ভাষার ব্যবহারে সচেতন থাকতে হবে
১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে পূর্ববঙ্গ কর্ম শিবিরের অফিসে অনুষ্ঠিত সভা থেকে ১১ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি পতাকা দিবস পালনের ঘোষণা আসে। একই সঙ্গে ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রখ্যাত ভাষা সৈনিক অলি আহাদের লেখা থেকে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানা যায়। ৫২ ফেব্রুয়ারি ছিল আন্দোলন সংগ্রামের অগ্নিগর্ভ মাস। মায়ের ভাষার মর্যাদার রক্ষার চেতনায় সবাই তখন আন্দোলনমুখী। সবার লক্ষ্য একটাই মায়ের ভাষার মর্যাদা চাই। রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই। ফেব্রুয়ারির জাগরণ যুগ যুগ ধরে বাঙালি জাতির মধ্যে এখনো বিরাজমান। ফেব্রুয়ারি এলেই বাঙালির ভাষা প্রেম জেগে ওঠে। ভাষার প্রতি যত্নবান হওয়া শুধু ফেব্রুয়ারি মাসের আনুষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে রাখলে হবে না। এর জন্য প্রয়োজন আমাদের নাগরিক সচেতনতা।
বিশিষ্ট সাহিত্যিক নাসরীন জাহান বলেন, আমাদের বাংলা এত মিষ্টি আর মধুর ভাষা যা পৃথিবীর কোথাও পাওয়া যাবে না। রক্ত দিয়ে কেনা বাংলা ভাষার ব্যবহারে আমাদের সকলেরই সচেতন থাকা নৈতিক দায়িত্ব। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুস বলেন, ভাষা শিক্ষার প্রথম পাঠ আসে পরিবার থেকে। তাই বাবা মায়ের বিশেষ করে মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শিশু কীভাবে কথা বলবেন তা প্রথমেই মাই সন্তানের মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দেন। তাই আমাদের ভাষাকে মাতৃভাষা বলি। বই, পত্রপত্রিকা, গণমাধ্যমে নিজেদেরে ভাষার চর্চা সচল থাকে। পৃথিবীর সব দেশ তাদের মাতৃভাষা ব্যবহারে খুব সচেতন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের বিষয়ে পৃথিবীর বহু মানুষ খবর রাখে না। এর প্রচার প্রসারে বাঙালি জাতি হিসেবে আমাদেরই দায়িত্ব নিতে হবে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন বই ম্যাগাজিন তথ্যচিত্র প্রকাশ করা যেতে পারে। আমাদের সাহিত্যের অনুবাদ খুব বেশি প্রয়োজন। মাতৃভাষার ব্যবহারে সচেতনতা সম্পর্কে নাট্য ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, ভাষার ওপর নির্ভর করে সমাজ ও সভ্যতার অগ্রগতি। আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকেই হতে হবে আমাদের সার্বজনীন জীবনের মুখ্যবাহন। শিক্ষার ক্ষেত্রে, পারিবারিক ক্ষেত্রে, রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহারে অবশ্যই আমাদের সচেতন থাকতে হবে। কোনো ভাবেই ভাষার বিকৃতি করা চলবে না। একটি ভাষার জোর বা তার অন্তর্নিহিত শক্তির ওপর গড়ে ওঠে সেই জাতির সাহিত্য, সংস্কৃতি, সভ্যতা। আমাদের বাংলা ভাষা বিশ্ব সাহিত্যে অনেক সমৃদ্ধ। বাংলা ভাষাকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে। বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ সাহিত্যগুলো অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হবে। সার্বজনীন গ্রহণযোগ্য বাংলা ভাষা ব্যবহারে সরকারের পাশাপাশি গণমাধ্যমের ভূমিকাও গুরত্বপূর্ণ। গণমাধ্যমে ভাষার বিকৃত ব্যবহার আহত করছে ভাষাপ্রেমীদের। আলোচনা সেমিনার করেও শিশুরা যাতে মাতৃভাষা ভালো করে বলতে পারে এ ব্যাপারে বাবা মায়ের বিশেষভাবে সচেতন থাকতে হবে। কেননা একটি শিক্ষিত পরিবার নিশ্চয় তার সন্তানকে যত্রতত্র অশুদ্ধ বাংলা শেখাবেন না। তাই ভাষার ব্যবহারে প্রতিটি নাগরিকের সচেতন থাকাটা খুবই জরুরি ।
