বুলবুলের ইশতেহারের কড়া সমালোচনা আ.লীগের
রাজশাহী সিটি নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের নির্বাচনী ইশতেহারের সমালোচনা করেছে আওয়ামী লীগ।
বুধবার দুপুরে রাজশাহীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বুলবুলের ইশতেহারের কড়া সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এসএম কামাল হোসেন।
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘বুলবুলের ইশতেহারে উন্নয়নের কোনো রূপরেখা নেই। মানুষের চাওয়া-পাওয়ার কোনো প্রতিফলন নেই। তিনি ইশতেহারেই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন। মেয়র হওয়ার পর তিনি সরকারবিরোধী আন্দোলন করে বেড়ালে উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন কখন?’
মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল তার ১৮ দফা ইশতেহারের শেষ দফায় বলেছেন, জনগণের ভোটের অধিকার, গণতন্ত্র, ন্যায় বিচার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তার আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। এছাড়া কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সমর্থন দিয়ে বুলবুল বলেছেন, তিনি মেয়র নির্বাচিত হলে কোটা প্রথা সংস্কার করে মেধাবীদের চাকরির নিয়োগ প্রাপ্তিতে পূর্ণ সহযোগিতা করা হবে।
এসব প্রতিশ্রুতির সমালোচনা করে এসএম কামাল হোসেন বলেন, ‘ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সরকারের কাজ। আর কোটা নিয়ে আন্দোলন কোনোভাবেই নগর ভবনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এটা মেয়রেরও কাজ নয়। কিন্তু বুলবুলের এই ইশতেহারের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, কোটাবিরোধী আন্দোলন বিএনপির মদদে চলছে এবং এর সঙ্গে বিএনপি-শিবিরের সমর্থক ছাত্ররা জড়িত।’
মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে কর্মচারীদের ঠিকমতো বেতনও দিতে পারেননি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। তবে এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে বুলবুল বলেছেন, তিনি নির্বাচিত হলে কর্মচারীদের দুই ঈদ ও পয়লা বৈশাখে উৎসব ভাতা দেওয়া হবে। কর্মচারীর মৃত্যুতে দেওয়া হবে এককালীন ৫০ হাজার টাকা অনুদান। অথচ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল যেদিন মেয়রের দায়িত্ব ছেড়ে এসেছেন সেদিন সিটি করপোরেশনের দেনা ছিল প্রায় ৮০ কোটি টাকা।
বিষয়টি তুলে ধরে আওয়ামী লীগের রাজশাহী সিটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য কামাল হোসেন বলেন, ‘গত ঈদের আগে কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার ভয়ে মেয়র পালিয়েছিলেন। রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা ও আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন অন্য একটি খাত থেকে টাকার ব্যবস্থা করে ঈদের আগে কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। তাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। বেতন যে মেয়র বেতন দেওয়ার ভয়েই পালিয়ে থাকেন, সে মেয়র উৎসব ভাতা দেবেন কীভাবে।’
মঙ্গলবার মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের ইশতেহার ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তিনি সরকারবিরোধী নানা বক্তব্য দেন। এসবের সমালোচনা করে এসএম কামাল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপি যতই ষড়যন্ত্র করুক না কেন, এতে আওয়ামী লীগের কোনো ক্ষতি নেই। দেশের একের পর এক নির্বাচনে তা প্রমাণিত হচ্ছে। সেসব নির্বাচনে প্রমাণিত হচ্ছে, দেশের মানুষ বিএনপির সাথে নেই।’
‘আমরা জানতে পেরেছি, আগামী ৩০ জুলাই ভোটকেন্দ্র দখলসহ নির্বাচনের আগে শহরে বিশৃঙ্খলা করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলবো, যারাই সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা হয়ে দাঁড়াবে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। এক্ষেত্রে যদি আওয়ামী লীগের লোক বাধা হয়, তাকেও গ্রেপ্তার করতে হবে।’ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট বানচালের চেষ্টা করা হলে আওয়ামী লীগ নিজেও প্রতিরোধ গড়ে তুলবে বলে ঘোষণা দেন কামাল।
‘বিএনপি নেতারা বিভিন্ন বস্তিতে গিয়ে বলছেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন মেয়র নির্বাচিত হলে বস্তিবাসীকে উচ্ছেদ করা হবে। সেখানে নির্মিত হবে পার্ক। এভাবে অপপ্রচার করে ভোটারদের মাঝে আওয়ামী লীগ ভীতি তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন- যার ঘর নেই, তাকে বাড়ি করে দেব। যে দলের প্রধান এই ঘোষণা দিতে পারেন, সে দলের কোনো নেতা কারও ঘর ভেঙে দিতে পারেন না।’
বিএনপির নেতাদের উস্কানিমূলক বক্তব্য, মিথ্যাচার ও নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে মহানগর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নওশের আলী, সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাইমুল হুদা রানা, সাংগঠনিক সম্পাদক আসলাম সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
