ঢাকা, শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫
আপডেট : ৯ জুন, ২০২০ ১৪:৫৮

মঙ্গলে মহাকাশযান পাঠাচ্ছে আমিরাত

মঙ্গলে মহাকাশযান পাঠাচ্ছে আমিরাত


অনলাইন ডেস্ক
সংযুক্ত আরব আমিরাতের জন্য জ্বালানি তেলের ব্যবসা আর যথেষ্ট মনে হচ্ছে না। তাদের দৃষ্টি এখন মহাকাশে। তারা পাঁচ বছরের মতো সময় নিয়ে একটি মহাকাশ তৈরি করেছে।
আগামী সপ্তাহে এতে জ্বালানি তেল ভর্তি করা শুরু হবে। মানবহীন এই মহাকাশযানটির নাম দেয়া হয়েছে 'আমাল'। আরবিতে যার অর্থ 'আশা'। সবকিছু ঠিকঠাক গেলে ৪৯৩ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরত্বের মঙ্গলগ্রহে পৌঁছাতে মহাকাশযানটির সময় লাগবে আনুমানিক সাত মাস।
মঙ্গলগ্রহের এক বছর ৬৮৭ দিনে। এই পুরো সময় ধরে মহাকাশযানটি মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করবে। মঙ্গল গ্রহেরে কক্ষপথ একবার ঘুরতে এর সময় লাগবে ৫৫ ঘণ্টা।
গ্রহের চারিদিকে ঘুরে ঘুরে গোলাপি রঙের এই গ্রহটি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করবে আমাল।
এই প্রকল্পের পরিচালক সারাহ আল আমিরি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন দেশটির তরুণ বিজ্ঞানীদের জন্য এই মিশন 'স্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং' পেশায় যুক্ত হওয়ার দ্বার উন্মুক্ত করবে।
আগামী ১৪ জুলাই জাপানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত দ্বিপ তানেগাশিমা থেকে মহাকাশযানটি উৎক্ষেপণ করার কথা রয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে প্রকল্পের সাথে যুক্ত প্রকৌশলীদের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়েছে। তাই এর যাত্রা ইতিমধ্যেই একবার পিছিয়েছে।
জাপানিজ 'রকেট' দ্বারা চালিত মহাকাশযানটিতে তিন ধরনের 'সেন্সর' থাকবে। যার কাজ হবে মঙ্গলগ্রহের জটিল বায়ুমণ্ডল পরিমাপ করা। মহাকাশযানটিতে খুব শক্তিশালী 'রেজুলুশন' সম্বলিত একটি 'মাল্টিব্যান্ড' ক্যামেরা থাকবে। যা সূক্ষ্ম বস্তুর ছবি তুলতে সক্ষম।
গ্রহটির বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগ ও নিম্নভাগ পরিমাপ করার জন্য থাকবে একটি 'ইনফ্রারেড স্পেকটোমিটার'। যা তৈরি করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি। তৃতীয় আরেকটি সেন্সর গ্রহটির অক্সিজেন ও হাইড্রোজেনের মাত্রা পরিমাপ করবে।

সারাহ আল আমিরি বলেন, এই মিশনের অন্যতম কাজ পানি তৈরিতে প্রয়োজনীয় দুটি গুরুত্বপূর্ন উপাদান কেন মঙ্গলগ্রহের বায়ুমণ্ডলে থাকতে পারছে না, তা বোঝার চেষ্টা করা।
যুক্তরাজ্যের সায়েন্স মিউজিয়াম গ্রুপের পরিচালক স্যার ইয়ান ব্ল্যাচফোর্ড বলেছেন, ‘এর আগে যত মহাকাশযান মঙ্গলগ্রহে পাঠানো হয়েছে সেগুলো ভূতত্ত্বের দিকে মনোযোগ দিয়ে কাজ করেছে। কিন্তু এবার মঙ্গলগ্রহের জলবায়ু সম্পর্কে একটি সামগ্রিক চিত্র পাওয়া যাবে।’
মহাকাশবিজ্ঞানে আরব আমিরাতের যোগসূত্র নতুন নয়। এর আগে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করার জন্য একটি রকেট পাঠিয়েছিল দেশটি। গত বছর রাশিয়ান একটি মহাকাশযানে করে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে গিয়েছিলেন আমিরাতের প্রথম নাগরিক।
তবে প্রথম আরব হিসেবে মহাকাশে গেছেন সৌদি আরবের যুবরাজ সুলতান বিন সালমান আল-সদ। ১৯৮৫ সালে মার্কিন একটি মহাকাশযানে করে গিয়েছিলেন তিনি।
তবে আরব আমিরাতের মঙ্গলগ্রহে মহাকাশযান পাঠানোর এই চেষ্টা যে কোনো আরব দেশের মধ্যে সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী। ব্রিটেনের ওপেন ইউনিভার্সিটির মহাকাশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক মনিকা গ্রেডি বলছেন, এই মিশন মহাকাশ যাত্রার ক্ষেত্রে একটি বিশাল পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
এর আগে বিশ্বের বড় শক্তিশালী দেশগুলোই মহাকাশ বিজ্ঞানে প্রাধান্য বজায় রেখেছে।
তিনি বলছেন, ‘মঙ্গলগ্রহ সম্পর্কে একটি অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে এই মিশন একটি সত্যিকার সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার মতো পদক্ষেপ। কারণ এতে বোঝা যায় ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি এবং মার্কিন নাসা ছাড়া অন্য কোন দেশও মঙ্গলগ্রহে যেতে পারে। আশা করি তারা যেন সেখানে পৌঁছাতে পারবে। মঙ্গলগ্রহে পাঠানো মিশন ব্যর্থ হওয়ার একটি লম্বা ইতিহাস রয়েছে।’
এই প্রকল্পের নেতৃবৃন্দ বিশ্বকে জানান দিচ্ছেন, সেই আট শতাব্দী আগে, এখনকার সময়ের অনেক উন্নত দেশের চেয়েও আরব বিজ্ঞানীরা অনেক অগ্রসর ছিলেন।
সেসময় বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের দিক থেকে তারা ছিলেন সামনের সারিতে। আজকের দিনে দুবাইয়ের শাসক উচ্চাকাঙ্ক্ষী এই মিশনের মাধ্যমে সেই সাংস্কৃতিক অহংকারকে আবারও উদ্দীপ্ত করতে চান।
সেই সাথে জ্বালানি তেলের উপরে যে নির্ভরশীলতা তা থেকে নতুন কিছুতে সরে আসতে চান। যদি এই মিশন সফল হয় তবে দেশটি প্রতিষ্ঠার ঠিক ৫০ বছরে এসে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেবে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা

উপরে