ঢাকা, মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৫
আপডেট : ২৫ জুলাই, ২০১৮ ১৯:৪০

বিস্ফোরণকাণ্ডে ‘বেকায়দায়’ বিএনপি, আ.লীগের ভয় ‘অপপ্রচার’

নিজস্ব প্রতিবেদক
বিস্ফোরণকাণ্ডে ‘বেকায়দায়’ বিএনপি, আ.লীগের ভয় ‘অপপ্রচার’

রাজশাহী সিটি নির্বাচনে বিএনপির পথসভায় গত ১৭ জুলাই হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটলো। বিএনপি এর দায় চাপালো আওয়ামী লীগের ওপর। কিন্তু বিএনপির দুই নেতার টেলিফোন আলাপের কথোপকথন ফাঁস হওয়ায় প্রকাশ পেল, ভোটারদের সহমর্মিতা পেতে বিএনপির নেতাকর্মীরাই এই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারের সময় এমন বিস্ফোরণকাণ্ড নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে বিএনপি।

দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মী এবং সমর্থকরাও বিষয়টি নিয়ে নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ। ফলে জয় নিয়ে খুব একটা দুশ্চিন্তা করছেন না আওয়ামী লীগের নেতারা। তবে দলটির নেতারা ভয় পাচ্ছেন অপপ্রচারকে। তারা বলছেন, প্রচারের নামে অপপ্রচারে নেমেছেন বিএনপি নেতারা। বিস্ফোরণকাণ্ড ফাঁস হওয়ায় তারা এখন অপপ্রচারকেই নির্বাচনে জয়ের কৌশল হিসেবে নিয়েছেন।

তবে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের দাবি, তারা কোনো অপপ্রচারে নেই। বরং আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের হুমকি-ধামকিতে তাদের নেতাকর্মীরা ঠিকমতো প্রচারই চালাতে পারছেন না।

বুধবার নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগকালে বুলবুল বলেন, ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা পাড়া-মহল্লায় বিএনপির নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দিচ্ছেন। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে প্রতিনিয়ত অভিযোগ করলেও কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।

দুপুরে মহানগর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। সেখানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সিটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য এসএম কামাল হোসেন বলেন, ‘বিএনপি নেতারা বিভিন্ন বস্তিতে গিয়ে বলছেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন মেয়র নির্বাচিত হলে বস্তিবাসীকে উচ্ছেদ করা হবে। সেখানে নির্মিত হবে পার্ক। এভাবে অপপ্রচার করে ভোটারদের মাঝে আওয়ামী লীগ ভীতি তৈরি করা হচ্ছে। এই নির্বাচনে তাদের ভয় বিএনপির এই অপপ্রচার।’

কামাল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন- যার ঘর নেই, তাকে বাড়ি করে দেব। যে দলের প্রধান এই ঘোষণা দিতে পারেন, সে দলের কোনো নেতা কারও ঘর ভেঙে দিতে পারেন না।’

‘নির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত জেনে তারা অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন। এটাই এখন তাদের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে।’

বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল মঙ্গলবার তার ১৮ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেন। ইশতেহারের তিনি মেয়র নির্বাচিত হলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন জোরদারের ঘোষণা দেন। সমর্থন দেন কোটাবিরোধী আন্দোলনকে। এসব উল্লেখ করে কামাল হোসেন বলেন, ‘বিএনপি প্রার্থী শুধু সরকার উৎখাতের স্বপ্ন দেখেন। তার ইশতেহারে এসব আন্দোলনের হুমকি তা প্রমাণ করেছে। নির্বাচন নিয়ে তিনি প্রথম থেকেই ষড়যন্ত্র করছেন, তাই নিজেদের পথসভায় নিজেরাই বোমা হামলা চালিয়েছেন।’

তবে বিএনপি নেতারা দাবি করছেন, বোমা হামলা নিয়ে বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু ও জেলার সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টুর বলে যে কথোপকথন প্রকাশ করা হয়েছে, তা প্রযুক্তির কারসাজি।

নেতারা এমন দাবি করলেও এর প্রভাব পড়েছে দলটির কর্মী-সমর্থক এবং ভোটারদের মাঝে। ওয়ার্ড পর্যায়ের কয়েকজন বিএনপি নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। তারা বলছেন, ওই বিস্ফোরণের পর দলটির অনেক কর্মী ধানের শীষের প্রচারে মাঠে নামতে চাইছেন না।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ‘বিএনপি একটি সুসংগঠিত দল। দলের সব নেতাকর্মী ধানের শীষের জয়ের জন্য নিরলসভাবে কাজ করছেন। তবে অনেকেই গ্রেপ্তারের আতঙ্কে মাঠে নামতে পারছেন না। রাতে বাড়িতে ঘুমাতে পারছেন না।’

