আপডেট : ৩ অক্টোবর, ২০২৫ ২৩:৫০
বাস্তব জীবনে ঘটে যাওয়া হাজারো ঘটনার একটি ঘটনা
হাসান মোহাম্মদ নাসের রিকাবদার
জনাব হায়দার আলী (কাল্পনিক নাম) কোন একটি ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইমের (উত্তর) বিভাগের একটি টিমের মাধ্যমে আমার অফিসে আসেন। আমি তার চোখমুখে আতঙ্কের ছাপ দেখতে পাই। কালবিলম্ব না করে তার সাথে একান্তে কথা বলি।
আলাপকালে তিনি জানান জেরিন (কাল্পনিক নাম) নামের একটি মেয়ের সাথে তার ফেইসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরিচয়ের অল্প কয়েকদিনের মধ্যে মেয়েটি তার সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলে। একদিন মেয়েটি জনাব হায়দার আলীকে কফির নিমন্ত্রণ জানায়। জনাব হায়দার আলী তার অফিস শেষে রাত অনুমান ৮.৩০ ঘটিকার দিকে জেরিনের সাথে দেখা করেন। তখন জেরিন জনাব হায়দার আলীকে জানায় তার বাসায় কেউ নেই হায়দার আলী চাইলে জেরিনের বাসায় গিয়ে তার নিজ হাতে বানানো কফি খেতে পারে।
জনাব হায়দার আলী জেরিনের প্রস্তাবে সাড়া দেন। জেরিন হায়দার আলীকে তার বাসায় নিয়ে যায়। বাসায় ঢোকার কিছুক্ষনের মধ্যে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন যুবক জেরিনের বাসায় প্রবেশ করে এবং জনাব হায়দার আলীকে মারধর শুরু করে। এক পর্যায় জনাব হায়দার আলী বুঝতে পারেন জেরিন ও অজ্ঞাতনামা যুবকরা একই চক্রের লোক। তিনি হানি ট্র্যাপের শিকার হয়েছেন।
তারা হয়দার আলীর নিকটে থাকা তার মোবাইল ফোন, ওয়ালেট সহ সকল কিছু ছিনিয়ে নেয়। এরপর হায়দার আলীকে কৌশলে বিপদে ফেলবে এই ভয় দেখিয়ে তার ওয়ালেটে থাকা বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম কার্ডের পাসওয়ার্ড ও বিকাশ, রকেট, নগদের পাসওয়ার্ড জেনে নেয়।
তাদের মধ্য থেকে দুই জন ব্যক্তি দ্রুত এটিএম বুথে গিয়ে জনাব হায়দার আলীর বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা সকল টাকা তুলে নেয়। বিকাশ, রকেট ও নগদ অ্যাকাউন্টে থাকা তাদের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে নেয়।
ঘটনার একপর্যায় তারা পরবর্তীতে ব্ল্যাকমেইল করার জন্য জনাব হায়দার আলী ও জেরিনকে বিবস্ত্র করে ভিডিওচিত্র ও স্থিরচিত্র ধারণ করে এবং জনাব হায়দার আলী আইনের আশ্রয় গ্রহণকরলে উক্ত ভিডিওচিত্র ও স্থিরচিত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে জনাব হায়দার আলীর মানসম্মান ক্ষুন্ন করার হুমকি প্রদান করে।
ঘটনাটি শুনে আমি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করি। ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের একটি চৌকস টিমকে উক্ত ঘটনার রসহ্য উদঘাটনের জন্য নিয়োজিত করি। ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের একটি চৌকস টিম তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অপরাধীদের অবস্থান নিশ্চিত করে রাজধানী ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে জেরিনসহ সকল অপরাধীদের গ্রেফতার করে।
ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ দিন-রাত পরিশ্রম করে নিরবে এমন হাজারো নাগরিককে সেবা প্রদান করে আসছে। বিভিন্নভাবে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে হেনস্থার শিকার হতে যাওয়া অনেক ভদ্রলোক ও ভদ্রমহিলাগণ এই সাইবার ডিভিশনের মাধ্যমে রক্ষা পাচ্ছেন। সোশ্যাল মিডিয়া, ক্রিপ্টোকারেন্সি, মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস সহ দেশমাতৃকার যেকোন প্রয়োজনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এই ডিভিশন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
লেখকঃ উপ-পুলিশ কমিশনার, ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ, ডিএমপি-ঢাকা।
