গণ-অপুষ্টিতে বেশি ক্ষতি ভারতের, প্রভাব বাংলাদেশেও
দিন দিন বায়ুদূষণের পরিমাণ বাড়ছে উদ্বেগজনকভাবে। আর এভাবে বায়ুদূষণ বাড়তে থাকলে আগামী তিন দশকের মধ্যে গণ-অপুষ্টি (মাস ম্যালনিউট্রিশান) বিশ্বকে গ্রাস করবে। আর এর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে বাংলাদেশ, ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল ও কেনিয়াতে। আর এই গণ-অপুষ্টির কেন্দ্রবিন্দু হবে ভারত।
মানুষের শরীর বেড়ে ওঠার জন্য যেসব প্রোটিন, লোহা ও জিঙ্কের মতো ধাতুগুলি চাল, গম, ভুট্টা ও অন্যান্য গাছপালা থেকে পাওয়া যায়। বাতাসে দূষণ বৃদ্ধির ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যাওয়ায় সেই প্রোটিন, লোহা ও জিঙ্কের মতো ধাতুগুলির পরিমাণ অনেকটাই কমে যাবে। ফলে, ওই সব খাদ্যশস্যের পুষ্টিগুণ কমবে উদ্বেগজনক ভাবে। এর ফলেই এই গণ অপুষ্টির প্রকোপ দেখা দেবে।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী 'নেচার-ক্লাইমেট চেঞ্জ' এ প্রকাশিত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএইচ চান স্কুল অফ পাবলিক হেলথের একটি গবেষণায় এই ভয়ানক তথ্য উঠে এসেছে। মানুষ যেসব গাছপালা বা গাছপালা থেকে উৎপাদিত শস্য নিয়মিত খায়, ১৫১টি দেশের তেমন ২২৫টি প্রজাতির উদ্ভিদ নিয়ে তাদের প্রোটিন, লোহা আর জিঙ্কের পরিমাণ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে এ তথ্য দিয়েছেন গবেষকরা।
গণ অপুষ্টির প্রভাবে সারা বিশ্বে, বিশেষ করে ভারত, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে প্রোটিন, লোহা ও জিঙ্কের অভাবজনিত অপুষ্টির শিকার হবে কয়েক কোটি মানুষ। ভারতে জিঙ্কের অভাবে প্রায় পাঁচ কোটি এবং প্রোটিনের অভাবে প্রায় চারকোটি মানুষ অপুষ্টির শিকার হবে। এছাড়া বাংলাদেশ, চীন, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল ও কেনিয়াতেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ অপুষ্টির শিকার হবে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, শিল্পদূষণের ফলে বায়ুমণ্ডলে যেভাবে গ্রিনহাউস গ্যাস (কার্বন ডাই-অক্সাইড)-এর পরিমাণ বাড়ছে, সেই হার বজায় থাকলে, ২০৫০ সালে চাল-গম-ভুট্টার মতো খাদ্যশস্যগুলিতে শরীরের বাড়বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রোটিন আর লোহা ও জিঙ্কের মতো ধাতুগুলির পরিমাণ অন্তত ১৭ শতাংশ কমবে।
গবেষণা বলছে, শরীরের বাড়বৃদ্ধির জন্য রোজ আমাদের যে পরিমাণ প্রোটিন, লোহা আর জিঙ্ক লাগে, তার ৪০ শতাংশই আসে চাল, গম ও ভুট্টা থেকে। মানুষের শরীরে প্রোটিনের যা চাহিদা, তার ৫ ভাগের ৩ ভাগ, লোহার চাহিদার ৫ ভাগের ৪ ভাগ আর জিঙ্কের প্রয়োজনের ৭০ শতাংশই মেটায় নানা ধরনের গাছপালা।
শরীরে জিঙ্ক ধাতুর অভাব হলে তার বড় প্রভাব পড়ে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ওপর। শিশুরাই তার শিকার হয় সবচেয়ে বেশি। ম্যালেরিয়া, ফুসফুসের সংক্রমণ ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায় শিশুদের। লোহা বা লোহাঘটিত যৌগের অভাব ঘটলে সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় প্রসূতি-মৃত্যুর আশঙ্কা বাড়ে। তা শিশুদের আইকিউ কমিয়ে দেয়। কমায় লৌহ রক্তকণিকার সংখ্যা। অ্যানিমিয়া বা রক্তাপ্লতায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
গবেষণায় বলা হয়েছে, এই গণ অপুষ্টির সরাসরি শিকার হবে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ। এছাড়া শরীরে লোহার পরিমাণ ৪ শতাংশেরও বেশি কমে যাবে অন্তত ১৪০ কোটি মহিলা ও শিশুর। এছাড়া ৫০ কোটিরও বেশি লোক এই কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবেন।
