ঢাকা, মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৫
আপডেট : ৩১ আগস্ট, ২০১৮ ১৬:৫৫

ইভিএমের নিয়ন্ত্রক ইসিকেই তো মানি না: মওদুদ

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইভিএমের নিয়ন্ত্রক ইসিকেই তো মানি না: মওদুদ

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের যে প্রস্তুতি নির্বাচন কমিশন শুরু করেছে তা বিএনপি প্রত্যাখ্যান করেছে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ। বলেছেন, যেখানে বিএনপি ইভিএমের নিয়ন্ত্রক ইসিকেই মানে না সেখানে ইভিএমকে কীভাবে মানবে!

শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন, জাতীয় সংকট সমাধানের একমাত্র পথ’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম নামের বিএনপিপন্থী একটি সংগঠন।

সিদ্ধান্তের আগেই ইভিএম কেনার তোড়জোড় বিষয়ে কঠোর সমালোচনা করে মওদুদ বলেন, ‘নির্বাচনের মাত্র তিন মাস আগে ইভিএম মেশিন কেনার মধ্যে দিয়ে নির্বাচনকে বানচাল করার ষড়যন্ত্র করছে সরকার। নির্বাচনকে দুর্গম করার জন্য এই ইভিএম প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে।’

মওদুদ বলেন, ‘সংবাদপত্রে দেখলাম তিন হাজার ৮৩২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের মাত্র তিন মাস আগে এই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ বিরাট ষড়যন্ত্র। হঠাৎ করে এই রকম পদক্ষেপ মানুষের মনে প্রশ্নের উদ্রেগ করেছে।’

‘যে দেশে মেশিন হ্যাকিং করে পাচার করা যায়, সেই দেশে মেশিনে ভোট নিরাপদ হবে কীভাবে। এতো সিকিউরিটির মধ্যে হ্যাকিং করে টাকা নিয়ে যেতে পারে, তারপর এই মেশিন নিয়ন্ত্রণ করবে কে? পাসওয়ার্ড কার কাছে থাকবে? নির্বাচন কমিশনে?  প্রধান নির্বাচন কমিশনে আমাদের আস্থা নেই। আমরা ইভিএম ভোটিং ব্যবস্থাকে প্রত্যাখ্যান করি। তাদের এই প্রস্তাব দেশের সর্ববৃহৎ দল হিসেবে প্রত্যাখ্যান করছি।’

‘আমরা এই ইভিএম পদ্ধতি মানি না।এখানে দুর্নীতি জড়িত, বিজনেস ব্যবসার কমিশন এখানে জড়িত। যেখানে আমাদের ইভিএমের বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা নেই, এটা পরিচালনার জন্য ম্যানপাওয়ার নাই। গ্রামের মানুষ এটা ব্যবহারে অভ্যস্ত নয়, ভোট কোন বাক্সে পড়বে জানি না।’

মওদুদ বলেন, ‘যদি কোনো প্রার্থী ভোট পুনর্গণনা চান, আইনে  তো আছে। মেশিনে ভোট হলে ভোট পুনর্গণনা কী করে করা যাবে? সেটা অসম্ভব। মেশিনে কোনো বিবাদ দেখা দিলে? পুনর্গণনা কী করে হবে, তার ব্যবস্থা নাই। এই মেশিন যা বলবে সেটাই মেনে নিতে হবে। হ্যাকিং হলে কী করে জানা যাবে। সুতরাং এই সিস্টেমে মানুষের আস্থা নাই।’

বিশ্বে বিভিন্ন দেশে এই সিস্টেম তুলে দেয়া হচ্ছে জানিয়ে মওদুদ বলেন, ‘জার্মানিতে এই সিস্টেম তুলে দেয়া হয়েছে। ইতালি, আয়ারল্যান্ড এমনকি ভারত প্রত্যাখ্যান করেছে এই পদ্ধতি। ভারতে ৭৩% মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে।’

