মোদির সফরে পাঁচ থেকে ছয়টি চুক্তির বিষয়ে আলোচনা
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামী মার্চে ঢাকা সফরে আসছেন। তার সফরের আগেই বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য ও পানিসম্পদ সচিব পর্যায়ে পৃথক বৈঠক হবে। এ ছাড়া নরেন্দ্র মোদির সফরের আগে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকও হবে। শুক্রবার বাংলাদেশ-ভারত ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) বৈঠক শেষে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
দিল্লি থেকে কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বৈঠকে মার্চে নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময়ে দুই দেশের অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, সীমান্ত হত্যা বন্ধে যৌথ সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং বাণিজ্য সহযোগিতা বিস্তৃত করার বিষয়ে পাঁচ থেকে ছয়টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। শুক্রবারের এফওসি বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং ভারতের পক্ষে সে দেশের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা।
বাংলাদেশের পক্ষে বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামসসহ পররাষ্ট্র, বাণিজ্য ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা। ভারতীয় প্রতিনিধি দলে সে দেশের পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য, অর্থ এবং জলশক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দুই দেশের মধ্যে নিবিড় বন্ধুত্বের ঐতিহাসিক সহযোগিতার সম্পর্ক আরও বিস্তৃত ও জোরদারে উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে আগামী মার্চে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে কভিড-১৯ ভ্যাকসিন, বাণিজ্য, কানেক্টিভিটি, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, পানিবণ্টন বিষয়ে সহযোগিতা আরও জোরদার করার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ২০ লাখ ডোজ কভিড-১৯ ভ্যাকসিন উপহার হিসেবে পাঠানোয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারত সরকারকে ধ্যনবাদ জানানো হয় এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। ভারতের পক্ষ থেকে আবারও বলা হয়, ভারতের নীতিতে প্রতিবেশীই প্রথম এবং বাংলাদেশ সবার আগে, সেটাই আবারও প্রমাণ হয়েছে কভিড-১৯ ভ্যাকসিন উপহার পাঠানোর মধ্য দিয়ে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, বৈঠকে ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটভুক্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়। উভয়পক্ষই প্রকল্পের কাজ আরও এগিয়ে নিতে তহবিলের ব্যবহার বাড়ানো এবং প্রয়োজনীয় অনুমোদন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়।
দিল্লির কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বৈঠকে নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর ২৬ মার্চে অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্বনির্ধারিত তারিখটিই চূড়ান্ত হয়েছে। বৈঠকে চূড়ান্ত হয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী সফরকালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। ওই বৈঠকে পাঁচ থেকে ছয়টি নতুন সহযোগিতা চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। বিশেষ করে সীমান্ত হত্যা বন্ধে যৌথ সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য সম্পর্ক আরও বিস্তৃত করা এবং অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন বিষয়ে একাধিক চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। এ বিষয়গুলো চূড়ান্ত করতেই স্বল্পতম সময়ের মধ্যে দুই দেশের স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য এবং পানিসম্পদ সচিব পর্যায়ে পৃথক বৈঠক এবং যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে অভিন্ন নদীর বিশেষ করে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়ে আগামী মার্চেই দৃশ্যমান অগ্রগতির সম্ভাবনা তৈরির বিষয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া সফরকালে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীরা যৌথভাবে ফেনী নদীর ওপর নির্মিত সেতু উদ্বোধনসহ একাধিক প্রকল্পেরও উদ্বোধন করতে পারেন বলেও আলোচনা হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, কভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে 'এয়ার বাবল ট্রাভেল এগ্রিমেন্ট' আগামী এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই চুক্তির মেয়াদ ৩১ জানুয়ারি শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে তা এখন ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ছে। ভারতীয় ঋণ প্রকল্পের বাস্তবায়ন বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা সম্পর্কে সূত্র জানায়, বৈঠকে ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটভুক্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন বিষয়ে অত্যন্ত ধীরগতির বিষয়টি উঠে আসে। প্রকল্প গ্রহণ, প্রকল্পে অর্থ ছাড় এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অনুমোদনে দীর্ঘসূত্রতার বিষয়টি উভয়পক্ষই তুলে ধরে। অনেক প্রকল্পে দীর্ঘ সময় ধরে জমি অধিগ্রহণের কাজটিই শেষ না হওয়ার চিত্রও উঠে আসে। আলোচনায় ভারতীয় ঋণের প্রকল্পের কাজে গতি বাড়ানোর জন্য অর্থ ছাড় এবং অনুমোদন প্রক্রিয়া আরও দ্রুত করার ব্যাপারে ঐকমত্য হয়। এছাড়া তদারকি আরও কঠোর করার মাধ্যমে প্রকল্পের ধীরগতির কারণগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোতে গতি নিয়ে আসার ব্যাপারেও দুই পক্ষ একমত হয়। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন শুক্রবার রাতে ভারতের সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। আজ শনিবার তিনি একটি কূটনৈতিক মতবিনিময় সভায় যোগ দেবেন এবং বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল প্রদর্শনী পরিদর্শন করবেন। আগামী রোববার তিনি ঢাকায় ফিরবেন।
