ঢাকা, বুধবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৫
আপডেট : ১৪ অক্টোবর, ২০১৮ ১২:৪৪

মুম্বাইতে আবার 'অবৈধ বাংলাদেশী 'খোঁজার হিড়িক

ভোরের বাংলা ডেস্ক
মুম্বাইতে আবার 'অবৈধ বাংলাদেশী 'খোঁজার হিড়িক

ভারতের আসাম রাজ্যে জাতীয় নাগরিকপঞ্জী বা এনআরসি নিয়ে তুমুল বিতর্কের মধ্যেই দেশের আরও নানা প্রান্তে অবৈধ বিদেশিদের শনাক্ত করার দাবি তুলছে বিজেপি-সহ নানা রাজনৈতিক দল।

আর এই পটভূমিতেই আরও একবার আক্রমণের নিশানায় মুম্বাইয়ের কথিত অবৈধ বাংলাদেশীরা, যাদের দেশ থেকে তাড়ানোর দাবি উঠছে প্রকাশ্যেই।

কিন্তু এই ইস্যু নিয়ে ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী কি আদৌ ভাবিত, না কি দেশে ভোটের আগে শ্রমজীবী এই গরিব মানুষগুলোকে আরও একবার রাজনৈতিক বলির পাঁঠা বানানোর চেষ্টা চলছে?

আরব সাগরের তীরে নতুন করে এই বাংলাদেশী তাড়ানোর ডাক ওঠায় শহরের বাংলাভাষী মুসলিমরাই বা কী বলছেন? মুম্বাইতে গিয়েছিলাম তারই খোঁজখবর নিতে।

ভায়ান্দারের 'বাংলাদেশ বস্তি'

মুম্বাইয়ের দক্ষিণতম প্রান্তে চার্চগেট স্টেশন থেকে ছাড়া যে লোকল ট্রেনগুলো শহরের লাইফলাইন হিসেবে কাজ করে, তার অনেকগুলোরই রুটের একেবারে শেষপ্রান্তে শহরতলির ভায়ান্দার স্টেশন।

আর সেই স্টেশন থেকে একটু দূরেই শহরের গরিবগুর্বো মানুষের এক বিশাল কলোনি, লোকের মুখে মুখে যার নাম 'বাংলাদেশ বস্তি'।

সম্প্রতি ভায়ান্দারের এই বস্তির নাম উঠে এসেছে দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবের আলোচনাতেও।

শাসক বিজেপির ভাইস-প্রেসিডেন্ট ও এমপি বিনয় সহস্রবুদ্ধে জানাচ্ছেন, "সুদূর বাংলাদেশ থেকে অসংখ্য লোকজন অবৈধভাবে ভারতে ঢুকে ভায়ান্দারে পাড়ি দিচ্ছে। মুম্বাইয়ের আশেপাশে টিলা-জঙ্গলগুলো দখল করে তারা গড়ে তুলছে বসতি, চালাচ্ছে নানা বেআইনি ধান্দা। এমন কী পুলিশ হানা দিতে গেলেও তাদের পাথর ছুঁড়ে তাড়িয়ে দিচ্ছে এই বাংলাদেশীরা!"

বিজেপির এই দাপুটে নেতার হুঁশিয়ারি, অবৈধ বাংলাদেশীর সমস্যা শুধু আসামের নয় - মুম্বাই-সহ গোটা দেশেই তা 'টাইম বোমার মতো টিক-টিক' করছে।

তার দলের সভাপতি অমিত শাহ তো আরও একধাপ এগিয়ে ভারতে থাকা বাংলাদেশীদের কখনও 'ঘুষপেটিয়া' (অনুপ্রবেশকারী), কখনও 'দীমক' (উইপোকা) বলেও গালাগাল করছেন।

কিন্তু যেমনটা তারা বলছেন, সত্যিই কি বাংলাদেশীরা ছেয়ে ফেলছেন মুম্বাই শহরতলির বস্তিগুলো?

