ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
আপডেট : ২ মার্চ, ২০১৯ ২১:৩০

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দুই দেশই

অনলাইন ডেস্ক
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দুই দেশই

গত কয়েকমাস ধরে এমনিতেই গতি কমে গিয়েছিলো ভারতের অর্থনীতির। এর মধ্যে প্রতিবেশি পাকিস্তানের সঙ্গে চলমান উত্তেজনা, দেশটির জন্য মড়ার উপর খাড়ার ঘা হয়ে এসেছে। দেশটির আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এর প্রভাব পড়বেই। একই সঙ্গে সঙ্কোচনের শঙ্কার মুখে রয়েছে দেশটির অভ্যন্তরীন অর্থনীতি। পাকিস্তানের পরিস্থিতি আরো খারাপ। দেশটি এমনিতেই স্বরণকালের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এসময়েই যুদ্ধের সম্ভাবনা দেশটির সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের হতাশার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। রীতিমত ধ্বস নেমেছে পুঁজিবাজারেও। নিকট দুই প্রতিবেশী সরাসরি সংঘাতে লিপ্ত হলে বাংলাদেশ এর প্রভাব বলয়ের বাইরে থাকবে এটি বলা যাবেনা।দ্রুত বিকাশমান এই অর্থনীতিটির জন্যও থাকছে সমূহ ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা। ইকোনমিক টাইমস, মার্কেট ওয়াচ, ব্লুমবার্গ।
চলমান উত্তেজনার প্রভাব ভারতের অর্থনীতিতে এর মধ্যেই বেশ ভালোভাবে পড়েছে। দেশটির সম্ভাব্য বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় ধরণের শঙ্কা। দেশটির অভ্যন্তরীন সম্পদ এবং রুপি ইতোমধ্যেই আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেছে। এটি অবশ্যই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে বাধ্য। গত ডিসেম্বরে শেষ হওয়া প্রান্তিকে এমনিতেই কমে গেছে প্রবৃদ্ধির গতি। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার জন্য পাকিস্তানকে ভারত দায়ি করলে শুরু হয় দুই দেশের মধ্যে টানটান উত্তেজনা। এরপরই দুই দেশ ‘টিট ফর ট্যাট’ আকাশ হামলা চালায়। এই ঘটনায় আটক হন একজন ভারতীয় পাইলট। পরে কূটনৈতিক উপায়েই তাকে ছেড়ে দেয় পাকিস্তান। যুদ্ধ ছাড়াই এই সঙ্কটের সমাপ্তি হলেও যুদ্ধের শঙ্কায় পুঁজি ও অর্থবাজারে অস্থিরতা দেখা দেয় দুই দেশেই। বাজার থেকে আপাতত হাত গুটানো বিনিয়োগকারীরা, আবারও অস্থিরতার শঙ্কায় নিজেদের মূল্যবান বিনিয়োগ আপাতত বাজার থেকে দূরেই রাখছেন। এই বিরতি দীর্ঘমেয়ািদে দুই দেশের বাজারকেই ক্ষতিগ্রস্থ করবে।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক ডিবিএস ব্যাংকের অর্থনীতিবীদ রাধিকা রাও ইকোনমিক টাইমসকে বলেন, ‘এই ঘটনা দুই দেশের জন্যই এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ঘটলো। ভারত তাদের সাধারণ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে আর পাকিস্তান ভাবছে কিভাবে ভঙ্গুর অর্থনৈতিক অবস্থা কাটিয়ে উঠা যায়।’ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত তথ্যে জানা যায় ডিসেম্বর থেকে ৩ মাসে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে গত বছরের তুলনায় ৬.৬ শতাংশ। এর আগে ব্লুমবার্গের এক জরিপে ৬.৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাষ করা হয়েছিলো। আর জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মেয়াদে এই প্রবৃদ্ধি ছিলো ৭ শতাংশ। ভারতে জিডিপির দুই তৃতীয়াংশই অভ্যন্তরীণ ব্যয় নির্ভর। এ কারণে এটি বলা যায় না, ধীরগতির বিশ^ অর্থনীতির কারণে ভারতের প্রবৃদ্ধি কমেছে। বাধ্য হয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্ণর শক্তিকান্ত দাস ইতোমধ্যে মুদ্রানীতি শিথিল করার তথা ভাবতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যেই খাদ্য ও জ্বালানি খাত উল্লম্ফিত হয়েছে। এটিকে ঠেকাতে বড় ধরণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকটির লক্ষ্য মূল্যস্ফিতি ৪ শতাংশের নিচে রাখা।
পাকিস্তান আরো অনেক বেশি দূর্বিসহ সময় পার করছে। বিনিয়োগ এবং সহায়তার আশায় ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকেই প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বিশ্ব জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তিনি কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিনিয়োগ পেতেও শুরু করেছিলেন। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সাম্প্রতিক সফরে পাকিস্তান ২ হাজার কোটি ডলারের সৌদি সরকারি বিনিয়োগ পেয়েছে। দেশটির সত্যিকারের লক্ষ্য বেসরকারি বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করা। এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা নিশ্চিতভাবেই পাকিস্তানের এই প্রচেষ্টায় বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে। ইমরান খান উত্তেজনার শুরু থেকেই শক্তভাবে চেষ্টা করছেন, যাতে কোন সংঘাতের উদ্ভব না হয়। কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হবেন। কারণ দীর্ঘস্থায়ী কোন সংঘাতের প্রাথমিক প্রভাব তাদের উপরেই পড়বে। পাকিস্তানের প্রধান পুঁজি ও মুদ্রা বাজারগুলোতেও এর ছাপ সুস্পষ্ট। রাধিকা রাও বলেন, ‘পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে ভারতের যুদ্ধের প্রয়োজন নেই। এভাবে যদি চাপ অব্যাহত রাখে ভঙ্গুর অর্থনীতিটিকে খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে।’
যদি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ এটি এড়িয়ে যেতে পারবে না। সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবির বিবিসিকে বলেন, ‘বাংলাদেশকে বাইরের বিশ্বের মানুষ তো দক্ষিণ এশিয়ার বাইরের দেশ হিসেবে দেখছে না। তাই দক্ষিণ এশিয়ায় যখন উত্তেজনা বা যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়, তখন তারা বাংলাদেশকে তার মধ্যেই দেখবার একটা প্রবণতা মধ্য দিয়েই যাবে। অবশ্যই আমরা বিনিয়োগের কথা ভাবি, ব্যবসা বাণিজ্যের কথা ভাবি, বাইরে লোক পাঠানোর কথা বলি, এইসব বিষয়গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। কুটনৈতিকভাবে এটা একটা বড় জায়গা।’

উপরে