জানেন কেবল প্রধানমন্ত্রী: কাদের
নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে-কখন হবে নিজে কিছু জানেন না জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এই বিষয়ে একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া আর কেউ জানেন না। আর নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ নিয়ে কথা বলার দায়িত্ব কোনও মন্ত্রী বা নেতারও নয়, এই দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের।’
বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রাজশাহী মহানগর ও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সড়ক ও সেতুমন্ত্রী একথা বলেন।
বুধবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত আগামী ২০ দিনের মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে বলে জানান। অর্থমন্ত্রীর এই বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চান সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে।
কাদের বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার কখন হবে, আকারে কেমন হবে, কতটা ছোট হবে, ক্যাবিনেটে কতজন থাকবেন, তা একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। তিনি ছাড়া এ বিষয়ে আর কেউ জানেন না। আমি পার্টির সাধারণ সম্পাদক, আমিও এখন পর্যন্ত জানি না।’
তবে ২৭ ডিসেম্বর নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ হলেও সেটা বলার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের উল্লেখ করে কাদের বলেন, ‘এটা বলার দায়িত্ব সরকার কিংবা সরকারের কোনও মন্ত্রীর নয় কিংবা দলেরও কোনও নেতারও না। তাই আমাদের যার-যার এরিয়ার (আওতার) মধ্যে সীমিত থেকে রেসপনসিবল (দায়িত্বশীল) ভূমিকায় থাকলে দেশ, গণতন্ত্র ও সরকারের জন্য ভালো। নির্বাচন কমিশনকে বিব্রত করা আমাদের কাজ না। তারাই বলবে- কবে নির্বাচন হবে।’
‘আ.লীগকে বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্য হাস্যকর’
জাতীয় ঐক্যে আওয়ামী লীগকে যোগ দেয়ার আহ্বান জানালে যাবে কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণের ঐক্যে বিশ্বাসী। জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন হলে আমরাই ডাক দিবো। এখন আমরা জনগণের ঐক্য চাই।’
‘দেশের সবচেয়ে বড় দল হচ্ছে আওয়ামী লীগ। তাই এ দলের সমর্থক ও ভোটারদের বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্য হাস্যকর। আওয়ামী লীগ ছাড়া ১৪ দল আছে। এ দলগুলোকে বাদ দিয়ে যেটা হবে তা হলো সাম্প্রদায়িক ঐক্য। জাতীয় ঐক্যের নামে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ হচ্ছে। আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্য হয় নাকি? জাতীয় ঐক্য এ শব্দদয় ব্যবহার না করাই ভালো।’
তবে নির্বাচন মানেই হলো প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা মন্তব্য করে কাদের বলেন, ‘আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনে যাচ্ছি না। ঐক্যও হতে পারে। নির্বাচন আসলে জোট হবেই। আওয়ামী লীগও জোট করে, অন্যান্য দলও জোট করে। বিএনপিরও জোট আছে। আমাদের ১৪ দলীয় জোট আছে, জাতীয় পার্টির সঙ্গে আমাদের জোট হয়েছে, সরকারে আমরা এক সঙ্গে আছি। সেই মহাজোটের সরকারই তো বর্তমানে বাস্তবে দেশ চালাচ্ছে।’
তিনি বলেন, নির্বাচনে অনিয়ম, কারচুপি একমাত্র বিএনপির পক্ষে শোভাপায়। আওয়ামী লীগের ইতিহাসে অনিয়ম, জালিয়াতি নাই। নির্বাচনে কারচুপি করে ক্ষমতায় গেছে বিএনপি।
‘সবার মধ্যে এমপি হওয়ার প্রতিযোগিতায় দলে শৃঙ্খলা বিচ্যুতি’
রাজশাহীর নেতাদের ডাকার নিশ্চয় কারণ আছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখন সবার মধ্যে এমপি হওয়ার প্রতিযোগিতা, এজন্য দলের অভ্যন্তরে শৃঙ্খলা বিচ্যুতির কারণ ঘটেছে। প্রতিযোগিতাটা অসুস্থতা, অস্থিরতার দিকে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় তাদের ডাকতেই হবে।’
‘দায়িত্বশীল নেতারা যদি অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে তাহলে কর্মীরা কি শিখবে? নির্বাচন করার ইচ্ছা থাকতেই পারে। শুধু একজনই মনোনয়ন চাইবেন, তা তো নয়, অন্যরাও চাইতে পারেন। আমাদের পার্টির ফান্ডও আছে, ২৫ হাজার টাকা করে দিতে হবে, এবার ভাবছি আরেকটু বাড়াবো।’
‘অসুস্থ প্রতিযোগিতা করে কেউ যদি মনে করেন এমপি হওয়ার পথ সুগম হবে, তাহলে বোকার স্বর্গে বাস করছেন। জরিপ রিপোর্ট আছে, আমলানামা, এসিআর আছে, ছয়মাস পরপর আপডেট হচ্ছে। সর্বশেষটাও যোগ হয়ে গেছে। এগুলো নিয়ে বিশেষজ্ঞ টিম যাচাই বাচাই করছে। আমাদের জনমতের ভিত্তিতেই মনোনয়ন দিতে হবে। যিনি বেশি গ্রহণযোগ্য তাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে।’
কাদের বলেন, ‘চা দোকান বসে গ্রুপ মিটিং করে দলের একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে প্রচারণা করে। এটা হওয়ার কথা ছিলো বিরোধী পক্ষের বিরুদ্ধে। এর চেয়ে আত্মঘাতী প্রচারণার চেয়ে কিছু হতে পারে না। এ আত্মঘাতী প্রবণতা বন্ধ করতেই হবে।’
‘কারো কোনও অভিযোগ থাকলে সরাসরি লিখিত আকারে কেন্দ্রীয় অফিসে অভিযোগ দেবেন। এটা দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা সমাধান করবেন। আমার সঙ্গে আলোচনা করবেন, যদি আলোচনা যথেষ্ঠ না হয়, তাহলে দলের সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত দেবো। কিন্তু বিচ্ছিন্নভাবে যারা সিদ্ধান্ত নেবে তাদের বিরুদ্ধে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবো।
এসময় অন্যদের মধ্যে রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়রুজ্জামান লিটন, আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আব্দুস সবুর, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, এসএম কামাল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