মওদুদ বলেন, ‘ভোটে স্বচ্ছতা থাকতে হবে। কোনো সন্দেহ থাকলে সেই ব্যবস্থা চালু করা উচিত নয়। এই সরকার মানুষের ওপর আস্থা হারিয়ে, যন্ত্রের ওপর আস্থা রেখেছে। আমি জানি এই মেশিন কোনোদিন ব্যবহার হবে না, এই প্রকল্পের টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করবে। এই কারণে এই প্রকল্প হাতে নিয়েছে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এখন বাংলাদেশের আপামর জনগণ মনে করে, এমনকি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও মনে করে যে, দেশে গণতন্ত্র নাই। আমাদের এখানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নাই, আইনের শাসন নাই, মানুষের মৌলিক অধিকার নাই এবং অত্যাচার নিপীড়ন গত দশ বছরে অতীতের সমস্ত রেকর্ডকে হার মানিয়েছে।’

মওদুদ বলেন, ‘এই অবস্থায় সরকার যে অবস্থান গ্রহণ করেছে, এই নির্বাচনে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনা, আমার দেশের মানুষের মধ্যে একটা পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনা, শান্তিপ্রিয়ভাবে একটি সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘১৪ দল ছাড়া সরকারের বিরুদ্ধে যারাই আছে সবাই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য বদ্ধপরিকর।  যারাই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে চান, দেশে একটি নির্বাচিত সরকার দেখতে চান, তারা এখন ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।’

মওদুদ বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য হবে। এই জন্য হবে, মানুষের মনের চাহিদা এটা। মানুষ চায় যে, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। আমরা যারা রাজনীতিক শক্তি, আমরা যারা পেশায় আছি, যারা সমাজ সেবায় আছি, আমরা যারা ছাত্র যুবকরা আছি, সবাই চাই দেশে একটি পরিবেশ ফিরে আসুক। বিচারব্যবস্থার এই অবস্থা দেখতে চাই না। আমরা সাগর-রুনির হত্যা দেখতে চাই না, আমরা শহীদুল আলমের মতো চিত্রশিল্পীকে গ্রেপ্তার দেখতে চাই না।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দুইজন শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়েছে, তাদের হত্যার প্রতিবাদে যে আন্দোলন হয়েছে, তাদের প্রতি যে অত্যাচার নির্যাতন করেছে, আমরা এগুলো আর দেখতে চাই না।’

মওদুদ বলেন, ‘যখন কোটা আন্দোলন হলো দুই দিন পরেই তাদের ওপর চড়াও হলো, গ্রেপ্তার করলো। দুইজন শিক্ষার্থী মারা গেলে প্রথমে বলল খুব ভালো। দুই দিন পরে তাদের ওপর চড়াও হলো। সেই জন্য আমার ভয় হয়, ড. কামাল হোসেন এবং বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মধ্যে যখন ঐক্যের আলোচনা হচ্ছে তখন ওবায়দুল কাদের সাহেব তাদের স্বাগত জানালেন। আর কয়েক দিন পরে যখন দেখবে এই ঐক্য জনপ্রিয় হচ্ছে, জনমতের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশে, তখন ঐক্যের বিরুদ্ধে এরাই সব চাইতে আগে আঘাত হানবে।’

‘কিন্তু পারবে না, এবার যতই ইভিএম পদ্ধতির চেষ্টা করেন, যতই মিথ্যাচার করতে থাকেন কোনো লাভ হবে না। বাংলাদেশের মানুষ এখন প্রস্তুত হয়েছে এই সরকারের অবসান ঘটাতে এবং সেই অবসান আসবে জাতীয় ঐক্যের মধ্য দিয়ে। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে, নিরপেক্ষ সরকার হবে, সংসদ ভেঙে দিয়েই নির্বাচন হবে।’

সংগঠনের উপদেষ্টা মেহেদী হাসান পলাশের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ আযম খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাছের মোহাম্মাদ রহমাতুল্লাহ, বিএনপি নেত্রী শায়লা আক্তার প্রমুখ।

উপরে