর্নীতিকেই নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে সরকার মন্তব্য করে রিজভী বলেন, দুর্নীতি হয়ে গেছে সরকারের মজ্জাগত। এই ভয়াল করোনা মহামারির মধ্যেও দুর্নীতি চলছে প্রায় প্রকাশ্যে। নিজেদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থে বিরোধী দল ও মতের মানুষের বিরুদ্ধে র‌্যাব-পুলিশকে লেলিয়ে দেয়া, ব্যাংক ডাকাতি, টাকা পাচার, ভোট ডাকাতি, ব্যালট চুরি করে বছরের পর বছর ধরে এভাবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় একের পর এক নানা অপকর্মে সমাজ ও রাষ্ট্র-ব্যবস্থা নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। এমন মহাদুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তেও সরকারের দুর্নীতিবাজরা দুর্নীতির চিন্তায় মগ্ন। স্বাস্থ্যখাতকে লুটপাটের আঁখড়ায় পরিণত করেছে। সেখানে চলছে দুর্নীতির মহোৎসব। ক্ষমতাসীন দলের হোমরা-চোমরারা দুর্নীতিতে ভাগ বসাতে ব্যস্ত।
তিনি বলেন, গত একদশকে এই সরকারের প্রতি ক্ষেত্রেই, প্রতিটি প্রকল্পেই চুরি-দুর্নীতি সাধারণ বিষয়ে পরিণত করা হয়েছে। ত্রাণ চুরি, চাল চুরি, খাতা চুরি, বালিশ চুরি এমনকি করোনা চিকিৎসার সরঞ্জাম কিনতেও চুরি আর দুর্নীতি। অপ্রিয় সত্য হলো এই সরকারের জন্মই যেহেতু নিশিরাতে জনগণের ভোট চুরির মাধ্যমে, ফলে সবাই মনে করে দুর্নীতি, চুরি-জোচ্চুরি-ই এই সরকারের মূল ভিত্তি। একটি ভেন্টিলেটরের জন্য হাহাকার চলছে। এই হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের রোল মডেল।
ভেন্টিলেটর, আইসিইউ, অ্যাম্বুলেন্স, হাসপাতালের বেড আর করোনা আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসা সুবিধা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ এই সরকার মন্তক্য করে বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, উন্নয়নের ফাঁপা গল্পের মাঝে যে একটা বাতাসযুক্ত বেলুন ছিল করোনার সামান্য ধাক্কায় সেটা ফুটো হয়ে গেছে। জনগণের চিকিৎসা পাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার হরণের দায় সরকারেরই।
তিনি বলেন, পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমই'র সভাপতি জুন মাস থেকে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে৷ প্রণোদনার পাঁচ হাজার কোটি টাকা নেয়ার পর তাদের এই ঘোষণা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। পোশাক শিল্প মালিকদের এই ঘোষণায় অন্য কোন কোনো দুরভিসন্ধি থাকতে পারে। আপতকালীন ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার বাইরে তাদের নগদ সহায়তা দেয় সরকার। কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াত দেয়া হয়। এত সুবিধা পাওয়ার পরও এই চরম দুঃসময়ে তারা হঠাৎ করেই শ্রমিক ছাঁটায়ের এই ঘোষণা দিয়ে অমানবিক কাজ করেছেন।
পোশাক কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই অব্যাহত আছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, লকডাউন শুরুর পর থেকে প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। তাদের রুজি রোজগার বন্ধ হওয়ায় পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এই সময়ে শুধু ব্যবসার কথা চিন্তা করে ছাঁটাই অন্যায্য। এদিকে বিজিএমই এখন পর্যন্ত ২৬৪ জন পোশাক শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত বলে শিকার করলেও বাস্তবে এই সংখ্যা অনেক বেশি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। শ্রমিকরা করোনায় আক্রান্ত হলে তাদের পুরো দায়িত্ব বিজিএমইএর নেয়ার কথা থাকলেও তারা নিচ্ছে না। শ্রমিকদের জীবন জীবিকাকে আমলে না নিয়ে ছাঁটাইয়ের কথা বলা চরম অমানবিক ও মানবতাবিরোধী।


প্রকাশক/সম্পাদক: আবুল হারিস রিকাবদার
প্রকাশক ও সম্পাদক কর্তৃক প্রথম বাংলাদেশ/শিবপুর, নরসিংদী থেকে প্রকাশিত
ফোনঃ বার্তা-০১৭০০-০০০০০০, বিজ্ঞাপন-০১৯০০-০০০০০০, ই-মেইলঃ prothombangladeshnews@gmail.com