‘যারা প্রচারে মাঠে আছেন, তাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনের প্রচার শুরুর পর এ পর্যন্ত আমাদের বিভিন্ন স্তরের ৪৩ জন নেতাকর্মীকে বিনা কারণে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের নাম উল্লেখ করে এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করা হয়েছে।’

এদিকে বিএনপির পথসভায় হাতবোমা বিস্ফোরণের বিষয়ে অডিও রেকর্ড ফাঁস হওয়ার পর কেন্দ্রীয় নেতারা তেমন রাজশাহী আসছেন না। নগরীর সাগরপাড়া মোড়ে যে পথসভায় বিস্ফোরণ ঘটে সেখানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। ওই ঘটনার পর তিনি রাজশাহী ছেড়েছেন, আর আসেননি।

প্রচারের প্রথমদিকে প্রভাবশালী বিএনপি নেতা নাদিম মোস্তফা বুলবুলের সঙ্গে অভিমান ভুলে মাঠে নেমেছিলেন। কিন্তু তাকেও এখন দেখা যাচ্ছে না। আর ফাঁস হওয়া কথোপকথনে বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকতের নাম উঠে আসায় তাকেও প্রচার-প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে না।

এদিকে মঙ্গলবার বুলবুলের ইশতেহার ঘোষণা উপলক্ষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় তার পূত্রবধূ ও দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নিপুন রায় চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে রাজশাহী এলেও নগরীর কোথাও তিনি নির্বাচনি প্রচারে অংশ নিয়েছেন বলে জানা যায়নি।

বুলবুল এখন শুধু বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সিটি মেয়র মিজানুর রহমান মিনু ও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। তবে বুধবার তাদের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুকে নির্বাচনের মাঠে দেখা গেছে।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের পক্ষে মাঠে আছেন আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব সাইফুজ্জামান শেখরকেও মঙ্গলবার লিটনের সঙ্গে প্রচারে অংশ নিতে দেখা গেছে। সেদিন খুলনার নব-নির্বাচিত মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক এবং গাজীপুরের নব-নির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকেও তাদের সঙ্গে প্রচারে অংশ নেন।

তবে খালেক ও জাহাঙ্গীর প্রচারে অংশ নিতে পারবেন কি না, তা জানাতে মঙ্গলবার বিকালে তাদের চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

রাজশাহী সিটি নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার আতিয়ার রহমান বলেন, ‘গণমাধ্যমে আমরা দুই নব-নির্বাচিত মেয়রকে প্রচারে অংশ নিতে দেখে তাদের চিঠি দিয়ে জানাতে বলেছি যে, তারা এই প্রচারে অংশ নিতে পারবেন কি না। আমার জানামতে, শপথ হয়ে গেলে এবং দায়িত্ব গ্রহণ করলে জনপ্রতিনিধিরা প্রচারে অংশ নিতে পারেন না। তবে তাদের এসব কিছুই হয়নি। তারপরেও তারা প্রচারে অংশ নিতে পারবেন কি না, পারলে কেন, সে বিষয়গুলোই তাদের লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে।’

বুধবার নগরীর ভেড়িপাড়া মোড়ে পথসভা শেষে ওই এলাকায় গণসংযোগ করেন খায়রুজ্জামান লিটন। পথসভায় তিনি বলেন, ‘দলমত নির্বিশেষে সবাই নৌকার পক্ষে মাঠে নেমেছে। তাই তার পরাজয় ঠেকাতে বিএনপি অপপ্রচার করছে। কিন্তু যে আশা বা প্রত্যাশা নিয়ে সবাই নৌকার পক্ষে নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন, আমি মেয়র নির্বাচিত হলে সেই প্রত্যাশা পূরণে কাজ করব।’

জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের ছেলে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন। সেবার লিটন বিএনপি প্রার্থী বুলবুলকেই পরাজিত করেন। কিন্তু পরের নির্বাচনে বুলবুলের কাছেই লিটন পরাজিত হন। এই পরাজয়ের কারণ হিসেবে লিটন শাপলা চত্বর নিয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকেই দায়ী করেন।

উপরে