ঢাকা, বুধবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৫
আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ১৬:১৬

রোহিঙ্গা নির্যাতন: আন্তর্জাতিক আদালতের তদন্ত শুরু

ভোরের বাংলা ডেস্ক
রোহিঙ্গা নির্যাতন: আন্তর্জাতিক আদালতের তদন্ত শুরু

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা, নির্যাতন ও দেশ থেকে বিতাড়নের অভিযোগে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। মঙ্গলবার তারা এই তদন্ত শুরু করে।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যে অভিযান চালিয়েছে তার বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের প্রথম পদক্ষেপ এটা। খবর বিবিসির।

বার্তা সংস্থা এএফপি আইসিসিকে উদ্ধৃত করে বলছে, দেশটির সেনাবাহিনীর অভিযানের ফলে উত্তরের রাখাইন প্রদেশের প্রায় সাত লাখ মানুষ প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

এর মাত্র দুই সপ্তাহ আগে বিচারকরা রায় দেন যদিও মিয়ানমার আইসিসির সদস্য দেশ না, তারপরেও ঘটনার একাংশ যেহেতু বাংলাদেশে ঘটেছে এবং বাংলাদেশ যেহেতু আইসিসির সদস্য তাই আন্তর্জাতিক আদালত বিচারকার্য করতে পারবে।

আইসিসির কৌসুলি ফাতৌ বেনসৌদা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই প্রক্রিয়ার পরবর্তী পদক্ষেপ শুরু করবো এবং পরিস্থিতির পূর্ণাঙ্গ প্রাথমিক পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করবো’।

আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, প্রাথমিক তদন্ত পরবর্তী সময়ে আনুষ্ঠানিক তদন্তে রূপ নিতে পারে। এর নজির রয়েছে ২০০২ সালে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবাধিকারের বিরুদ্ধে অপরাধের তদন্ত শুরুর ঘটনায়। এই তদন্তের পরে অভিযোগ গঠন করা যেতে পারে।

ফাতৌ বেনসৌদা বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্ত হতে পারে দমনমূলক সেসব কাজের বিরুদ্ধে যার ফলে বাধ্যতামূলক স্থানান্তর, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, ধ্বংসযজ্ঞ এবং লুটপাটের বিরুদ্ধে’।

তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ওপর অন্য কোনো ধরনের অপরাধ যেমন নিপীড়ন বা অমানবিক আচরণ করা হয়েছে কি না সেটাও বিবেচনা করা হবে।’

কীভাবে শুরু হলো আইসিসির হস্তক্ষেপ?

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা আইসিসি জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তদন্ত করার কর্তৃত্ব আদালতের রয়েছে।

৭ সেপ্টম্বর নেদারল্যন্ডসের দ্য হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রিট্রায়াল চেম্বার এ রায় দিয়েছে। তিন সদস্য বিশিষ্ট প্রি-ট্রায়াল চেম্বারের তিনজন বিচারকের মধ্যে দুইজন একমত পোষণ করলেও একজন ভিন্নমত পোষন করেন।

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান কৌসুলি আদালতের কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে রোহিঙ্গাদের যেভাবে মিয়ানমার থেকে বিতাড়ন করা হয়েছে সেটির তদন্ত করার এখতিয়ার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রয়েছে কি না।

সে প্রেক্ষাপটে আইসিসি'র প্রি-ট্রায়াল চেম্বার রায় দিয়েছে যে মিয়ানমার আন্তর্জাতিক আদালতের সদস্য না হলেও রোহিঙ্গারা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের কারণে ঘটনার একটি অংশ বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছে। ফলে আইসিসি মনে করেছে রোম সনদ অনুযায়ী ঘটনার তদন্ত করার ক্ষমতা আদালতের রয়েছে।

এ রায়ের ফলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান কৌসুলি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের প্রাথমিক তদন্ত চালিয়ে যেতে পারবেন।

তবে আদালত জানিয়েছে যে এ ধরনের তদন্ত একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে।

আইসিসি'র উদ্যোগ এবং ঘটনাক্রম

# এপ্রিল মাসে আইসিসির প্রধান কৌসুলি আদালতের কাছে রোহিঙ্গাদের উপর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তদন্তের অনুমতি চেয়েছিলেন।

# মে মাসের প্রথম দিকে বিষয়টি নিয়ে আইসিসি বাংলাদেশের মতামত জানতে চেয়েছে। এবং ১১ জুনের মধ্যে বাংলাদেশের জবাব চাওয়া হয়েছে।

# জুন মাসে আইসিসি মিয়ানমারের কাছে বিষয়টি নিয়ে জানতে চেয়েছে এবং ২৭ জুলাই-এর মধ্যে জবাব দিতে বলেছে।

# ৯ আগস্ট মিয়ানমারের তরফ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে যে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের উদ্যোগ এখতিয়ার বহির্ভূত।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রায় আসার ১১ দিন আগে জাতিসংঘের এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে রোহিঙ্গাদের হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ এবং বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগের দায়ে মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ শীর্ষ ছয়জন সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত এবং বিচার হওয়া দরকার।

এছাড়া, ঘটনা বিচারের জন্য বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানোর আহ্বান জানানো হয়েছে জাতিসংঘের এ প্রতিবেদনে।

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর অভিযান শুরুর পর সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা ঘরবাড়ি ফেলে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। নতুন এবং পুরাতন মিলিয়ে ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের সংখ্যা এখন প্রায় ১০ লাখের বেশি।

বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে হত্যা, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া, লুটপাট, অপহরণ আর ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন।

উপরে