ভায়ান্দারের তথাকথিত 'বাংলাদেশ বস্তি'তে খোঁজখবর করতে গিয়ে কিন্তু চমকের পর চমক। বস্তির বাসিন্দা ঊষা, মুকেশরা জানাচ্ছেন তাদের কলোনির নাম বাংলাদেশের নামে হলেও সেখানে একঘর বাঙালি পর্যন্ত নেই।

বরং বাইরের একটা দেশের নামে কেন তাদের কলোনির নাম, সেটাই তাদের এতদিন ভাবিয়ে এসেছে।

আরও পুরনো বাসিন্দাদের কাছে খোঁজখবর করতে গিয়ে জানা গেল, চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর আগে যখন পুরনো ঝোপড়পট্টি ভেঙে এই কলোনি গড়ে তোলা হয়, তখন বাংলাদেশ যুদ্ধে জেতার সম্মানেই কিন্তু বস্তির নামকরণ করা হয়েছিল বাংলাদেশের নামে।

কিন্তু না, কোনওদিন কোনও বাঙালি এই তল্লাটে কখনওই ছিল না।

অবৈধ বাংলাদেশীদের নিয়ে গবেষণার জন্য ফেলোশিপ

অথচ এই 'বাংলাদেশ বস্তি' নামটা ব্যবহার করেই কথিত অবৈধ বিদেশীদের বিরুদ্ধে মুম্বাইয়ের আবেগকে খুঁচিয়ে তুলতে চাইছেন বিজেপি নেতারা।

ভায়ান্দারের এই বাংলাদেশ বস্তি থেকে কয়েক মাইল দূরেই বিশাল গ্রাম জুড়ে আরএসএস-এর থিঙ্কট্যাঙ্ক তথা এনজিও 'রামভাউ মহালগি প্রবোধিনী'র সদর দফতর।

অবৈধ বাংলাদেশীরা মুম্বাইয়ের অর্থনীতিতে কী ধরনের বিরূপ প্রভাব ফেলছে তা নিয়ে বিশদ গবেষণার জন্য একটি ফেলোশিপও চালু করছেন তারা।

ওই প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক রবীন্দ্র সাঠে মনে করেন এই ইস্যুতে কোনও আপস করারই অবকাশ নেই।

মি সাঠে বিবিসিকে বলছিলেন, "আমরা ধর্মের ভিত্তিতে মানুষের সঙ্গে বৈষম্য করতে চাই না। কিন্তু অবৈধ বাংলাদেশীদের প্রশ্নটা জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত, আর সেটাকে দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বেই রাখা উচিত।"

"আসামের সাবেক রাজ্যপাল এস কে সিনহা তার এক রিপোর্টে বলেছিলেন, নিম্ন আসামের পাঁচটি জেলায় যেভাবে বাংলাদেশী মুসলিমরা ঢুকেছে তাতে তারা একদিন বাংলাদেশের সঙ্গে সংযুক্তিরও দাবি জানাতে পারে। ফলে আমাদের সতর্ক হতে হবে এখনই।"

ড: সাঠে-র মতে, অবৈধ বাংলাদেশীদের ভারত থেকে ডিপোর্ট করা ছাড়া কোনও উপায় নেই, আর দিল্লি যদি সেটা দক্ষতার সঙ্গে করতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট হওয়ারও কোনও আশঙ্কা নেই।

মহারাষ্ট্রে ক্ষমতায় থাকা বিজেপির সঙ্গে তাদের পুরনো শরিক শিবসেনার সম্পর্ক এখন খুব ভাল নয়, কিন্তু এই একটা প্রশ্নে অন্তত দুটো দলের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই।

শিবসেনার নেত্রী শ্বেতা পারুলেকর যেমন বলছিলেন, "শহর মুম্বাই যেহেতু আর আড়ে-বহরে বাড়তে পারবে না - তাই অবৈধ বাংলাদেশীদের ঢল অব্যাহত থাকলে মুম্বাই সেই চাপ আর নিতে পারবে না, শহরের অবকাঠামো মুখ থুবড়ে পড়বে।"

উপরে