কেরালার বন্যার্তদের জন্য রোহিঙ্গাদের দান
বন্যার কারণে ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়া ভারতের কেরালা রাজ্যে টাকা দান করেছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। দিল্লির এক প্রান্তে খোলা আকাশের নিচে ত্রাণ শিবিরে বসবাস করা এসব রোহিঙ্গার দান করা টাকা তুলে দেয়া হয়েছে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছে।
ভারতের কেরালা রাজ্য স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার সম্মুখিন হয়েছে। বন্যা, ভূমি ধসে এখন পর্যন্ত প্রায় আর্ধসহস্রাধিক লোক নিহত হয়েছেন। এমন অবস্থায় অনাহার অর্ধাহারে দিন কাটছে হাজার হাজার মানুষের। তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন দেশটির সরকারসহ সাধারণ মানুষ।
এবার কেরালার পাশে দাঁড়িয়ে মানবতার অনন্য নজির স্থাপন করলেন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। নিজেরা ত্রাণশিবিরে থেকেও নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী কেরালার পাশে দাঁড়িয়েছেন তারা। দিল্লির শ্রমবিহার, কালিন্দীকুঞ্জ এবং পার্শ্ববর্তী ফরিদাবাদে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা কেরালার বন্যাত্রাণে মোট ৪০ হাজার রুপি চাঁদা দিয়েছেন৷ খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
রোহিঙ্গাদের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগ নিয়েছে দিল্লিতে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের নিজস্ব ফুটবল ক্লাব 'রোহিঙ্গা শাইন স্টার'৷ যেখানে নিজেদেরই অন্যের দানের ওপর চলতে হয় সেখানে বন্যার্তদের সাহায্য করলেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে এক রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু ইমরান বলেন, 'আজ (গতকাল) জুমা বার৷ সবে নামাজ পড়ে এলাম৷ আল্লাহর কাছে তো সবাই সমান৷ আজ আমাদের নিজেদের দেশে মিয়ানমারের কোনো প্রদেশে যদি এমন ভয়াল বন্যা হত, তাহলে কি সেখানকার ভাই বোনদের পাশে দাঁড়াতাম না? এটাও একই ব্যাপার৷ আমরা যা করছি, তা কেরালার ভাই বোনদের জন্য করছি, নিজের আত্মীয় ভেবেই করছি৷'
আর এক শরণার্থী আবদুল্লাহর বলেন, 'আমরা নিজেরা বিপদগ্রস্ত বলেই তো অন্যদের বিপদের কথা ভালো বুঝতে পারি৷ উপরওয়ালা আমাদের বুঝিয়েছেন আসল বিপদ কাকে বলে৷ ভিটে মাটি ছাড়া হয়ে বিদেশে বিদেশে ঘুরে বেড়ানো, দু'মুঠো ভাতের সন্ধানে উঞ্ছবৃত্তি করা, কোনোরকমে পরিবার প্রতিপালন করা, তার উপরে প্রতিমুহূর্তে বিদেশি রাষ্ট্রের চোখরাঙানি, এর থেকে বড় বিপদ আর আমাদের জীবনে কী হতে পারে? এই সব অভিজ্ঞতা থাকার পরে আমাদের মনে হয়েছে বিপদগ্রস্ত কেরালার মানুষের পাশে দাঁড়ানোটা আমাদের কর্তব্য৷ মানুষ হয়ে মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত যদি না বাড়িয়ে দেই, তাহলে কীভাবে জবাব দেব আল্লাহর কাছে?'
দক্ষিণ দিল্লির কালিন্দী কুঞ্জ এলাকায় মায়ানমার থেকে এসে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা নিজেরাই প্রতিনিয়ত দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে থাকেন৷ গত এপ্রিলে তাদের অস্থায়ী ত্রাণ শিবিরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়৷ এমন ভয়াবহ ছিল মাঝ রাতে লাগা সেই আগুন যে, জাতিসংঘ থেকে পাওয়া উদ্বাস্তু সার্টিফিকেট ও পরিচয়পত্রটুকুও বাঁচাতে পারেননি কেউ৷ তারপরও তারা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন তারা।
