অপহরণ করে ‘৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে সই নিয়ে’ ছাড়া হয়েছে কুমিল্লা-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী পারভেজ হোসেন সরকারকে। তবে চোখ বাঁধা থাকায় এরই স্ট্যাস্পে কী লেখা আছে সেটা জানতে পারেননি তিনি।
শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজ শেষে রাজধানীর লালমাটিয়ায় মসজিদের সামনে থেকে অপহৃত পারভেজের খোঁজ মেলে গত রাতে রাজধানীর পূর্বাচল এলাকায়। আর শনিবার দুপুরে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের পুরো বিষয়টি জানান।
কী কারণে স্টাম্পে সই নেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নে পারভেজ বলেন, ‘হয়ত ভয়ে রাখতে এটা নেওয়া হয়েছে। কারণ আমাকে কিন্তু কোনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি, শুধু গাড়িতে করে ঘোরানো হয়েছে।’
‘তারা স্টাম্পে দুটি স্বাক্ষর নিয়েছে। একটা ইংরেজিতে আরেকটা বাংলায়।’
কীভাবে ধরে নেয়া হয় সেটি জানিয়ে পারভেজ বলেন, “প্রথমে বলে, ‘পারভেজ ভাই ভালো আছেন?’। তারপর সালাম দিয়ে বলে, ‘আপনার সাথে একটু কথা বলব’। এর মাঝেই আরেকজন আমাকে পেছন দিয়ে গাড়িতে ধাক্কা দিয়ে তুলে নেয়।”
‘গাড়িতে ঢুকিয়ে তারা আমাকে কালো মুখোশ পরিয়ে একটা রুমাল মুখে দিয়ে অজ্ঞান করে নিয়ে যায়। দীর্ঘক্ষণ পর (কতক্ষণ সেটা মনে নেই কারণ আমি আলো দেখতে পাইনি) দুই সেট ৩০০ টাকার খালি স্টাম্পে আমাকে সাইন করিয়ে নেয়।’
সাইন করার সময় গাড়ি থামানো ছিল কি না এবং যারা ধরে নিয়ে গিয়েছিল তাদের কাছে অস্ত্র বা ওয়াকিটকি ছিল কি না-এমন প্রশ্নে পারভেজ বলেন, ‘হ্যাঁ, তখন গাড়ি থামানো ছিল। আর তাদের সাথে অস্ত্র ছিল। সেটা আমার গায়ে ঠেকানো ছিল। তবে ওয়াকিটকি ছিল কি না বুঝিনি ‘
‘আন্দাজ করেছি তারা ৫/৬ জনের মতো একটি দল ছিল।’
এই ঘটনায় কা্উকে সন্দেহ করছেন কি না-জানতে চাইলে পারভেজ বলেন, ‘আমি এখন এটা বলতে পারব না। এটা পুলিশ তদন্ত করে দেখবে। আমি এই মুহূর্তে কাউকে দোষারোপ করতে চাচ্ছি না। কারণ, আমি চোখ বাঁধা ছিলাম দেখতে পাইনি।’
কাউকে সন্দেহ না করলেও রাজনৈতিক কারণে অপহরণ হয়েছে বলে মনে করছেন পারভেজ। আর তদন্তের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিষয়টি বিবেচনায় নেয়ার পরামর্শও দেন তিনি। বলেন, ‘তবে যেহেতু আমি রাজনীতি করি আমার প্রতিপক্ষ আছে। তাই প্রশাসনের কাছেই দাবি জানাব এটার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচারের।’
এক বছর আগে তিতাসে পারভেজের ওপর হামলা হয়েছিল। আর এরপর থেকে তিনি এলাকায় যাচ্ছেন না। বলেন, ‘হুমকি ধামকি ছিল কয়েকদিন ধরে। সেটা রাজনৈতিক ভাবেও অন্যান্য জায়গা থেকেও। বিভিন্ন সময় অজ্ঞাত নাম্বার থেকে ফোনে হুমকি আসত।’
এক বছর আগেও পারভেজের গাড়িতে হামলা ও গুলি হয়েছিল। সেই ঘটনায় করা মামলা কোন পর্যায়ে আছে, জানতে চাইলে পারভেজ বলেন, ‘ওই মামলা চলমান আছে। এই মুহূর্তে আমি ওই সব ঘটনার সাথে বর্তমান ঘটনায় কাউকে দোষারোপ করতে চাচ্ছি না।’
তবে যিনি সালাম দিয়েছেন এবং যিনি মুখে রুমাল ধরেছেন, তাকে দেখেলে চিনতে পারবেন বলেও জানান পারভেজ। যদিও তিনি তার পূর্ব পরিচিত নন।
গত রাত আনুমানিক ১০টার দিকে রূপগজ্ঞের কাঞ্জনব্রিজের আগে একটি খালি জায়গায় পারভেজকে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা।
‘এ সময় পেছনে দেখলাম একটি তেলের দোকান আর কিছু রেস্টেুরেন্ট ছিল। সেখানে গিয়ে আশ্রয় নিই এবং বাসায় স্ত্রীকে ফোন করি। পরে আমার পরিবারের সদস্যরা আমাকে নিয়ে আসে।’
তার অপহরণের ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরায় গণমাধ্যমের প্রশংসা করেন আওয়ামী লীগ নেতা। আর তাকে উদ্ধারে প্রশাসনিক তৎপরতার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও ধন্যবাদ জানান তিনি।
কথা বলার এক পর্যায়ে কেঁদে ফেলেন পারভেজ। বলেন, ‘দোয়া করবেন, এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে।’
পারভেজ কুমিল্লার তিতাস উপজেলার চেয়ারম্যান ছিলেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনে তিনি তিতাস ও হোমনা উপজেলা মিলিয়ে গঠন করা কুমিল্লা-২ আসনে নৌকা প্রতীকে ভোটে অংশ নিতে চান। ২০১৪ সালের নির্বাচনে এখান থেকে জাতীয় পার্টির আমির হোসেন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সে সময় আওয়ামী লীগ এই আসনে প্রার্থী দেয়নি।
পারভেজ বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি প্রার্থী। গতবারই চেষ্টা করেছিলাম। এবার যদি প্রধানমন্ত্রী আমাকে দেন, আমি থাকব।’